সময় হয়ে গিয়েছে ‘কাবুলিওয়ালা’র নতুন সংস্করণ লেখার!
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে দিল্লির মাটিতে পা রেখে রবীন্দ্রনাথকে এ ভাবেই স্মরণ করলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। আজ হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে আফগানিস্তানের নয়া প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘‘নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনেক ধন্যবাদ। তাঁর লেখা ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পটি আমাদের যে ব্র্যান্ড দিয়েছে, তা লক্ষ কোটি বিজ্ঞাপনও দিতে পারত না।’’ পাশাপাশি ঘানির বক্তব্য, কাবুলিওয়ালার নতুন সংস্করণ কিন্তু লেখার সময় হয়ে গিয়েছে। যেখানে আজকের আফগানিস্তানের কথা থাকবে।
কী থাকবে সেই নতুন সংস্করণে? আজ মোদী এবং ঘানির বৈঠকে তার একটি রূপরেখা তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে। দু’জনেই আলাদা করে তাঁদের বক্তৃতায় সন্ত্রাসের বিরোধিতা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভূকৌশলগত রাজনীতির দিক থেকে ঘানি যে ভারত সফরে এলেন, এই বিষয়টাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় আসেন ঘানি। তার পর প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে তিনি যখন পাকিস্তানকে যখন বেছে নিয়েছিলেন, তখন সাউথ ব্লকের ভুরু কুঁচকে গিয়েছিল। সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তার পর চিন সফরে যান ঘানি। সতর্ক নয়াদিল্লি তখন থেকেই সমান্তরাল দৌত্য শুরু করে আফগান নেতৃত্বের সঙ্গে। নিরাপত্তার কারণে কাবুল ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সে দেশের নতুন জমানার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে উৎসাহী ছিলেন মোদী।
এত দিনে সেই সুফল পাওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। আজ ভারতের অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ঘানি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের কোনও ভাল বা মন্দ হয় না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আমেরিকা এবং পাকিস্তান বরাবরই ‘গুড অ্যান্ড ব্যাড তালিবানে’র যে তত্ত্ব সামনে আনতে চেয়েছে, তাকে এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ত্রাসের কোনও ভাল বা মন্দ হয় না। আমাদের একবগ্গা হয়ে সব রকম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’’ ঘানির পাশে দাঁড়িয়ে নাম না-করে পাকিস্তানকে এক হাত নিয়েছেন মোদীও। তাঁর কথায়, ‘‘আফগান নেতৃত্বে শান্তি প্রক্রিয়া সফল করার জন্য প্রতিবেশীদের পক্ষ থেকে গঠনমূলক মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন। হিংসায় মদত দেওয়া বন্ধ করাটা তার মধ্যে পড়ে।’’
সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্যও সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে আজ। ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তান-ভারত নতুন বাণিজ্য পথ খোলা এবং দ্বিপাক্ষিক মোটর ভেহিকল চুক্তি দ্রুত সারার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মোদী।