নেই রাজনাথ, বৃত্তিও, হতাশ কাশ্মীরি তরুণরা

হরিয়ানার মেওয়াত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফাইনাল বর্ষের ছাত্র ওয়াজিদ হাবিব। ঘন কুয়াশা পেরিয়ে সকাল সকাল বন্ধুদের সঙ্গে দিল্লি এসেছিলেন এই কাশ্মীরি ছাত্রটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

হরিয়ানার মেওয়াত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফাইনাল বর্ষের ছাত্র ওয়াজিদ হাবিব। ঘন কুয়াশা পেরিয়ে সকাল সকাল বন্ধুদের সঙ্গে দিল্লি এসেছিলেন এই কাশ্মীরি ছাত্রটি।

Advertisement

ভেবেছিলেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ছাত্রদের হাতে বৃত্তির টাকা তুলে দেবেন। তাঁদের নিরাপত্তার কথা বলবেন। নির্ধারিত সভাস্থলে পৌঁছেও দেখেন রাজনাথ সিংহের বড় বড় ছবি। কিন্তু চার ঘণ্টা অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পরেও রাজনাথের দেখা পাওয়া যায়নি। দেখা যায়নি বৃত্তিরও নামগন্ধ। বিজেপির জম্মুর নেতা ও প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ একটি দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন বটে। কিন্তু উপস্থিত কাশ্মীরিদের মন ছুঁতে পারেননি। মাঝপথেই অনুষ্ঠান ছেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছেন হাবিব। বেরোনোর মুখে আর এক বন্ধুর থেকে জানতে পারেন, যে অনুষ্ঠানের জন্য দিল্লিতে এসেছিলেন তার আয়োজক আরএসএস। মঞ্চের পিছনে লেখা ছিল মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ। সেখানে রাজনাথেরও ছবি ছিল। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ যে আসলে আরএসএসেরই অঙ্গ, তা জানতেন না। হতাশ হয়ে বললেন, ‘‘আগে জানলে আসতামই না। কোথায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? কোথায় বৃত্তি? এখানে এসে দেখছি ভাঁওতা দিয়ে আনা হয়েছে।’’ এই অভিজ্ঞতা হাবিবের একার নয়। দিল্লির উপকণ্ঠ নয়ডায় এক বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করেন কাশ্মীর থেকে আসা নাজহার উল-ইসলাম। তাঁকে বলা হয়েছে, ঠিক এক বছর আগে এ দিনেই মারা গিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ। এই উপলক্ষে সংখ্যালঘুদের নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক হবে, প্রশ্ন তৈরি করে আসুন। অনুষ্ঠানে এসে তিনিও তো থ! বললেন, ‘‘এ সব জানলে কে আসত?’’

অথচ কাশ্মীর থেকে প্রায় ২ হাজার পড়ুয়াকে দিল্লিতে এনে তাঁদের ‘সঠিক পথের দিশা দিতেই’ আরএসএসের সংখ্যালঘু সংগঠন ‘মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কিন্তু উদ্যোক্তাদের অনেকেই কবুল করছেন, এই ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশই কাশ্মীর থেকে নয়, এসেছেন দিল্লির পাশের হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে। কেবল পড়ুয়ারাই যে এসেছেন তা নয়, নাজহারের মতো পেশাদারদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আরএসএসের এমন উদ্যোগে বিজেপির শরিক পিডিপিও ক্ষুব্ধ। রাজনৈতিক ভাবে উপত্যকায় এখনও বিজেপি দাঁত ফোটাতে পারছে না বলে দিল্লিতে বসে এসব কাণ্ড করছে বলে তাদের মত।

Advertisement

কিন্তু ছাত্রদের ভাঁওতা দিয়ে আনার কথা মানছে না সঙ্ঘের সংগঠন। তাদের দাবি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ছাত্রদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আলাদা করে কাউকে বলা হয়নি। কাউকে বৃত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়নি। রাজনাথ সিংহের আসার কথা থাকলেও আজ বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি। মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের আহ্বায়ক গিরীশ জুয়াল বলেন, ‘‘উপত্যকায় বহু দিন ধরেই আমাদের সংগঠন সক্রিয়। কাশ্মীরি ছাত্ররা দেশের অন্যত্রও সমস্যায় পড়েন। তাঁদের সাহায্যেই এই আয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন