বিকল বিমান, হুহু করে নেমে এল কয়েকশো ফুট, জোর বাঁচলেন রাহুল

শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই দিল্লি থেকে কর্নাটকে পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতির উড়ন্ত বিমানে এমন গুরুতর যান্ত্রিক বিভ্রাটের খবর সামনে আসার পরেই শোরগোল পড়েছে দেশ জুড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪২
Share:

প্রচার: বিধানসভা ভোটের আগে কর্নাটকের হোন্নাভরে রাহুল গাঁধী। দিল্লি থেকে হুবলি যাওয়ার পথেই বিভ্রাটে পড়ে তাঁর বিমান। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

বাঁ দিকে ঝুঁকে গিয়েছে বিমান। হুহু করে নেমে এসেছে প্রায় চার-পাঁচশো ফুট। কাজ করছে না অটো-পাইলট। চেষ্টা করেও নামা যাচ্ছে না কর্নাটকের হুবলি বিমানবন্দরে।

Advertisement

আজ সকালে এই ছোট ফ্যালকন জেট বিমানটির অন্যতম যাত্রী ছিলেন রাহুল গাঁধী। শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই দিল্লি থেকে কর্নাটকে পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতির উড়ন্ত বিমানে এমন গুরুতর যান্ত্রিক বিভ্রাটের খবর সামনে আসার পরেই শোরগোল পড়েছে দেশ জুড়ে। এই গোলযোগ ‘পরিকল্পিত’ কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছে কংগ্রেস। দলীয় সূত্রের দাবি, ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। রাহুলের সঙ্গে কথা বলেছেন খোদ নরেন্দ্র মোদী।

আজ তিন বারের চেষ্টায় হুবলিতে নামে বিমানটি। তাতে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি-সহ পাঁচ জন। ডিজিসিএ জানিয়েছে, ‘অটো-পাইলট’ ব্যবস্থায় সমস্যা হওয়ায় ‘ম্যানুয়াল’ মোডে নিরাপদ অবতরণ করেছেন পাইলট। এই ধরনের ঘটনা ‘অস্বাভাবিক নয়’। কিন্তু সন্তুষ্ট নয় কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘এসপিজি-র নিরাপত্তা পাওয়া কোনও ব্যক্তির উড়ানের আগে পাইলট এবং বিমান সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়া হয় ডিজিসিএ এবং এসপিজি-র কাছে। তারা ছাড়পত্র দিলেই উড়ান পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। আমাদের আশা, কর্নাটক পুলিশ এবং ডিজিসিএ-র ডিজিরা তদন্ত করে জানাবেন, এই ঘটনায় কোনও ব্যক্তির হাত ছিল কি না।’’

Advertisement

বিধানসভা ভোটের প্রচারে আজ সকাল ৯টা ২০ নাগাদ হুবলি রওনা হন রাহুল। আবহাওয়া ভালই ছিল। পৌনে ১১টা নাগাদ দেখা দেয় গন্ডগোল। সুরজেওয়ালা জানিয়েছেন, জোরালো একটা শব্দের পরে অটো পাইলট বিকল হয়ে গোঁত্তা খেয়ে নীচে পড়তে থাকে রাহুলের বিমান। ২-৩ মিনিটের জন্য রেডার থেকেও মুছে গিয়েছিল সেটি।

তবে এই বিভ্রাট নেহাত যান্ত্রিক গোলযোগ বলে মানছে না কংগ্রেস। কর্নাটকের ডিজি ও আইজির কাছে লিখিত অভিযোগে রাহুলের সহযোগী কৌশল বিদ্যার্থী বলেছেন, এমন কোনও প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে, যার ব্যাখ্যা মেলেনি। কৌশলের কথায়, ‘‘সকলের প্রাণ যেতে বসেছিল। কিন্তু রাহুল আগাগোড়া ধৈর্য রেখে পাইলটের পাশে ছিলেন, যাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।’’

গোলযোগ ‘পরিকল্পিত’ কি না, তা খতিয়ে দেখতে কর্নাটক পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করেছে কংগ্রেস। তাতে নাম রয়েছে ওই বিমানের চালকদেরও। ডিজিসিএ জানিয়েছে, বিমানের অটো পাইলট বিকলের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হচ্ছে। চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবেন তাঁরা। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘এর আগে গাঁধী পরিবারে এ ভাবে প্রাণ গিয়েছে। রাহুলের প্রাণনাশের কোনও চেষ্টা হয়েছিল কি না, তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত।’’ বিষয়টি রীতিমতো স্পর্শকাতর বলে কোনও মন্তব্য করেনি বিজেপি। কিন্তু ঘরোয়া মহলে বিজেপির কয়েক জনের বক্তব্য, বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া হচ্ছে কি না, তা-ও ভাবা দরকার। ডিজিসিএ জানিয়েছে, যে কোনও ভিআইপি বিমান তারা পরীক্ষা করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও করবে। রাহুল আগামিকাল কর্নাটকেই থাকবেন দলের ইস্তাহার প্রকাশের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন