কর্তাকে নিয়ে হোঁচট ট্রেনের, হাল বেআব্রু

যাত্রীদের ভুগতে হয় নিত্যদিন। সোমবার স্টেশন পরিদর্শনে বেরিয়ে হাওড়া ডিভিশনের সর্বময় কর্তা নিজেই টের পেলেন, রেলের রক্ষণাবেক্ষণের হাল ঠিক কোন তলানিতে ঠেকেছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

যাত্রীদের ভুগতে হয় নিত্যদিন। সোমবার স্টেশন পরিদর্শনে বেরিয়ে হাওড়া ডিভিশনের সর্বময় কর্তা নিজেই টের পেলেন, রেলের রক্ষণাবেক্ষণের হাল ঠিক কোন তলানিতে ঠেকেছে!

Advertisement

হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার আর বদ্রীনারায়ণ এ দিন পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন গণদেবতা এক্সপ্রেসের সঙ্গে জোড়া সেলুনকারে চড়ে। গন্তব্য ছিল বোলপুর। সঙ্গে লোকলস্করও ছিল বিস্তর। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের এমনই হাল যে, দু’-দু’বার ইঞ্জিন খারাপ হয়ে মাঝপথে থমকে যায় ট্রেন। দু’দফার বিভ্রাটে প্রায় ঘণ্টা আড়াই আটকে থাকতে হয় রেলের ওই বড় কর্তাকে।

দ্বিতীয় দফায় সারানোর চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ট্রেনটি ফের চালু করার জন্য অন্য ইঞ্জিন আনতে হয়। জোড়া বিভ্রাটের জেরে বদ্রীনারাযণের বোলপুর পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে যায়। গণদেবতা এক্সপ্রেস বারবার হোঁচট খাওয়ায় দেরিতে চলাচল করে পিছনের কিছু দূরপাল্লার ট্রেনও। এই ঘটনার পরে রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ডিভিশনের সর্বময় কর্তা একটা দিন পরিদর্শন-সফরে বেরোবেন জেনেও ট্রেন ঠিকমতো চালানো গেল না! রেলে দেখভালের দুর্দশায় নিত্যযাত্রীদের কী অবস্থা হয়, এর থেকে সেটা সহজেই অনুমেয়।

Advertisement

ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?

হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের ‘ইনস্পেকশন কামরা’ বা সেলুনকারটি লাগানো হয়েছিল হাওড়া-আজিমগঞ্জ গণদেবতা এক্সপ্রেসের সঙ্গে একেবারে পিছনে। কিন্তু ট্রেনটি ব্যান্ডেল ছাড়ার পরে মগরার কাছাকাছি পৌঁছে থমকে যায়। রেল সূত্রের খবর, ইঞ্জিন গড়বড় করছিল। ডিআরএমের মতো পদস্থ কর্তা মাঝপথে আটকে পড়ায় রেলকর্মীরা তড়িঘড়ি ছুটে আসেন। ইঞ্জিন সারানোর চেষ্টা চলে। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরে কোনও মতে মেরামতির কাজ শেষ করে ট্রেনটি ফের চালু করা হয়।

কিন্তু মেরামতিটা যে স্রেফ জোড়াতালি দিয়ে সারা হয়েছিল, সেটা মালুম হল কিছুটা এগোতেই। বৈঁচির কাছে ফের দাঁড়িয়ে পড়ে ট্রেন। আবার খারাপ হয়ে যায় ইঞ্জিন। দফায় দফায় দেরি হতে থাকায় বিরক্তি প্রকাশ করেন ডিআরএম। কিন্তু যন্ত্রের এ বারের অসুখ বেশ জটিল। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়েও সারানো যায়নি। অগত্যা বিকল্প ইঞ্জিন আনতে হয়। নতুন ইঞ্জিনে ট্রেনটিকে আবার চালু করা হয়। সব মিলিয়ে গণদেবতা গন্তব্যে পৌঁছয় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে।

যন্ত্রের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে যথারীতি শুরু হয়ে গিয়েছে দায় এড়ানোর খেল্‌। পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘যান্ত্রিক ত্রুটি সব সময়েই হতে পারে। ডিআরএম কোনও ট্রেনে সওয়ার হলে তেমন ত্রুটি হবে না, এমন কোনও কথা আছে কি!?’’

এই বক্তব্য মানতে নারাজ যাত্রীরা এবং রেলকর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পরিদর্শনের ট্রেনটা অন্তত গড়গড়িয়ে চলবে, রেলের কাছে এটুকু আশা করারও উপায় রইল না। বড়কর্তা যাবেন জেনে ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্ছিদ্র করা উচিত ছিল। এক বার ইঞ্জিন বিগড়োনোর পরেও অফিসারেরা যে যথেষ্ট সতর্ক হননি, দ্বিতীয় বিভ্রাটই তার প্রমাণ।

পূর্ব রেলে রক্ষণাবেক্ষণের হাল যে কতটা নেমে গিয়েছে, হাওড়ার পাশাপাশি এ দিন তার প্রমাণ মেলে শিয়ালদহ ডিভিশনেও। দুপুরে ১২ কামরার ডাউন নৈহাটি লোকাল এগোল খাবি খেতে খেতে। প্রতিটি স্টেশন ছাড়ার সময় পরপর বার পাঁচেক প্রচণ্ড শব্দ করে ঝাঁকুনি দিয়েছে সেই ট্রেন। এত জোরে ঝাঁকুনি যে, অনেক যাত্রী পড়ে যান কামরার মেঝেয়। এই ঝক্কি সইতে সইতেই যাত্রীদের পৌঁছতে হয় শিয়ালদহে।

যাত্রীরা জানান, দুপুরে এমনিতেই মেন লাইনে ট্রেন কম। লালগোলার আধ ঘণ্টা পরে এটাই প্রথম লোকাল। ফলে ভিড় থাকে প্রতিটি স্টেশনেই। এ দিনও ছিল। কিন্তু ট্রেনে ওঠার পরে আত্মারাম খাঁচা ছাড়ার জোগাড় হয় যাত্রীদের। চালক-গার্ডের মধ্যে অবশ্য কোনও হেলদোল দেখা যায়নি।

গণদেবতা এক্সপ্রেসে দফায় দফায় বিভ্রাটের ব্যাপারে পূর্ব রেলের যে-কর্তা যান্ত্রিক ত্রুটি যখন-তখন হতেই পারে বলে সওয়াল করছিলেন, শিয়ালদহ ডিভিশনে নৈহাটি লোকালের যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন