রীতিমতো যুদ্ধং দেহি পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যায় ইসলামাবাদ পৌঁছলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তার মধ্যেই কাশ্মীর নিয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্যে জড়ালেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বুধবার ইসলামাবাদে বিদেশ মন্ত্রকের এক বৈঠকের শেষে শরিফ বলেন, ‘‘কাশ্মীর এখন আর শুধু ভারতের বিষয় নয়। সেখানে স্বাধীনতার নতুন লড়াই শুরু হয়েছে।’’
আগামিকাল সে দেশে সার্কভুক্ত দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। বৃহস্পতিবার বৈঠক সেরেই দেশে ফিরে আসবেন রাজনাথ। চলতি বছরে এই প্রথম কোনও ভারতীয় শীর্ষপর্যায়ের নেতা পাকিস্তান সফরে গেলেন। এর আগে গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কার্যত বিনা আমন্ত্রণেই চলে গিয়েছিলেন লাহৌরে, নওয়াজ শরিফের বাড়ির বিবাহ অনুষ্ঠানে। অবশ্য সেই সৌজন্যের জবাব দিতে দেরি করেনি ইসলামাবাদ! এই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটে পঠানকোট হামলা। প্রথম থেকেই নরেন্দ্র মোদী এই ‘আউট অব দ্য বক্স’ (যা তিনি শুরু করেছিলেন নিজের শপথ গ্রহণের দিন থেকে) পাকিস্তান-নীতি নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সম্প্রতি কাশ্মীরে জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে এতটাই অবনতি ঘটেছে যা মুম্বই হামলার পরেও দেখা যায়নি। মঙ্গলবার ছররায় রিয়াজ আহমেদ শাহ (২১) নামে আরও এক যুবকের মৃত্যুতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে কাশ্মীরে। এই নিয়ে ছররায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫১। কাশ্মীর প্রসঙ্গে প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে কোণঠাসা করার লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। ভারত বিরোধিতায় সরব হয়েছেন নওয়াজ শরিফও। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরে ‘ভারতীয় অত্যাচারের’ প্রতিবাদে সর্বসম্মতিতে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে পাক পার্লামেন্ট। এই প্রেক্ষিতে আজ রাজনাথের পাকিস্তান সফর ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তপ্ত পাকিস্তান। এই দিন পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকার অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্স আয়োজিত প্রতিবাদ ধর্নায় সামিল ছিলেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। কাশ্মীরে ‘ভারতীয় নির্যাতনের’ বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছেন তাঁরা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, প্রতিবাদ সভায় দেখা গিয়েছে হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা সালাউদ্দিনকেও। ভারতের কূটনীতিবিদরা অবশ্য এই সফরে পাখির চোখের মতোই সন্ত্রাসের প্রসঙ্গটি দেখছেন। সার্ক গোষ্ঠীভূক্ত দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত যে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে তা বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।