অসম চুক্তি নিয়ে আশ্বাস রাজনাথের

অসমীয়াদের সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া ও অসম চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই রাজ্যে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বিজেপির সাংগঠনিক সভায় যোগ দিয়ে রাজনাথ আশ্বাস দেন, অসমবাসীর সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নিশ্চিত করা বিজেপি তথা কেন্দ্রের দায়িত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে রাজনাথ। ছবি: পিটিআই।

অসমীয়াদের সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া ও অসম চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই রাজ্যে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বিজেপির সাংগঠনিক সভায় যোগ দিয়ে রাজনাথ আশ্বাস দেন, অসমবাসীর সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নিশ্চিত করা বিজেপি তথা কেন্দ্রের দায়িত্ব। অসম চুক্তি রূপায়ণ নিয়েও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে গত কাল সন্ধ্যায় দায়িত্ব নেন রঞ্জিৎ দাস। এ দিন তাঁর নেতৃত্বে প্রদেশ বিজেপির প্রথম সভা হল। হাজির ছিলেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া তিন বারের কংগ্রেস বিধায়ক রবীন বরদলৈ। রাজনাথ সিংহ দিসপুরে আগামী ২৫ বছরের জন্য বিজেপি সরকার গড়ার লক্ষ্য স্থির করে দেন। বলেন, ‘‘সর্বানন্দর নেতৃত্ব ও স্বচ্ছতা নিয়ে কেউ আঙুল তুলতে পারেনি। রাজ্যে পুরনো প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বদল আনা হবে। আগের আমলের দুর্নীতি থেকে রাজ্যকে মুক্ত করতে ও মানুষের আস্থা ফেরাতে গোটা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছেন সর্বানন্দ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কৃষক ও দরিদ্রদের অবস্থা বদলাতে কাজ করছে কেন্দ্র। ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা হবে। একই উদ্দেশ্যে কাজ করবে রাজ্যও।’’

অসম চুক্তির ছয় নম্বর দফা-সহ পুরো চুক্তি সার্বিক ভাবে রূপায়ণ এবং ভূমিপুত্রদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, সভাপতি রঞ্জিৎ দাস, শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারিকে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেন রাজনাথ। তিনি বলেন, ‘‘আইনগত দিক, সংবিধানগত দিক থেকে অসম চুক্তি রূপায়ণে কেন্দ্রের যা করণীয় তা করতে আমরা দ্বিধা করব না।’’

Advertisement

তাঁর আরও পরামর্শ, শুধু ক্ষমতা দখলই বিজেপির উদ্দেশ্য ছিল না। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। জনতার সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ, রাজ্য সরকার অসমের বিভিন্ন পেশায় কাজ করা লোকেদের নিয়ে প্রতি মাসে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করুক। তা থেকে বিভিন্ন পেশার সমস্যাগুলি ভাল ভাবে বোঝা যাবে। আলোচনাচক্রেই অনেক সমস্যার সমাধানও বেরিয়ে আসবে। নগদহীন ব্যবস্থা প্রবর্তনে রাজ্য যে উদ্যোগগুলি নিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজনাথ। বলেন, ‘‘মানুষ প্রাথমিক সমস্যা সহ্য করেছেন স্বচ্ছতর ভবিষ্যতের জন্য। এ হল কালো টাকার বিরুদ্ধে আম জনতার লড়াই।’’

রাজ্য তথা উত্তর-পূর্বে সন্ত্রাস কড়া হাতে দমন করা হবে বলে রাজনাথ জানান। বলেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে চাইলে দরজা খোলা আছে। কিন্তু নাশকতা চালালে কোনও আলোচনাই হবে না।’’

সীমান্ত ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তাঁর মত, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের পাশে থাকে। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ভারতেরও কর্তব্য। সীমান্ত সমঝোতা হয়ে গিয়েছে। তিনি জানান, ২২৩.৭৫ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোপুরি সিল করা হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে উন্নত প্রযুক্তি, সেন্সর বসানো হবে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে শেষ হবে কাজ।

নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ। রাজনাথ সিংহ অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি সাম্প্রদায়িক হলে অসমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত না। আমরা ন্যায় ও মানবিকতার পক্ষে। যা করা হবে অসমের কথা ভেবে, মানবিকতার কথা মাথায় রেখেই করা হবে।’’ তিনি মেনে নেন, নাগরিকপঞ্জি নবীকরণের কাজে অনেক দেরি হয়েছে। জানান, এনআরসির কাজ দ্রুত শেষ করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তৈরি হয়েছে ১০০টি বিদেশি শনাক্তকরণ আদালত।

মণিপুরের অবরোধ প্রসঙ্গে শাসক দল কংগ্রেস বিজেপিকে দায়ী করলেও এ নিয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি রাজনাথ সিংহ। কিন্তু বিজেপি নেতা রাম মাধব বলেন, ‘‘মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র আগেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিল। রাজ্য সরকারই ওই সমস্যা নিয়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়নি। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন