ফের কর্মী বিক্ষোভ দুরন্তে, কড়া হচ্ছে রেল

রেল বোর্ডের নয়া নিয়মনীতির বেড়াজালে পড়ে ট্রেন যাত্রীদের দুর্ভোগ অব্যাহত। রবিবারের পরে সোমবারও হাওড়া থেকে মুম্বইগামী দুরন্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীদের বেশ কিছুক্ষণ অভুক্ত ও নির্জলা থাকতে হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

রেল বোর্ডের নয়া নিয়মনীতির বেড়াজালে পড়ে ট্রেন যাত্রীদের দুর্ভোগ অব্যাহত। রবিবারের পরে সোমবারও হাওড়া থেকে মুম্বইগামী দুরন্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীদের বেশ কিছুক্ষণ অভুক্ত ও নির্জলা থাকতে হল।

Advertisement

‘চাকরির গ্যারান্টি’ দিতে হবে এই দাবি নিয়ে সোমবার সকালে টাটানগর স্টেশনের কিছু আগে পরিবেশনকারীরা খাবার সরবরাহ বন্ধ করে চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই বসে পড়েন। আচমকা খাবার পরিবেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে পরিবেশনকারীদের প্রথমে বচসা শুরু হয়। পরে তা হাতাহাতিতে গড়ায়। ট্রেনটি টাটানগর স্টেশনে ঢুকলে স্টেশনের রেলকর্মীরা ছুটে আসেন। তার পরে গোলমাল আরও বেড়ে যায়। পরিবেশনকারীরা তখন ট্রেন ছেড়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়েন। তাদের পিছন পিছন যাত্রীদের অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন। রেলকর্তারা পরিবেশনকারীদের অনেক বুঝিয়ে ট্রেন তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু গোলমাল ক্রমশ বাড়ছে দেখে ঘণ্টাখানেক পরে রেল পুলিশ কার্যত জোর করেই পরিবেশনকারীদের ট্রেনে তুলে দেয়।

কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। ট্রেনটি ঝারসুগুদায় পৌঁছলে পরিবেশনকারীরা ফের ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন মধ্যাহ্নভোজের সময়। খাবার না পেয়ে এ বারে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাকি যাত্রীরাও। খবর পেয়ে আবারও ছুটে আসেন রেলের বাণিজ্যিক বিভাগের কর্তা-কর্মীরা। তড়িঘড়ি রেলের বাণিজ্যিক বিভাগের কয়েক জন কর্মীকে এনে ট্রেনে খাবার পরিবেশন করার ব্যবস্থা করা হয়। সংখ্যায় কম হলেও বাকি রাস্তায় গোটা ট্রেনে ওই ক’জন রেল কর্মীই কোনও মতে খাবার পরিবেশনের কাজ করছেন বলে জানিয়েছে রেল। পুরনো পরিবেশনকারীরা আর ট্রেনটিতে যাননি।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে আইআরসিটিসির পূর্বাঞ্চলের গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্র এ দিন বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে পরিবেশনকারীরা যা আচরণ করেছেন, তাকে কোনও ভাবেই আর প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। যাত্রীদের দুর্ভোগ রুখতে রেল এ বার কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’ প্রয়োজনে খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব রেল নিজের হাতে তুলে নিতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এত দিন পরিবেশনকারীরা দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে ‘রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি)-এর হয়ে কাজ করতেন। কিন্তু সম্প্রতি রেল বোর্ড নির্দেশ জারি করেছে, দৈনিক চুক্তিতে নয়, এ বার থেকে পরিবেশনকারী যোগান দেওয়ার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। গোলমালের শুরু এর পর থেকেই।

রবিবার থেকে পূর্বাঞ্চলে আইআরসিটিসি-র পরিবেশনকারীরা তাঁদের চাকরির নিরাপত্তার দাবি নিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। যার জেরে হাওড়া-শিয়ালদহ থেকে যে ক’টি দুরন্ত এক্সপ্রেস ছাড়ে, তার সবক’টিতেই গোলমাল চলছে। আর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। রবিবার একই দাবিতে শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেসে তুলকালাম কাণ্ড বাধে। বিক্ষোভকারীরা দুরন্ত এক্সপ্রেসের গার্ডের কামরার কাচ ভেঙে দেন। ওই বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে আইআরসিটিসি-র দুই ম্যানেজারও প্রহৃত হন। এই ঘটনায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার ১১ জনই আদালতে জামিন পেয়ে যান।

বিক্ষোভরত পরিবেশনকারীদের দাবি, রবিবার শিয়ালদহের ঘটনায় তাঁরা কোনও ভাঙচুর করেননি। তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে কিছু দুষ্কৃতী ঢুকে হামলা চালায়। কত দিন ধরে এই বিক্ষোভ চলবে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আন্দোলনকারীরা জানান, চাকরির নিরাপত্তার ব্যাপারে আইআরসিটিসি কী করছে, সেটা না জানানো পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে।

রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবার হাওড়া-বেঙ্গালুরু দুরন্ত এক্সপ্রেসে পরিবেশনকারীদের বিক্ষোভের জেরে খাবার না পেয়ে এক সময় যাত্রীদের একটা অংশ ট্রেনের প্যান্ট্রি থেকে রান্না করা খাবার বাকিদের পরিবেশনে হাত লাগান। এর ফলে কাউকেই খুব বেশি সময় অভুক্ত থাকতে হয়নি। এমন ঘটনায় অভিভূত রেল কর্তৃপক্ষ ওই যাত্রীদের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন