রাহুলের ফোঁসে উল্টো সুর উদ্ধবের

এত বছর ধরে হিন্দুত্বের রাজনীতি করে এসেছে শিবসেনা। নাগরিকত্ব বিলে বিজেপি যেখানে আপাদমস্তক হিন্দুত্বের তাস খেলছে, তখন তারা এর বিরুদ্ধে ভোট দেয় কী করে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫২
Share:

রাহুল গাঁধী ও উদ্ধব ঠাকরে।

শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে আপত্তি ছিল রাহুল গাঁধীর। তবু ‘বাস্তব পরিস্থিতি’ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন সনিয়া গাঁধী। কিন্তু নাগরিকত্ব বিল নিয়ে গত কাল শিবসেনা যখন নরেন্দ্র মোদী সরকারের পক্ষেই ভোট দিল, ফোঁস করে উঠলেন রাহুল। টুইট করে প্রকাশ্যে ক্ষোভ তো দেখালেনই, তাঁর নির্দেশে দল উদ্ধব ঠাকরেকে বুঝিয়ে দিল, জোটধর্মের বিরুদ্ধে গেলে সমর্থন তুলে নিতেও পিছপা হবে না কংগ্রেস। চাপের মুখে তড়িঘড়ি সুর বদলাতে হল উদ্ধবকে। জানাতে হল, বিলটি নিয়ে দলে কিছু প্রশ্ন রয়েছে। তার উত্তর না-পেলে আগামিকাল রাজ্যসভায় ওই বিলকে সমর্থন করা হবে না।

Advertisement

এত বছর ধরে হিন্দুত্বের রাজনীতি করে এসেছে শিবসেনা। নাগরিকত্ব বিলে বিজেপি যেখানে আপাদমস্তক হিন্দুত্বের তাস খেলছে, তখন তারা এর বিরুদ্ধে ভোট দেয় কী করে? আবার নতুন সঙ্গী কংগ্রেস-এনসিপির মত একেবারে বিপরীত মেরুর। এই উভয়সঙ্কটে আদৌ ভোট দেওয়া হবে কি না তা ধন্দে পড়েছিল শিবসেনা। শেষ মুহূর্তে ধন্দ কাটিয়ে গত কাল বিলের পক্ষেই ভোট দেয় তারা। তা দেখে অমিত শাহ লোকসভায় রাহুল গাঁধীর সামনেই খোঁচা দেন, ‘‘কংগ্রেস এমন এক দল, যারা কেরলে মুসলিম লিগ আর মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়েছে।’’ আজ সকাল থেকে গোটা বিজেপি শিবির মহারাষ্ট্রে সেনা-কংগ্রেস-এনসিপির অভিন্ন কর্মসূচিকে নিশানা করে পাল্টা প্রচার শুরু করে। প্রশ্ন তোলে, কোথায় গেল এই জোটের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র যৌথ প্রতিশ্রুতি?

কংগ্রেসে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছিলই। দলের অবস্থান কী? কংগ্রেস ভোট দিচ্ছে বিলের বিপক্ষে, আর শরিক দিচ্ছে পক্ষে! রাহুল টুইট করলেন, ‘‘নাগরিকত্ব বিল ভারতের সংবিধানের উপরে আক্রমণ। এই বিলে যারাই সমর্থন করুক, সেটা দেশের ভিতকে নষ্ট করার চেষ্টা।’’ টুইটে শিবসেনাকে প্রকাশ্যে বিঁধেই ক্ষান্ত হলেন না রাহুল। দলের নেতাদের দিয়ে উদ্ধবকে বার্তা পাঠালেন, ‘‘জোটধর্মের বিরুদ্ধে যদি এ ভাবে কাজ করে শিবসেনা, তা হলে মহারাষ্ট্রের ৪-৫টি মন্ত্রকের কোনও গুরুত্বই নেই কংগ্রেসের কাছে।’’ অর্থাৎ, সমর্থন তুলে উদ্ধবের সরকার ফেলে দিতেও পিছপা হবে না কংগ্রেস।

Advertisement

গত কাল রাত পর্যন্ত শিবসেনার নেতারা বলছিলেন, ‘‘দেশের স্বার্থেই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছি। আর তিন দলের অভিন্ন কর্মসূচি মহারাষ্ট্রের জন্য।’’ আর আজ স্বয়ং উদ্ধব প্রকাশ্যে এসে এত দিনের হিন্দুত্বের অবস্থানে সুর নরম করলেন। বললেন, ‘‘গত কাল বিলের পক্ষে ভোট দেওয়া হয়েছিল অন্য দেশের নিপীড়িতদের কথা ভেবে। তা সত্ত্বেও অনেক প্রশ্ন ছিল দলের। সে সব প্রশ্নের উত্তর না পেলে রাজ্যসভায় বিল সমর্থন করা হবে না।’’ নিজের অসন্তোষ না-চেপে উদ্ধব এ-ও জানান, এমন একটি ধারণা তৈরি করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে ভোট দিলে দেশপ্রেমী, নয় তো দেশ-বিরোধী।

উদ্ধবের সুর বদলের পর বিরোধীরা ভাবছে, কাল রাজ্যসভায় বিপক্ষেই ভোট দেবে শিবসেনা। বড়জোর ভোটে অনুপস্থিত থাকতে পারে। কিন্তু এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করে আজ আসরে নেমে পড়েন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। আগামিকাল দেশের সর্বত্র ধর্না দিচ্ছে কংগ্রেস। প্রিয়ঙ্কা উত্তরপ্রদেশের কর্মীদের চিঠি লিখে বলেছেন, ‘‘এই বিল ভারতের সংবিধান সরিয়ে সঙ্ঘের বিধান আনার দিকে এগোচ্ছে। আরএসএসের শাখায় ও বইয়ে বিভাজন শেখানো হয়, সংবিধানে নয়। এই বিল পাশ হতে দিলে ভবিষ্যতে সঙ্ঘের বিধান না-মানলে সকলকে নিশানা করবে সরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন