হনুমানগড়ি মন্দিরে মহন্ত জ্ঞানদাসের সঙ্গে রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
অযোধ্যায় গিয়ে রাম নয়, রামভক্ত হনুমানের আশীর্বাদ নিলেন রাহুল গাঁধী।
প্রায় আড়াই দশক আগে, ১৯৯০ সালে ‘সদ্ভাবনা যাত্রা’র সময় অযোধ্যায় গিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে সেখানকার হনুমানগড়ী মন্দিরে যেতে পারেননি। তখন রাহুলের বয়স ছিল ২০। আজ সেই রাহুল উত্তরপ্রদেশে তাঁর ‘কৃষক যাত্রা’র সময় অযোধ্যায় হনুমানগড়ীর দর্শন করলেন। দেখা করলেন এই মন্দিরে মহন্ত জ্ঞান দাসের সঙ্গেও। একান্তে দশ মিনিট বৈঠকও হল উভয়ের। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এই প্রথম অযোধ্যায় পা পড়ল গাঁধী পরিবারের কারওর। কিন্তু হনুমানগড়ী থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরেই বিতর্কিত রামমন্দির এড়িয়ে গেলেন সুকৌশলে।
কেন রাহুলের এই অযোধ্যা সফর?
কংগ্রেসের নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের তৈরি চিত্রনাট্যেই এখন চলছেন রাহুল। ব্রাহ্মণ ভোটের পাশাপাশি সংখ্যালঘু ও দলিত ছাড়া পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কংগ্রেসের পুরনো ভোটব্যাঙ্ককে ফের ঝুলিতে পুরতেই এই মহাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। যে কারণে ব্রাহ্মণ মুখ হিসেবে শীলা দীক্ষিতকে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থীও করা হয়েছে। সে দিক থেকে হিন্দু ভোটকে কাছে টানার লক্ষ্যে নরম-হিন্দুত্বের কৌশল নিয়েই আজ তাঁর অযোধ্যা সফর। বিজেপি-আরএসএস এখন হিন্দু ভোটকে একজোট করে উচ্চবর্ণ থেকে দলিত, সকলকেই এক ছাতার তলায় আনতে চাইছে। এই হিন্দু ভোট বিভাজনের জন্যই রাহুল এখন আরএসএসের সঙ্গে সম্মুখ সমরে নেমেছেন। মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকারী আরএসএসের লোক বলে আদালতে লড়াই করছেন সঙ্ঘের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: ২৬ বছর পর অযোধ্যায় গাঁধী পরিবারের প্রতিনিধি, রাহুল গাঁধী পুজোও দিলেন
তবে পাছে তাঁর আজকের অযোধ্যা সফর নিয়ে হিন্দুত্বের বার্তা যায়, সে জন্য ভারসাম্য বজায় রাখতে সন্ধ্যায় অম্বেডকর নগরের কাছে একটি দরগায় চাদর চড়ানোর পরিকল্পনাও রাখা হয়েছিল। অযোধ্যায় হনুমানগড়ীর মহন্ত জ্ঞান দাসের সঙ্গে দেখা করার পিছনেও ছিল সুচিন্তিত কৌশল। এই মহন্ত জ্ঞান দাস গোড়া থেকেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কট্টর সমালোচক। অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদের সদস্যও তিনি। দশ মিনিট বন্ধ ঘরে তাঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা অবশ্য কেউই খোলসা করেননি। মহন্ত জ্ঞান দাস পরে বলেন, ‘‘রাহুল আশীর্বাদ নিতে এসেছিলেন। কী মনোকামনা নিয়ে এসেছিলেন, সেটি কখনও প্রকাশ্যে বলা যায় না। আমরা তাঁকে আশীর্বাদ করেছি। তাঁর মঙ্গল কামনা করি।’’
তবে কংগ্রেস সূত্রের দাবি, বিতর্কিত রামজন্মভূমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেওয়ার পক্ষেই কথা বলেছেন রাহুল। মহন্তের সঙ্গে আলোচনায় উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন নিয়েও তাঁর কোনও কথা হয়নি। তবে হনুমানগড়ী মন্দিরে রাহুলের পারিষদেরা পুরোহিতদের বলেন, রাহুল যাতে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন, সে জন্য তাঁকে আশীর্বাদ করুন। পুরোহিতরাও রাহুলকে বলেন, ‘বিজয়ী ভব’।