তামিল-ভূমে রজনীই হাতের তাস বিজেপির

সাক্ষাৎ মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এসেও চোখ খুলে তিনি বলে উঠেছেন, ‘কুল’! কিন্তু আজকের তামিল রাজনীতির ঘোলা চিত্রনাট্যে তাঁর মুখে এখনও পর্যন্ত কোনও সংলাপ নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৮
Share:

সাক্ষাৎ মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এসেও চোখ খুলে তিনি বলে উঠেছেন, ‘কুল’! কিন্তু আজকের তামিল রাজনীতির ঘোলা চিত্রনাট্যে তাঁর মুখে এখনও পর্যন্ত কোনও সংলাপ নেই।

Advertisement

তিনি, ‘থালাইভার’। তামিল হৃদয়ের সুপারস্টার রজনীকান্ত। আগামি লোকসভা নির্বাচনে এডিএমকে-কে ভেঙে দেওয়ার জন্য যাঁকে ঘোড়া হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ ‘ডার্ক হর্স’ হয়ে উঠতে চলা রজনীকান্ত এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটেই রয়েছেন। এই নীরবতাকে রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি না বললেও তাঁর ঘনিষ্ঠ অভিনেতা কমল হাসন এবং তামিল নাগরিক সমাজের বড় অংশ শশিকলার বিরুদ্ধে যে ভাবে মুখ খুলেছেন, তাতে স্পষ্ট যে হাওয়া ঘুরছে। এ কথা গোড়ায় বুঝতে পারেননি পনীরসেলভমও। মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে থেকে যেতে এখন তিনি মরিয়া। আটঘাট বাঁধছেন চিন্নাম্মাও।

তবে অমিত শাহদের ধারণা, এই ডামাডোলে কেউ যদি তামিল রাজনীতির রাশ ধরতে পারেন, তিনি রজনীকান্ত। প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের ঘোষণা করার পরই বিশিষ্ট যাঁরা এগিয়ে এসে সমর্থন করেছিলেন, অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মোদীকে, তাঁদের মধ্যে রজনীকান্ত অগ্রগণ্য। তিনি টুইট করে লিখেছিলেন, ‘হ্যাটস অফ নরেন্দ্র মোদীজি। এক নতুন ভারতের জন্ম হল। জয় হিন্দ।’ এর ঠিক এক মাস পরে রজনীকান্তের জন্মদিনে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান মোদী! সেই সুসম্পর্কের রেশ ধরেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে থালাইভার তাঁদের গোপন তাস।

Advertisement

গত কাল দুই শিবিরের সঙ্গে কথা বললেও রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও আজ কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। এ দিন দুপুরে তিনি ডিজিপি-কে তলব করে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশ দেন ডিজি-কে। রাজ্যপালের সঙ্গে এ দিন দেখা করেছেন ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন, মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জয় কিষানও।

শশিকলার দুর্নীতি মামলায় সোমবার রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে চেন্নাইয়ের কুর্সি কার হাতে যাবে সেই ছবিটা স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন অনেকে। এরই মধ্যে চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের তরজা। শশিকলাকে বিঁধে পনীরসেলভম আজ বলেন, ‘‘আম্মার এই দল বটগাছের মতো। একে কেউ ছিনতাই করতে পারবে না। কেউ সে চেষ্টা করলে, আমরা তাঁকে আটকাব।’’ তাঁর তদারকি সরকার এ দিন মাদ্রাজ হাইকোর্টে জানিয়েছে, শশিকলা শিবিরে আটক বিধায়কদের ২০ জন খাচ্ছেন না। উচ্চ আদালতের মতে, এটা উদ্বেগজনক। যদিও দলের বিধায়কদের কয়েক জন ওই দাবি খারিজ করে দিয়ে আজ জানিয়েছেন, তাঁরা কেউ শিশু নন যে তাঁদের জোর করে আটকে রাখা হবে। তাঁরা স্বেচ্ছায় রিসর্টে রয়েছেন। পাশাপাশি পনীরসেলভমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এডিএমকে নেতৃত্ব। দলের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘পনীর যে ভাবে দলে ভাঙন ধরাতে চাইছেন, তাতে আম্মার আত্মা কোনও দিন তাঁকে ক্ষমা করবে না।’’ আর শশিকলা বলেন, ‘‘রাজ্যপালের উপরেই আস্থা রাখছি। তিনি যা-ই করুন, তা হবে গণতন্ত্র রক্ষার লক্ষ্যে।’’

বিজেপি নেতাদের একটা বড় অংশের মতে, এই মুহূর্তে শশিকলার হাতে বেশি বিধায়ক থাকলেও জনতার আবেগকে একজোট করার প্রশ্নে জয়ললিতার ধারে কাছে নন তিনি। জনমতের হিসেবে এখনই পনীরের পাল্লা ভারী। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘শশিকলা কোনও মতে কুর্সিতে বসতে পারলেও তাঁর কর্তৃত্ব ভঙ্গুর হতে বাধ্য। জয়ললিতার প্রতি যে সম্ভ্রম ও ভীতি দলের নেতা, বিধায়ক, সাংসদদের মধ্যে ছিল, শশিকলার প্রতি তার সিকিভাগও থাকবে না। যে কোনও সময় বিদ্রোহ হতে পারে।’’ ঠিক সেই সুযোগটির অপেক্ষাতেই রয়েছে বিজেপি। দ্রাবিড় রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি তারা। এ বারে সরকার নড়বড়ে হতে দেখলে তখন আসরে নামবে বিজেপি। তখন রাজ্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা রজনীকান্তকে ব্যবহার করার কথা ভাবা হবে। কেন্দ্রে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে, উত্তর ভারতে নতুন করে দলের বাড়বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণে যাতে নতুন জমি জোগাড় করা যায় সেই পরিকল্পনায় মাথায় রাখছে বিজেপি।

ভরসা মোদীতে ‘মুগ্ধ’ থালাইভার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন