সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যা চিন্তা বাড়াচ্ছে অফিসারদের

গত শনিবার সকালেই শ্রীনগরের সোনওয়ার এলাকায় কর্মরত সিআরপিএফ-এর ৭৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল প্রুখা সুখদেব সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। ঘটনাটি সেনা ছাউনির ভিতরেই ঘটে। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান প্রুখা।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

একের পর এক জওয়ানদের আত্মহত্যা ভাঁজ ফেলছে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের কপালে। গত দেড় বছরে অন্তত ৯ জন জওয়ান আত্মঘাতী হন। পরিসংখ্যানটা সেনা-কর্তাদের উদ্বেগ বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

Advertisement

গত শনিবার সকালেই শ্রীনগরের সোনওয়ার এলাকায় কর্মরত সিআরপিএফ-এর ৭৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল প্রুখা সুখদেব সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন। ঘটনাটি সেনা ছাউনির ভিতরেই ঘটে। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান প্রুখা।

তার ঠিক দিন কয়েক আগে, ৭ মার্চ বুধবারের সকালে কুপওয়ারার হান্দোয়ারা এলাকায় একই ঘটনা। ৩০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর সদস্য বীরেন্দ্র সিংহও সার্ভিস রাইফেল থেকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। কুপওয়ারার লাঙ্গাটে ছাউনির সদস্য ছিলেন তিনি।

Advertisement

তার আগের দিন কুপওয়ারারই লোলাবের ওয়ার্নভে ছাউনিতে আর এক জন জওয়ান সার্ভিস রিভলভারের গুলিতে শেষ করে দেন নিজেকে। রাজস্থানের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সি সেই জওয়ান নায়েক শঙ্কর সিংহও প্রাণ হারান ঘটনাস্থলে।

সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যা বা সহকর্মীকে খুন করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কাশ্মীরে এমনটা প্রায়শই শোনা যায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা বেড়ে যাওয়ায় উঠছে প্রশ্ন। গত বছর অনেকটাই বেশি ছিল এই সংখ্যা। ২০১২-১৫ সালের মধ্যে ১২টি এমন ঘটনা ঘটেছিল। ব্যতিক্রম ২০০৬। শুধু এক বছরেই ২৩টি এমন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

দক্ষিণ কাশ্মীরের স্পর্শকাতর এলাকায় জঙ্গি দমন বাহিনী ভিক্টর-এ থাকা শীর্ষ সেনা অফিসার আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা বিষয়টা দেখতেই পাই না। প্রশিক্ষণ, চাপ নেওয়ার কৌশল নিয়ে নানাবিধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও এমন ঘটনা ঘটছে, যা আমাদের চেষ্টাকেই ঠাট্টা করছে।’’ বাহিনীর অফিসারদের একাংশের দাবি, আত্মহত্যা বা সহকর্মীদের প্রাণনাশের পিছনে মানসিক চাপ, কর্মক্ষেত্রে নিদারুণ অবস্থা, বাড়ি যাওয়ার জন্য অপ্রতুল ছুটি ও ঊর্ধ্বতন অফিসারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া— এই সব কারণকেই দায়ী করেছেন। তবে অন্য মতও আছে। জঙ্গিদমন এলাকায় ‘কিলো বাহিনী’র জেনারেল অফিসার এ কে সিংহ যেমন বলছেন, ‘‘নিয়মিত যোগাসন, ধ্যান সবই করানো হয় জওয়ানদের মানসিক চাপ দূর করতে। তা ছাড়াও মনোবিদের কাছে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিং করিয়েও ফল মেলে।’’

তবু আত্মহত্যার মতো পদক্ষেপে কেউ কেউ বাধ্য হন এবং এটা সেনার বড় সমস্যা, মানছেন এ কে সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি ব্যাপারটা যাতে অত দূর না গড়ায়। তবে আমরা কাজের চাপটা বুঝতে পারি। বাড়ির চাপ বা ব্যক্তিগত চাপের দিকটা সব সময়ে সামলানো যায় না।’’

কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের পাশাপাশি আত্মহত্যার জন্য বাহিনীর মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের দিকেও কেউ কেউ আঙুল তুলছেন। কয়েক জন ঊর্ধ্বতন অফিসার এ জন্য দায়ী বলে তাঁদের ধারণা। এক অফিসার বলছেন, ‘‘ছুটির আবেদন ক্রমাগত বাতিল করা (বিশেষত জরুরি পরিস্থিতিতে) বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অথচ শীর্ষ স্তরের অফিসাররা যথেচ্ছ সুবিধা ভোগ করেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন