Gujarat High Court

স্বামী ধর্ষণ করলেও ধর্ষণই, বলল গুজরাত হাই কোর্ট

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় নারীর অসম্মতিতে সব রকম যৌন সম্পর্ককেই ধর্ষণ বলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ২-এর আওতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে স্বামীকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

গান্ধীনগর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩১
Share:

গুজরাত হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

ধর্ষণ ধর্ষণই, সে স্বামীর দ্বারা হলেও ধর্ষণ— সম্প্রতি এমনই পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে গুজরাত হাই কোর্ট। বৈবাহিক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হবে কি না, তাই নিয়ে একাধিক আবেদন বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলেও স্বামীকে ছাড় দেওয়া আছে। গুজরাত হাই কোর্ট স্পষ্টতই ভিন্ন মত পোষণ করে বলেছে, আমেরিকার ৫০টি প্রদেশ, অস্ট্রেলিয়ার ৩টি প্রদেশ-সহ বহু দেশেই বৈবাহিক ধর্ষণ আইনসিদ্ধ নয়। এমনকি যে ব্রিটিশ দণ্ডবিধি থেকে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনেকাংশে নির্মিত, সেখানেও ১৯৯১ সালে স্বামীর প্রতি এই ‘ব্যতিক্রমী ছাড়’ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় নারীর অসম্মতিতে সব রকম যৌন সম্পর্ককেই ধর্ষণ বলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ২-এর আওতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে স্বামীকে। গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি দিব্যেশ জোশীর বেঞ্চে যে মামলাটি এসেছে, সেখানে অভিযোগকারিণী স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তো এনেইছেন। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, শ্বশুর এবং শাশুড়ি ছেলেকে নিয়মিত উস্কে গিয়েছেন, যাতে মেয়েটির নগ্ন ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং পর্নোগ্রাফিক সাইটে দেওয়া হয়। এটা তাদের রোজগারের একটা পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটির ঘরে বসানো হয়েছিল সিসি ক্যামেরা, যাতে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বসার ঘরে টিভিতে দেখতেন শ্বশুর-শাশুড়ি। শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগও আছে।

বিচারপতি জোশী শাশুড়ির জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিজে মেয়ে হয়েও শাশুড়ি তাঁর স্বামী-পুত্রের সঙ্গে একযোগে সমান নিপীড়কের ভূমিকা পালন করেছেন। জামিন খারিজের নির্দেশে বিচারপতি লিখেছেন, মেয়েদের উপরে হিংসার পিছনে পুরুষ ও নারীর মধ্যে ক্ষমতার অসম সম্পর্কই প্রধান কারণ। তার সঙ্গে চালু সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিধিরীতি, অর্থনৈতিক নির্ভরতা, দারিদ্র, মদ্যপানের মতো বিভিন্ন দিক মিলেমিশে এই হিংসা আরও তীব্র হয়। সামাজিক ভাবে প্রায়শই এই জাতীয় অপরাধকে হেয় করে দেখার প্রবণতা আছে। সিনেমার মতো জনপ্রিয় মাধ্যমও তাকে মহিমান্বিত করে তোলে। স্বাভাবিক বলে দেখাতে চায়।

Advertisement

এই সূত্রেই আদালত বৈবাহিক ধর্ষণের প্রসঙ্গ তুলেছে। বিচারপতি জোশীর পর্যবেক্ষণ হল, সম্মতির তোয়াক্কা না করে বলপূর্বক যৌন সংসর্গ স্থাপনই ধর্ষণ এবং ধর্ষণ ধর্ষণই। স্বামীর দ্বারা হলেও ধর্ষণ, অন্য কারও দ্বারা হলেও ধর্ষণ। গত বছর দিল্লি হাই কোর্টে বৈবাহিক ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলায় বিভক্ত রায় এসেছিল। বর্তমানে বৈবাহিক ধর্ষণকে ধর্ষণ বলে গণ্য করার আবেদন সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন