সাইবার যুদ্ধে টক্কর দিতে তৈরি কংগ্রেসও

সভা-সমিতি-মঞ্চের বাইরেও যে একটি সমান্তরাল যুদ্ধক্ষেত্র আছে, ২০১৪ সালে তা দেশকে দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। যার নাম ‘সাইবার যুদ্ধ’।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১০
Share:

সাইবার দুনিয়ায় মোদীর দলকে টক্কর দিতে প্রস্তুত রাহুল গাঁধীও। 

মল্লযুদ্ধের আখড়া এটাও। তবে পথ-মাঠের ধুলো মেখে নয়, এখানে খেলা হয় ঠান্ডা ঘরে বসে। এই খেলার মাঠে আঙুলের খেলায় যুদ্ধ বাধানো যায় নিমেষে।

Advertisement

সভা-সমিতি-মঞ্চের বাইরেও যে একটি সমান্তরাল যুদ্ধক্ষেত্র আছে, ২০১৪ সালে তা দেশকে দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। যার নাম ‘সাইবার যুদ্ধ’। সেই লড়াইয়ের ময়দানে কংগ্রেস তখন একেবারেই আনকোরা। কিন্তু পাঁচ বছরে ছবিটার অনেকটাই বদল হয়েছে। লোকসভা ভোটের আর যখন প্রায় একশো দিন বাকি, সাইবার দুনিয়ায় মোদীর দলকে টক্কর দিতে প্রস্তুত রাহুল গাঁধীও।

গত রবিবারই দিল্লিতে দলের কর্মীদের সভায় বিজেপি ঘোষণা করেছে, একেবারে বুথ স্তর থেকে কর্মীদের সঙ্গে দলের নেতাদের হোয়াটসঅ্যাপে যোগ করা হবে। ঘোষণাটি নতুন নয়। এর আগেও বিজেপি জানিয়েছিল, শুধু দিল্লিতেই ১৮০০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে থাকবেন খোদ অমিত শাহ। কিন্তু তাতে কী! বিজেপিরই সূত্র বলছে, কর্মীদের চাঙ্গা করতে ঘোষণা যা-ই হোক, অমিত শাহ নিজে থাকুন বা না থাকুন, এ বারে লড়াইটা ভিন্ন। আর সাইবার দুনিয়ায় লড়াইটা ভোটের অঙ্ক ঘুরিয়েও দিতে পারে।

Advertisement

কী ভাবে? রাজনৈতিক দলগুলির মোটের উপর হিসেব হল, দেশের প্রায় ৯০ কোটি ভোটারের মধ্যে ৫০ কোটির কাছে আছে ইন্টারনেটের সুবিধা। ৩০ কোটির কাছে ফেসবুক, ২০ কোটির কাছে হোয়াটসঅ্যাপ আছে। গত লোকসভা নির্বাচনে স্মার্টফোন ছিল মাত্র ১৫ কোটি দেশবাসীর কাছে। সেটি এখন বেড়েছে তিনগুণ। ফলে মাঠের লড়াই যা-ই থাকুক, জনমত প্রভাবিত করতে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের বড় ভূমিকা আছে।

কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা এক নেতার মতে, ‘‘মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে ৩৫ শতাংশ ভোটারকে নিশানা করেছিলাম আমরা। তার মধ্যে যাতে দশ শতাংশ ভোটও আমাদের পক্ষে পড়ে, তার চেষ্টা করা হয়েছে। বিজেপির শক্তি বেশি বলে তারা পৌঁছনোর চেষ্টা করেছে ৪৫ শতাংশ ভোটারের কাছে। তবু বাজি মারতে পারেনি।’’

ভোটের আগে ডিজিটাল দুনিয়ার মাধ্যমে প্রভাব খাটাতে বিজেপির মতো এখন কংগ্রেসও যুবদের নিযুক্ত করছে। বিজেপি যেমন তাদের ফৌজের নাম দিয়েছে ‘সাইবার যোদ্ধা’, কংগ্রেসের নাম ছিল ‘রাজীব কে সিপাহি’। দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন আবার ‘ডিজিটাল সাথী’ নামে একটি অ্যাপও চালু করেছেন। লক্ষ্য একটাই, বুথ বুথে কর্মীদের পাশাপাশি ভোটারের কাছেও নিমেষে পৌঁছে যাওয়া। বিজেপির ‘অপপ্রচার’, ‘ফেক-নিউজ’-এর মোকাবিলা করা।

কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা দিব্যা স্পন্দনা স্বীকার করছেন, তাঁরা বিজেপির অনেক পরে এই জগতে পা রেখেছেন। খোদ রাহুল গাঁধীও টুইটারে এসেছেন ২০১৫ সালে। কিন্তু এখন মোদীর থেকে রাহুলের টুইটের প্রভাব অনেক বেশি। দিল্লির বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল অবশ্য মনে করেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার দাপট থাকলেও ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে মেশার কোনও বিকল্প নেই। একটি আর একটির পরিপূরক। সে কারণে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে এমন দশ ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের, যাঁরা বিজেপিকে ভোট দেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন