জ্যাকেটের বাঁ দিকের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলেন রাহুল গাঁধী। স্পিকারকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘ম্যাডাম আমি একটা টেপ চালাতে পারি?’’
রে-রে করে উঠলেন অরুণ জেটলি, নির্মলা সীতারামনরা। জেটলি বললেন, ‘‘ম্যাডাম, এই টেপ ভুয়ো। উনি আগেও মিথ্যে বলেছেন। এ বারেও বলছেন।’’ এক গাল হেসে রাহুল জবাব দিলেন, ‘‘জানি আপনারা ভয় পাচ্ছেন।’’
কী সেই টেপ? আজ সকালেই একটি অ়ডিয়ো টেপ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, এটি গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানে এবং এক জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির টেলিফোন কথোপকথন। যাতে বিশ্বজিৎ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, তাঁর বেডরুমে রাফালের নথি রাখা আছে। এমন কথোপকথনের কথা অস্বীকার করেছেন পর্রীকর, রানে দু’জনেই। কিন্তু তাতে রাফাল-বিতর্কে লোকসভা তপ্ত হওয়া আটকায়নি।
আরও পড়ুন: তর্কে গিয়ে রাফালের দাম বললেন জেটলি!
স্পিকারের আপত্তিতে লোকসভায় অডিয়ো টেপ শোনাতে পারেননি রাহুল। তবে তীব্র আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। গত কাল সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাঁধী পরিবারকে যে আক্রমণ করেছিলেন মোদী, রাহুল এ দিন চেষ্টা করেছেন তা ফিরিয়ে দেওয়ার। গত কাল মোদী দাবি করেছিলেন রাফাল নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। যা অভিযোগ, সবই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। রাহুলের দাবি, ‘‘রাফাল-দুর্নীতি নিয়ে গোটা দেশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছে।’’ পরে সন্ধ্যায় দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে মোদীর দিকে আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। বলেছেন, ‘‘কুড়ি মিনিট একা নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি হতে চাই। জিজ্ঞাসা করতে চাই, সেনা নতুন চুক্তির বিরোধ করেছিল কি না? প্রধানমন্ত্রীকে নাক না-গলানোর কথা বলেছিল কি না? বিমান-পিছু ৫৬০ কোটির বদলে ১৬০০ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার? ১২৬টির বদলে ৩৬টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত কে নিল? যে অনিল অম্বানী একটিও বিমান বানাননি, হ্যালের বদলে তাঁকে বরাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার?’’
লোকসভায় অরুণ জেটলি। সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গাঁধী (ডানদিকে)। ছবি: পিটিআই।
রাহুলের মোকাবিলায় সরকার পক্ষের হয়ে এ দিন আসরে নেমেছিলেন জেটলি। রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি তৈরির দাবি খারিজ করে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, অতীতে যাঁরা একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে কেলেঙ্কারি করেছেন, তাঁরাই আজ আঙুল তুলছেন নরেন্দ্র মোদীর দিকে। এর পরেই বফর্স প্রসঙ্গ টেনে আনেন জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘আপনি ছোটবেলায় ‘কিউ’-এর (কুত্রোচ্চি) কোলে খেলতেন। ডায়েরিতে লেখা ছিল, তাঁকে যে কোনও মূল্যে বাঁচাতে হবে। হেরাল্ড মামলায় এখন আপনার পরিবার জামিনে রয়েছে। এখন যিনি জেলে (ক্রিশ্চিয়ান মিশেল), তিনি বলছেন ‘মিসেস গাঁধী’, ‘বিগ নেম আর’, ‘ইটালীয়র পুত্র’-র কথা।’’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী তথ্যের ভিত্তিতেই কথা বলেছেন, মন্তব্য কেশরীর, তীব্র কটাক্ষ পার্থর
জেটলির আরও কটাক্ষ, ‘‘এক জন শিশুও জানে যুদ্ধবিমান কাকে বলে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, এত পুরনো দলের নেতৃত্ব যাঁর হাতে, তিনি যুদ্ধবিমান কী তা-ই জানেন না। কিছু লোক ও তাঁদের পরিবার শুধু অর্থ চেনে, জাতীয় নিরাপত্তার কিছু বোঝে না।’’
রাহুল এর উত্তর অবশ্য সন্ধ্যেয় দিয়ে বলেন, ‘‘আমি পাইলট। এখন লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি। কিন্তু বিমান কী আমি জানি।’’
লোকসভায় জেটলি যখন আক্রমণ শানাচ্ছেন গাঁধী পরিবারের দিকে, তখন ওয়েলে নেমে আসেন কংগ্রেস সাংসদেরা। সনিয়া গাঁধী, রাহুল অবশ্য নিজেদের আসনেই ছিলেন। কিন্তু সুস্মিতা দেব, রাজীব সতাভের মতো কংগ্রেস সাংসদরা যখন কাগজের বিমান বানিয়ে জেটলির দিকে ছুড়ছেন, তখন তাঁদের দিকে কাগজ এগিয়ে দেন খোদ সনিয়া। বিরক্ত স্পিকার বলেন, ‘‘এ সব কী হচ্ছে!’’ জেটলির কটাক্ষ, ‘‘ওঁদের ইউরো ফাইটার প্লেনের কথা মনে পড়ছে।’’