ভাড়াটে আইন বদলের তদ্বির কেন্দ্রের

কোথাও শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভাড়াটে নামমাত্র ভাড়া দিয়ে বাড়ি দখল করে রয়েছেন। কোথাও আবার বাড়িওয়ালা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন। কোনও বাড়িওয়ালা ভাড়াটে তুলতে পারবেন না বলে ভয়ে বাড়ি ভাড়াই দিচ্ছেন না।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

ফাইল চিত্র।

কোথাও শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভাড়াটে নামমাত্র ভাড়া দিয়ে বাড়ি দখল করে রয়েছেন। কোথাও আবার বাড়িওয়ালা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন। কোনও বাড়িওয়ালা ভাড়াটে তুলতে পারবেন না বলে ভয়ে বাড়ি ভাড়াই দিচ্ছেন না। কেউ আবার সাধ্যের মধ্যে বাড়িই খুঁজে পাচ্ছেন না। এ দিকে দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ ফ্ল্যাট-বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

Advertisement

এই সমস্যার সমাধানেই এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকার মাঠে নামছে। দাওয়াই, ভাড়াটিয়া আইন বা রেন্ট কন্ট্রোল আইনের সংশোধন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নীতি আয়োগের কর্তারা এ বার এই আইনে সংশোধন করার জন্য রাজ্যগুলিকে তদ্বির করা শুরু করেছেন। যাতে বাড়িওয়ালারাও বাজার দর অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া চাইতে পারেন, আবার ভাড়াটেদের মনেও যখন-তখন উচ্ছেদের ভয় থাকে না।

প্রশ্ন হল, যোজনা কমিশনের উত্তরসূরি নীতি আয়োগ-এর হঠাৎ বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে সম্পর্ক নিয়ে মাথাব্যথা কেন?

Advertisement

সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা— আসল লক্ষ্য, নোট বাতিলে সব থেকে বেশি ধাক্কা খাওয়া আবাসন ক্ষেত্র বা রিয়েল এস্টেটকে চাঙ্গা করা। কারণ এই ব্যবসায় সিংহভাগ লেনদেনই হয় নগদে। এখনও ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি আবাসন ক্ষেত্র। হাল শোধরাতেই মোদী সরকারকে এখন নীতি আয়োগকে মাঠে নামাতে হচ্ছে। নীতি আয়োগের এক কর্তার যুক্তি, ‘‘২০১১-র জনসমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ১ কোটি ১০ লক্ষ ফ্ল্যাট ও বাড়ি ফাঁকা পড়েছিল। বাজার দর অনুযায়ী ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে পারলে আবাসনে লগ্নি বাড়বে। মফস্সল থেকে শহরে কাজ করতে আসা মানুষের থাকার সমস্যাও কমবে। সামগ্রিক ভাবে চাঙ্গা হবে আবাসন শিল্প।’’

নীতি আয়োগের তিন বছরের ‘অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা’-য় তাই বলা হয়েছে, সাধ্যের মধ্যে আবাসন তৈরির জন্য শহরে জমির দাম কমিয়ে আনতে হবে। জমির চরিত্র বদলের নিয়মকানুন শিথিল করতে হবে। রুগ্ণ শিল্পের জমিও কাজে লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে মোদী সরকার যে মডেল ভাড়াটিয়া আইন তৈরি করেছে, সেই ধাঁচে রাজ্যগুলিকে নতুন আইন তৈরি করতে হবে। রাজ্যগুলি এত দিন ১৯৪৮-এর রেন্ট কন্ট্রোল আইন অনুযায়ী নিজেদের মতো আইন তৈরি করেছিল। তাতে ১২ মাসের কম সময়ের ভাড়ার চুক্তি হলেই বাজারদর অনুযায়ী ভাড়া চাওয়া যেত। এখন আর সেই শর্ত থাকবে না। চুক্তিতে উল্লেখিত সময়সীমা মেনে বাড়িওয়ালাকে ভাড়াটেকে উঠে যাওয়ার নোটিস দিতে হবে।

প্রশ্ন হল, এতেই কি আবাসন শিল্প চাঙ্গা হবে? বণিকসভার এক কর্তার যুক্তি, ‘‘মোদী সরকার যে ভাবে আয়কর দফতরকে কালো টাকার খোঁজে নামিয়েছে, কারণ না দেখিয়ে তল্লাশি বা হানার ক্ষমতা দিয়েছে, তাতে অনেকেই শঙ্কিত। আবাসনের বেশির ভাগ লেনদেনই হয় নগদে। এখন আবাসনে লগ্নি করলেই আয়কর দফতরের নজরে চলে আসবেন বলে লোকে ভয় পাচ্ছেন।’’

বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘জোনস লাং লাসাল’-এর সিইও অশ্বীন্দ্র রাজ সিংহ বলেন, ‘‘আশা করছি, সরকারি পদক্ষেপে লাভ হবে। কারণ দেশের সাতটি বড় শহরের শুধু গ্রুপ হাউসিংগুলিতেই ৫ লক্ষ ফ্ল্যাট বিক্রি না হয়ে পড়ে রয়েছে। ভাড়া দিয়ে নজরে পড়ার ভয়েই এখন কেউই ফ্ল্যাট কিনে লগ্নি করতে চাইছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন