বিচ্ছিন্ন: সাইক্লোন অক্ষির দাপটে ভারী বৃষ্টির জেরে বিধ্বস্ত কন্যাকুমারী জেলা। বন্যার তোড়ে ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
রুজির টানে মাছ ধরতে নিয়মিতই গভীর সমুদ্রে যেতে হয়। ফলে উত্তাল সমুদ্রটা ওঁদের চেনাই! কিন্তু এ বারের সাইক্লোন ‘অক্ষি’ যেন একদম ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে!
বেঁচে ফিরেও তাই এখনও শিউরে উঠছেন অন্তত পাঁচশো মৎস্যজীবী। অক্ষির তাণ্ডবে ইতিমধ্যেই বিধ্বস্ত তামিলনাড়ু ও কেরলের বিস্তীর্ণ অংশ। এই দুই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে প্রবল ঝড়ে বিপদে পড়া ৫৩১ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও যাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনী।
এই দু’রাজ্যে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে তৎপর হয়েছে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের তিরুঅনন্তপুরম এবং চেন্নাই শাখা। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় খাবার-দাবার, ওষুধপত্র এবং স্যালাইন পৌঁছে দিয়েছে তারা।
তামিলনাড়ু সরকার জানিয়েছে, রাজ্যের সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ হচ্ছে কন্যাকুমারী ও তিরুনেলভেলি। সেখানে তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। এই সব এলাকায় জমা জল থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ে তা মহামারির আকার নিতে করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সি বিজয়াভাস্কর। আজ তামিলনাড়ুর ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী কে পলানীস্বামী। এই দুর্যোগে কেরলে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবার পিছু দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এই ঝড়ের জেরে যাঁরা মাছ ধরার সরঞ্জাম খুইয়েছেন, তাঁদের চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য মৎস্য দফতর।
যে মৎস্যজীবীরা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন, তাঁরা যেন এখনও ধাতস্থ উঠতে পারছেন না! কাটছে না আতঙ্ক। ফিরিয়ে এনে তাই অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।
স্বজনদের কাছে ফিরে কেউ কেউ জানাতে পেরেছেন মাঝ সমুদ্রের ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা। জানিয়েছেন, না ছিল খাবার, না ছিল জল! প্রতি মুহূর্তে যুঝতে হচ্ছে উত্তাল সমুদ্রের সঙ্গে। ওই অবস্থায়, কত ক্ষণ বেঁচে থাকবেন, কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। একটাই ভাবনা কাজ করছিল মাথায়, কোনও ভাবে যদি উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। স্টিফান নামে এক মৎস্যজীবী বললেন, ‘‘সমুদ্রের এমন ভয়ঙ্কর রূপ এই প্রথম দেখলাম। উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ দেখি, আমাদের না দেখেই খুব কাছ দিয়ে উদ্ধারকারী দলটা অন্য দিকে চলে গেল। চিৎকারও শুনল না ওঁরা। সৌভাগ্যবশত পরে অবশ্য ফিরে এসেছিল ওই দলটি। তাই এ যাত্রা বেঁচে ফিরেছি।’’
কেরল ও তামিলনাড়ু থেকে অক্ষি এখন সরে গিয়েছে লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের দিকে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেখানে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। প্রবল হাওয়ায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি। উপড়ে গিয়েছে নারকেল গাছগুলি। ছিন্ন যোগাযোগ ।
তামিলনা়ড়ু, কেরল ও লাক্ষাদ্বীপে সাইক্লোন অক্ষি যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, তার জন্য এই ঝড়কে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন কেরলের বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা। কেরল সরকারের কাছে তাঁর আর্জি, দুর্যোগে আহতদের ক্ষতিপূরণ ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হোক।