মোদীকে নিশানায় রেখে মোদীর ধাঁচেই এ বারে বুথে বুথে সংগঠন গুছনোর কাজে নামলেন রাহুল গাঁধী। আর এই কাজ নজরদারির দায়িত্ব তিনি দিলেন সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে।
গত কালই দিল্লিতে একটি বড় সভা করে কংগ্রেস নেতাদের হাতে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের আগামী এক মাসের কর্মসূচি তুলে দিয়েছেন রাহুল। কিন্তু রাহুল দলের নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু মাত্র আন্দোলনের জন্য আন্দোলন নয়। মোদী-বিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে দলের বুথ স্তর পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। একমাত্র তবেই মোদীর দলের সঙ্গে সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর দেওয়া যাবে।
কিছু দিন আগেই দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের নেতাদের বলেছিলেন, ‘‘বুথ জয় করলেই ভোট জয় হবে।’’ মোদীর সেনাপতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের এ যাবত সাফল্যের অন্যতম কৌশলও এ’টি। ঠিক একই ভাবে মোদী-বিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখেই এ বারে বিজেপির ধাঁচে বুথকে আরও পোক্ত করার কাজে হাত দিলেন রাহুল। কালকের ‘জনবেদনা সম্মেলনে’র পর আজ রাহুল গাঁধী গোটা দেশ থেকে আসা নেতাদের সঙ্গে ফের দেখা করেন, হাত মেলান, ছবি তোলেন, তাঁদের সমস্যা শোনেন। পরে তাঁর দেওয়া নতুন কর্মসূচি রূপায়ণ করার জন্য বিভিন্ন রাজ্যের পর্যবেক্ষকরাও বৈঠকে বসেন।
এই বৈঠকে বলা হয়— শুধুমাত্র কয়েকটি শহর বা জেলা সদরে টেলিভিশন ক্যামেরা ডেকে আন্দোলন নয়। একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত কমিটি গঠন করে কী ভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় রাহুল গাঁধীর আওয়াজ পৌঁছে দেওয়া যায়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘নোট-বাতিল নিয়ে তো আজ অনেক দলের নেতারাই সরব হচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হোক বা অরবিন্দ কেজরীবাল। কিন্তু কংগ্রেসের মতো দেশজুড়ে সংগঠন কারও নেই। একমাত্র কংগ্রেসই পারে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত রাহুলের স্বরটি পৌঁছে দিতে।’’ এর জন্য আহমেদ পটেল আজ রাজ্যে-রাজ্যে বুথ স্তর পর্যন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
কিন্তু কংগ্রেসে আবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বের কোঁদলও কম নেই। রাহুলের ঘোষিত কর্মসূচি রূপায়ণে কোন রাজ্যে কোন কোন নেতা বাদ সাধছেন, কারা কারা সহযোগিতা করছেন না, তাঁদের তালিকাও নেওয়া হয়। ঠিক হয়েছে, আহমেদ পটেল, অস্কার ফার্নান্ডেজের মতো নেতারা এর পর তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই তালিকায় বেশ কিছু বড় মাপের নেতাও রয়েছেন, যাঁরা অতীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন রাহুল। দলের মতে, লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর নোট-বাতিলের ঘটনা কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। একই অস্ত্রে যেমন মোদীও ঘায়েল হতে পারেন, তেমনই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আম-জনতার পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের পুরনো ভোটব্যাঙ্ক ফিরে পেতে পারে কংগ্রেস। আর সে জন্য গত কালই কাউকে ভয় না-পাওয়ার মন্ত্রটি কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের কানে পুরে দিয়েছেন রাহুল।
আজ রাহুল যখন গোটা দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন, সেই সময় কেউ কেউ তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি থাকতে আমাদের ভয় কী?’’
হাসিমুখে রাহুল তাঁদের বলেন, ‘‘ম্যায় হুঁ না!’’