ট্রেনে মন্ত্রীর বুকে ইঁদুরদৌড়, প্রভুর মুখে ধারাভাষ্য

ট্রেনে সফর করছিলেন মধ্যপ্রদেশের এক মন্ত্রী। বাতানুকূল কামরার বার্থে শুয়ে তিনি টের পেলেন, কারা যেন তাঁর গায়ের উপর দিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে। স্বপ্ন নাকি? গা ঝাড়া দিয়ে মন্ত্রীমশাই বুঝলেন, স্বপ্ন নয়। বিলক্ষণ জেগে আছেন তিনি। তা হলে গায়ের উপর দিয়ে দৌড়য় কারা? তক্কে তক্কে থাকলেন। এক সময় দৌড়বীরদের দেখতেও পেলেন। তবে ধরতে পারলেন না। কারণ, তারা সহজে ধরা দেওয়ার পাত্র নয়। তারা নেংটি ইঁদুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
Share:

সুরেশ প্রভু

ট্রেনে সফর করছিলেন মধ্যপ্রদেশের এক মন্ত্রী। বাতানুকূল কামরার বার্থে শুয়ে তিনি টের পেলেন, কারা যেন তাঁর গায়ের উপর দিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে। স্বপ্ন নাকি? গা ঝাড়া দিয়ে মন্ত্রীমশাই বুঝলেন, স্বপ্ন নয়। বিলক্ষণ জেগে আছেন তিনি। তা হলে গায়ের উপর দিয়ে দৌড়য় কারা? তক্কে তক্কে থাকলেন। এক সময় দৌড়বীরদের দেখতেও পেলেন। তবে ধরতে পারলেন না। কারণ, তারা সহজে ধরা দেওয়ার পাত্র নয়। তারা নেংটি ইঁদুর।

Advertisement

গল্প নয়। ঘটনাটা শোনালেন নবনিযুক্ত রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু স্বয়ং। রবিবার কলকাতায়। রেলের তিন জোনের সঙ্গে এ দিন আলাদা আলাদা বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর প্রসঙ্গ তুলে মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর অভিজ্ঞতার কথা বললেন প্রভু। রেলকর্তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাইলেন, রেলে পরিচ্ছন্নতার হাল এখন ঠিক কোথায়! রেল পরিষেবায় তিনি যে মোটেই সন্তুষ্ট নন, সেটা বুঝিয়ে দেন রেলমন্ত্রী।

দূরপাল্লার ট্রেনে কখনও খাবারদাবার পচা। কখনও পানীয় জল অমিল। মাঝেমধ্যেই চুরি যাচ্ছে যাত্রীদের জিনিসপত্র। এবং তাতে এক শ্রেণির রেলকর্মীর যোগসাজশেরও প্রমাণ মিলছে প্রায়ই। এ ছাড়া সময়ে ট্রেন না-ছাড়ার সমস্যা তো আছেই। সাধারণ মানুষের এই অভিজ্ঞতা নিত্যদিনের। তার খবর রেলমন্ত্রীর কানে পৌঁছয় কি না সন্দেহ। তবে এক মন্ত্রী নিজে অভিযোগ করায় রেল মন্ত্রক সেটা চেপে যেতে পারেনি। উল্লেখ করেছেন প্রভুও।

Advertisement

নতুন রেলমন্ত্রী এ দিন শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়। সেই সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে জোর দিয়েছেন খাবারদাবার, নিরাপত্তা ও রেলের সুরক্ষার বিষয়েও। তিনি রেলকর্তাদের বলেন, “রেলের আধিকারিক হিসেবে নয়, নিজেদের ট্রেনযাত্রীর আসনে বসিয়ে ঘটনার পর্যালোচনা করুন। তবেই ভাল পরিষেবা দেওয়া সম্ভব।” স্টেশনগুলিতে কম দামে পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। বলেছেন, খাবারদাবারের মানের উপরে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এখন যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর জন্য এই তিন জোনই বেশ কয়েকটি ফোন নম্বর প্রতিটি কামরায় লিখে দিচ্ছে। মন্ত্রী এতগুলি নম্বরে সন্তুষ্ট নন। তাঁর বক্তব্য, থাকা উচিত মাত্র একটি নম্বর। সেখানেই সব অভিযোগ জমা পড়বে। এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুমকে। সেই সঙ্গে প্রভুর নির্দেশ, ট্রেনে ছারপোকা-সহ পোকামাকড় আর ইঁদুরদের জব্দ করতেই হবে।

যাত্রী সুরক্ষার জন্য রেল মন্ত্রক আলাদা আলাদা সুরক্ষা সংস্থা (জিআরপিএফ এবং আরপিএফ) রাখার পক্ষে নয়। এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে। রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, জিআরপি-কে রেলের হাতে দিয়ে দেওয়ার পক্ষে বেশির ভাগ রাজ্যেরই সায় নেই। তাই আপাতত যে-ভাবে চলছে, সে-ভাবেই চলবে। কিন্তু যাতে নিরাপত্তা বিষয়ক খবরাখবর আরও বেশি করে রাখা সম্ভব হয়, তার জন্য বাড়তি বন্দোবস্ত করার কথা বলেছেন প্রভু।

মন্ত্রীমশাই বলছেন বটে! কিন্তু তাঁর প্রত্যাশা ও নির্দেশ সত্ত্বেও পরিষেবার উন্নয়নে রেলকর্তারা নড়েচড়ে বসবেন কি না, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এ দিনই হাওড়া-শেওড়াফুলি মেন লাইনে দু’দফায় ট্রেন বিভ্রাটের পরেও রেলের তরফে বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি। ওই দু’টি ঘটনায় প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে এবং ওভারহেড তার ছিঁড়ে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। প্রথমে লিলুয়া স্টেশনের কাছে ডাউন ব্যান্ডেল লোকালের প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে যায়। তাতে বেশ কিছু ক্ষণ ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়। তার পরে আবার বালি ও উত্তরপাড়ার মধ্যে ওভারহেড ছিঁড়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে মেন লাইনে ট্রেন চলাচলে বিপর্যয় চলে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে। জোড়া বিপত্তিতে যাত্রীদের প্রচণ্ড দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন