অঞ্জন চক্রবর্তী
চাকরি করার সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। যার জেরে তাঁকে স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য করেছিল মেঘালয় প্রশাসন। অভিযোগ, তার পরেও অভ্যাস ছাড়তে পারেননি মেঘালয়ের সিআইডির প্রাক্তন ইনস্পেক্টর অঞ্জন চক্রবর্তী। তোলাবাজি ও হুমকির অভিযোগে শুক্রবার শিলং থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেন একবালপুর থানার পুলিশ।
শুধু কলকাতা নয়, মেঘালয় ও অসমেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সিবিআই অফিসার বা কলকাতা পুলিশের অফিসারের ভুয়ো পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শনিবার কলকাতায় নিয়ে এসে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
শিলং পুলিশ জানিয়েছে, অঞ্জনবাবুর কাছ থেকে দু’টি মোবাইল, প্রচুর নগদ টাকা ও বেশ কয়েকটি ভুয়ো পরিচয়পত্র উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশ। তাঁরা জানান, কলকাতায় কখনও সিআইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, কখনও গোয়েন্দা বিভাগের এসি কখনও বা সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে ‘শিকার ধরতেন’ অঞ্জনবাবু। এ ভাবেই একবালপুরের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি দু’দফায় কয়েক লক্ষ টাকা আদায় করেছিলেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, গত মাসে এক ব্যবসায়ী একবালপুর থানায় অভিযোগ করেন, অঞ্জন চক্রবর্তী নিজেকে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পরিচয় দিয়ে কয়েক বার ফোন করেন। টাকা না দিলে তাঁকে মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করার হুমকিও দেন। পুলিশের দাবি, ওই ব্যবসায়ী দু’দফায় কয়েক লক্ষ টাকা দেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, ওই অফিসার আসলে এক জন প্রতারক।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালে মেঘালয় পুলিশ থেকে অঞ্জনবাবুকে স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য করেছিল সেখানকার প্রশাসন। কারণ সেই সময়ে বেশ কয়েকটি প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও সেই মামলায় তিনি আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। পুলিশের দাবি, ওই চাকরি ছাড়ার পরে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে তিনি প্রতারণার জাল ছড়িয়ে দেন কলকাতা থেকে শিলং।
গত কয়েক বছরে শিলং সদর থানায় অঞ্জনবাবুর নামে দু’টি প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। মেঘালয় পুলিশ সূত্রের দাবি, মামলায় বেকসুর প্রমাণ করতে যে আইনজীবী তাঁর হয়ে আদালতে সওয়াল করেছিলেন, তাঁর পারিশ্রমিকও অঞ্জনবাবু দেননি।
তদন্তকারীরা জানান, মেঘালয় পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরিতে ঢুকেছিলেন অঞ্জনবাবু। সেখান থেকে ইনস্পেক্টর পদে উত্তীর্ণ হন তিনি। এর মধ্যেই পাঁচ বছরের জন্য সিবিআইতে যোগ দেন অফিসার হিসেবে। তখন তিনি কলকাতায় পোস্টেড ছিলেন। সেই সুযোগে স্থানীয় পুলিশের কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন। তাই মেঘালয় থেকে স্বেচ্ছাবসরের পর দমদমে চলে আসেন তিনি। পরে ফের শিলচরে ফিরে যান। বর্তমানে সেখানেই ছিলেন। সেখান থেকেই কলকাতা ও মেঘালয়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে দিয়েছিলেন অঞ্জনবাবু।