শঙ্করাচার্যের মন্তব্যে বিতর্ক

শনি মন্দিরে মেয়েরা গেলে বাড়বে ধর্ষণ!

তিন দিন আগে এসেছিল সুখবরটা। গুড়ি পড়বা বা নববর্ষের দিন চারশো বছরের প্রথা ভেঙে মেয়েদের জন্য আগল খুলে দিয়েছিল মহারাষ্ট্রের শনি শিঙ্গনাপুর মন্দির। আনন্দের রেশ কাটার আগেই মন্দির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

দেহরাদূন শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

তিন দিন আগে এসেছিল সুখবরটা। গুড়ি পড়বা বা নববর্ষের দিন চারশো বছরের প্রথা ভেঙে মেয়েদের জন্য আগল খুলে দিয়েছিল মহারাষ্ট্রের শনি শিঙ্গনাপুর মন্দির। আনন্দের রেশ কাটার আগেই মন্দির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ। দ্বারকা-সারদাপীঠের এই শঙ্করাচার্যের মতে, এ বার শনির কুনজরে পড়বেন মহিলারা। বাড়বে ধর্ষণের মতো অপরাধ।

Advertisement

পনেরো দিনের সফরে হরিদ্বারে এসেছেন স্বরূপানন্দ সরস্বতী। সেখানেই কাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শিঙ্গনাপুর মন্দিরের পবিত্র বেদির কাছে যেতে পারছে বলে মেয়েরা নিজেদের জয়ী মনে না করে। এই নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বন্ধ হোক। শনির পুজো তাদের খারাপ সময় ডেকে আনবে। ফলে মহিলাদের প্রতি অপরাধ, ধর্ষণের সংখ্যা বাড়বে।’’

দ্বারকার এই নবতিপর শঙ্করাচার্যের মতে, মন্দিরে প্রবেশের অধিকার আদায়ের চেয়ে আরও অনেক গুরুদায়িত্ব রয়েছে মহিলাদের। এ নিয়ে আন্দোলনে না মেতে বরং পুরুষেরা যাতে নেশাভাঙ না করে সে দিকে তাদের খেয়াল রাখা উচিত— মন্তব্য করেছেন স্বরূপানন্দ।

Advertisement

মহারাষ্ট্রের এই শনি শিঙ্গনাপুর মন্দিরে যেখানে বিগ্রহ রয়েছে, সেই বেদির কাছে যেতে দেওয়া হতো না মেয়েদের। সমাজকর্মী তৃপ্তি দেশাই এ নিয়ে মামলা করেন আদালতে। বম্বে হাইকোর্ট মহিলাদের পক্ষে রায় দেওয়া সত্ত্বেও শিঙ্গনাপুর মন্দিরে ঢুকতে গিয়ে ক’দিন আগেও বাধা পেয়েছিলেন তৃপ্তি ও তাঁর ভূ-মাতা রণরঙ্গিনী ব্রিগেডের সদস্যরা। শেষে গত শুক্রবারই মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, মেয়েদের উপর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন নিষেধাজ্ঞা। গত কাল মেয়েদের এই প্রতিবাদ-আন্দোলনকেই আসলে একহাত নিয়েছেন শঙ্করাচার্য।

এই মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাটের কটাক্ষ, ‘‘এত দিন তো ওই শনি মন্দিরে মেয়েরা ঢুকতে পারতেন না। তাই বলে কি তাঁদের উপর অত্যাচার হয়নি!’’ তোলপাড় টুইটারের মতো সোশ্যাল সাইটেও। কেউ লিখেছেন, চারশো বছর তো মেয়েরা শনি মন্দিরে ঢুকতে পারেনি, তাই এত দিন কোনও ধর্ষণও হয়নি! কারও বা আবার আক্ষেপ— স্বরূপানন্দের মতো শঙ্করাচার্যেরা যদি ধর্মীয় গুরু হন, তা হলে ভগবানই শুধু বাঁচাতে পারেন দেশকে। বিতর্ক অবশ্য স্বরূপানন্দ সরস্বতীর জন্য নতুন কিছু নয়। আপাতত মহারাষ্ট্র জুড়ে তীব্র জলকষ্ট। এ নিয়ে ক’দিন আগেই তিনি বলেছিলেন, সেখানে মন্দিরে মন্দিরে সাই বাবার মূর্তি বসছে। গণেশ-হনুমানের মূর্তি ঠাঁই পাচ্ছে সাই বাবার পায়ের তলায়। খরা এই অনাসৃষ্টিরই ফসল। ঘটনাচক্রে শঙ্করাচার্য যে দিন এই মন্তব্য করেছেন তার পরের দিনই দেশের শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এখানে নারী-পুরুষ সাম্যের ধারণাটাই আসলে বিপন্ন। শিঙ্গনাপুর মন্দিরের মতোই কেরলের শবরীমালা মন্দিরেও মেয়েদের ঢোকা নিয়ে রয়েছে নানা রকম বিধিনিষেধ। ঋতুমতী মহিলাদের জন্য এই মন্দিরের দরজা বন্ধ চিরদিনই। এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এর আগেও শরবীমালায় মহিলাদের অবাধ প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতিরা। তা উপেক্ষা করে এখনও সেখানে বজায় প্রাচীন রীতি। সোমবার তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘আমরা শুধু সংবিধানের নির্দেশই মেনে চলতে পারি। কোনও মহিলাকে কি বলা যায়, এভারেস্টে উঠবেন না? প্রচলিত রীতি কখনওই সাংবিধানের উর্ধ্বে নয়।’’

শীর্ষ আদালত মেয়েদের প্রতি এই অসাম্যের সমালোচনা করলেও নিয়ম-নীতি যে বিশেষ বদলাবে না, আজ ফের সেই ইঙ্গিত মিলল ত্রম্বেকেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন