কামরূপের আদালতে রাহুল, তোপ সঙ্ঘকে

বরপেটা সত্রে প্রবেশ সংক্রান্ত বিতর্কে মামলা রুজু হয়েছিল এআইসিসি সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে। সেই মামলার শুনানিতে আজ সশরীরে কামরূপ সিজেএম আদালতে হাজির হলেন রাহুল।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

কামরূপে রাহুল। ছবি: পিটিআই।

বরপেটা সত্রে প্রবেশ সংক্রান্ত বিতর্কে মামলা রুজু হয়েছিল এআইসিসি সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে। সেই মামলার শুনানিতে আজ সশরীরে কামরূপ সিজেএম আদালতে হাজির হলেন রাহুল। আদালত তাঁকে ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দিয়েছে। পরবর্তী শুনানি ৫ নভেম্বর। রাহুল জানান, ওই দিনও তিনি আসবেন। যে মামলায় নিজে না থাকলেও কাজ চলে, সেখানে বারবার অসমের আদালতে আসার সিদ্ধান্তে খানিকটা চাপেই পড়েছে ক্ষমতাসীন বিজেরি। এখন তাঁরাই বলছেন, এই হাজিরার পিছনে রাহুলের রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে।

Advertisement

আজ সকালে রাহুল গুয়াহাটি পৌঁছন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অসমের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী। তরুণ গগৈ, গৌরব গগৈ, প্রদ্যোৎ বরদলৈ, রেকিবুদ্দিন আহমেদ, রানি নরহ, ভূপেন বরা-সহ তাবড় নেতারা সকাল থেকেই হাজির ছিলেন বিমানবন্দরে। হাজির ছিলেন সহস্রাধিক কংগ্রেস সমর্থক। তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে একই গাড়িতে ওঠেন রাহুল। বুলেট প্রুফ গাড়ি নয়, টুরিস্ট পারমিট থাকা ভাড়ার গাড়িতে চড়েই গগৈ, জোশী ও রাহুল সিজেএম আদালতের দিকে রওনা হন। রাহুলের সঙ্গে একই গাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়ির মাঝের আসনে চার জন উঠে পড়েন। এমনকী গগৈয়ের কোলেও বসে পড়েন একজন।

বিমানবন্দরে ফের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানান, রাহুলের দাবিই ঠিক। আরএসএস-ই তাঁকে সত্রে ঢুকতে দেয়নি। কংগ্রেস নেতারা বিমানবন্দরে বলেন, “রাহুলজীর সঙ্গে আছি আমরা। তাঁকে দেখিয়ে দিলাম, ক্ষমতা গেলেও রাজ্যে আমরা শক্তিহীন হয়ে যাইনি। এখনও দলের জনসমর্থন অটুট। রাহুল আসায় কর্মীদের মনোবল বাড়ল।”

Advertisement

এ দিকে, আজ রাহুল গাঁধীকে সমর্থন জানাতে সিজেএম আদালতের সামনে কংগ্রেস সমর্থকদের জমায়েতের কথা ছিল। ঠিক ছিল, রাহুল সেখানে ভাষণও দেবেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, আদালত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সেখানে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। করা যাবে না জমায়েতও। আদালত চত্বরের আশপাশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কংগ্রেস, যুব কংগ্রেসের উদ্যোগে হাজার হাজার দলীয় সমর্থক, যুব কংগ্রেস সদস্য, ছাত্রছাত্রী আদালতের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়। পুলিশ ব্যারিকেড করে দেয়। তার ওপাশ থেকেই ঘন ঘন জয়ধ্বনি ওঠে রাহুলের নামে। দীর্ঘদিন পরে তেরঙা পতাকায় ঢাকে এম জি রোড। রাহুলের আইনজীবী জানান, ‘‘রাহুলের বিরুদ্ধে থাকা মামলায় কোনও দল বা সংগঠনের নাম নেই। রাহুল নিজে না এলেও পারতেন। কিন্তু আদালতের সমনে সম্মান জানাতেই এসেছেন রাহুল।

১০টা ৫ মিনিটে রাহুল আদালতে আসেন। আদালতে রাহুল এ দিন কিছু বলেননি। তবে তাঁর আইনজীবী ব্যক্তিগত বন্ডে জামিনের আবেদন জানান। বিপক্ষের আইনজীবীও আপত্তি জানাননি। ৫০ হাজার টাকার বন্ডে তিনি জামিন পান। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত রাহুল। কিন্তু পরের শুনানিতেও তিনি হাজির থাকতে চান। তাই আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হয় ৫ নভেম্বর পরের শুনানি হবে। ওই দিনই রাহুলের বক্তব্য শোনা হবে। আধ ঘণ্টা পরে আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি পার্শ্ববর্তী নেহরু উদ্যানে গিয়ে কুশল কোঁয়রের মূর্তিতে মালা দেন। সেখানেই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি গরীবদের জন্য, কৃষক ও বেকারদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়ছি। সেই লড়াই দমিয়ে দিতেই আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। আরএসএস ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করতে চাইছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার লড়াই আরএসএসের বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে। সে লড়াই চলবে।’’

বাদি অঞ্জন বরার আইনজীবী তথা বিজেপি মুখপাত্র বিজন মহাজন বলেন, “এ নিতান্তই আইনি লড়াই। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। অপরাধ প্রমাণিত হলে জরিমানা ও দু’বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। সাধারণত এই ধরণের মামলায় অভিযুক্তকে আইনজীবীর মাধ্যমেই বক্তব্য জানানোর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যেও রাহুল নিজে বারবার সশরীরে আদালতে হাজির থাকতে চাইছেন। এর পিছনে রাজনৈতিক মাইলেজ নেওয়ার অঙ্ক আছে বলে অনেকেরই মনে হচ্ছে।”

আদালত থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর ‘রাজীব ভবনে’ যান রাহুল। সেখানে তরুণ গগৈ, প্রদেশ সভাপতি রিপুন বরা, কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনে হারের পরে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস নিয়েই মূলত বৈঠকে আলোচনা হয়। আলোচনা হয় আগামী কয়েকটি উপনির্বাচনের প্রার্থীপদ ও কৌশল নিয়েও। লখিমপুর লোকসভা উপনির্বাচনে গগৈকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হলেও তিনি জানিয়ে দেন, আর নির্বাচনে নয়। এ দিন বরাকের কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় রাজীব ভবনে বসার জায়গা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বেরিয়ে যান। যাওয়ার আগে বলেন, “এখানে কোনও শৃঙ্খলা নেই। প্রবীণ নেতাদের সম্মান জানাতে পারে না এরা। আমাদের বসারই জায়গা নেই। অতএব টা-টা।” তিনি এ দিনের মতো টা-টা করলেন, নাকি কংগ্রেসকেই টা-টা করে গেলেন তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন