বাংলাই পেয়েছে সব থেকে বেশি, হিসেব দিলেন বাবুল

সব খরচ-খরচা সামলে হাতে থাকছে টাকায় মাত্র ছ’পয়সা। টানাটানির সংসারে তা দিয়েই পরিকাঠামো উন্নয়ন বা নতুন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের কথা ভাবতে হচ্ছে রেলকে। ফলে এক রকম নিরুপায় হয়েই পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে বাধ্য হয়েছেন সদানন্দ গৌড়া। তবু তাঁর প্রথম রেল বাজেটে অর্থ বরাদ্দের নিরিখে অন্য সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করল পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০৪:২৩
Share:

সব খরচ-খরচা সামলে হাতে থাকছে টাকায় মাত্র ছ’পয়সা। টানাটানির সংসারে তা দিয়েই পরিকাঠামো উন্নয়ন বা নতুন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের কথা ভাবতে হচ্ছে রেলকে। ফলে এক রকম নিরুপায় হয়েই পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে বাধ্য হয়েছেন সদানন্দ গৌড়া। তবু তাঁর প্রথম রেল বাজেটে অর্থ বরাদ্দের নিরিখে অন্য সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করল পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

রেল বাজেটে বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে গত কাল থেকেই সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। “বাংলার মানুষ ভিক্ষে চায় না,” বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের অভিযোগের মোকাবিলায় আজ মুখ খোলেন বিজেপির আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। অর্থ বরােদ্দের হিসেব তুলে ধরে তাঁর দাবি, বাস্তবে এই রেল বাজেটে সব থেকে বেশি অর্থ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গই। আগের রেলমন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে সব প্রকল্প ঘোষণা করে গিয়েছেন, সেগুলি রূপায়ণে প্রায় ১,৪৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন গৌড়া। তাঁর নিজের রাজ্য কর্নাটকের জুটেছে ১,২৮৯ কোটি। দ্বিতীয় স্থানে বিহার।

যদিও তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বাবুলকে ‘ট্রেনি সাংসদ’ ও গৌড়াকে ‘ট্রেনি রেলমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়ে আজ বলেছেন, “যে প্রকল্পে কয়েকশো কোটি টাকা দরকার, সেখানে নামমাত্র বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। মানুষ বোকা নন। অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। এখন তা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।” বরাদ্দ নিয়ে তোপ দাগার পাশাপাশি ডেরেকের দাবি, এই রেল বাজেটে অনেক ক্ষেত্রে মমতার ‘ভিশন ২০২০’-র অনুকরণ করা হয়েছে।

Advertisement

নতুন প্রকল্পের ঘোষণা, নাকি ঘোষিত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করবেন এ নিয়ে দোটানায় পড়তে হয় সব রেলমন্ত্রীকেই। গৌড়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। গৌড়ার নিজের কথায় “নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করে হাততালি কুড়োনো না বাস্তব রাস্তায় হাঁটা, এই নিয়ে সংশয় ছিল।” বাবুল-সহ অন্য বিজেপি নেতাদের দাবি, শেষ পর্যন্ত বাস্তবমুখী পথেই হেঁটেছেন রেলমন্ত্রী। নতুন প্রকল্প ঘোষণার জনমোহিনী নীতি বর্জন করে পুরনো প্রকল্প শেষ করার উপরেই জোর দিয়েছেন। রেল মন্ত্রক বলছে, বরাদ্দের ৫৪% অর্থ পুরনো প্রকল্প রূপায়ণের কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আর সে কারণেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ, যমন নতুন লাইন, গেজ পরিবর্তন, ডাবলিং বা বিদ্যুদয়ন খাতে বরাদ্দ কমিয়েছেন রেলমন্ত্রী। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে কোচ ও ইঞ্জিন নির্মাণের। সাধারণত প্রতি বছর এই ক্ষেত্রগুলিতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে থাকে রেল মন্ত্রক। কিন্তু অর্থের অভাবে তাতেও কাটছাঁট করেছেন রেলমন্ত্রী। গৌড়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত রয়েছে তাঁর মন্ত্রকেই। এক পক্ষের যুক্তি, হাতে যখন অর্থ নেই, তখন আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখা উচিত নয়। বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অনেক সময়ই তা ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছে রেল।

বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, গত তিন বছরে মোটের উপর সব ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছোঁয়া গিয়েছে। তাই বিরোধী অংশের যুক্তি, রেলের বুনিয়াদি পরিকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল রেলমন্ত্রীর। নতুন লাইন পাতা, লাইন পাল্টানো, ডাবলিং বা নতুন কামরা বা ইঞ্জিন না বানালে রেলকে কোনও ভাবেই আধুনিক রূপ দেওয়া সম্ভব নয়। মান্ধাতা আমলের কোচ ও ইঞ্জিনের উপর নির্ভরতা বাড়লে বাড়বে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। অর্থের অভাবে সব থেকে বেশি কোপ পড়েছে নতুন লাইন পাতার কাজে। গত বারের থেকে প্রায় ১৫০ কিমি নতুন লাইন কম পাতার প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে। ৫০টি ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ও প্রায় তিন হাজার মালগাড়ির কামরা কম বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অর্থের অভাবে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেও গৌড়া যে ভাবে রাজ্যের বরাদ্দ বাড়িয়েছেন, তা নিয়ে এ দিন সন্তোষ প্রকাশ করেন বাবুল। তৃণমূলের আনা বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল নেতাদের বুঝতে হবে প্রকল্প ঘোষণা করেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। সেই কাজ শেষও করতে হয়। গৌড়া সেই চেষ্টাই করেছেন। রাজ্যের প্রকল্প যাতে শেষ হয়, তার জন্য চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করেছেন। এতে উল্টে তৃণমূল নেতাদের খুশি হওয়া উচিত।” বাবুল মনে করেন, আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যেও যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য সর্বাধিক অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তার জন্য রাজ্য সরকারের উচিত মোদী প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেওয়া।

মেট্রো রেলের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ না করা নিয়েও সরব তৃণমূল। বাবুলের বক্তব্য, “জমি জটে প্রায় সব ক’টি মেট্রোর কাজ থমকে। রাজ্য সরকারকে জমি জট ছাড়াতে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট নেতিবাচক। জমি না পেলে কাজ হবে কী করে? শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই তো কাজ হয় না।”

রেল বাজেটে রাজ্যকে বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া, নেপাল মাহাতোরা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব আনতে চান। রেল কেন্দ্রের বিষয়, এই যুক্তিতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমতি দেননি। কংগ্রেস বিধায়করা এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব আনতে চাইলে, সেই আর্জিও খারিজ করে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন