বছর শেষে ফের জেলযাত্রা দোষী লালুপ্রসাদের

রাঁচীর বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক শিবপাল সিংহ আগামী ৩ জানুয়ারি দোষীদের সাজা শোনাবেন। তবে ইতিমধ্যেই আরজেডি এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাঁচী হাইকোর্টে যাবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতা রঘুবংশ প্রসাদ সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাঁচী ও পটনা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

ধৃত: পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে লালুপ্রসাদ। শনিবার রাঁচীতে। ছবি: পিটিআই।

পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির আরও একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে গেলেন আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব। তবে দেওঘর ট্রেজারি থেকে ৮৯ কোটি টাকা তছরুপের এই মামলায় তাঁকে কত দিনের জন্য কারাবাস করতে হবে তা আজ জানা যায়নি। রাঁচীর বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক শিবপাল সিংহ আগামী ৩ জানুয়ারি দোষীদের সাজা শোনাবেন। তবে ইতিমধ্যেই আরজেডি এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাঁচী হাইকোর্টে যাবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতা রঘুবংশ প্রসাদ সিংহ।

Advertisement

১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে দেওঘর ট্রেজারি থেকে বিপুল অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগেই দায়ের হয়েছে এই মামলা। তখন অবিভক্ত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন লালুপ্রসাদ। এই মামলায় মোট অভিযুক্ত ৩৪ জন। তার মধ্যে ১১ জন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। সেই সময় ক্ষমতায় না থাকায় আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রকে আজ বেকসুর খালাস করে দিয়েছেন বিচারক। মুক্তি পেয়েছেন আরও পাঁচ অভিযুক্ত। দোষীদের তালিকায় রয়েছেন লালু-সহ ১৭ জন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার বেক জুলিয়াস, ফুলচাঁদ সিংহ এবং মহেশপ্রসাদ। রয়েছেন এক বাঙালি অফিসার, সুবীর ভট্টাচার্যও।

• না জোর চলেগা লাঠি কা/ লালু লাল হ্যায় মাটি কা...

Advertisement

সত্যি পায়ে জুতো গলাতে গলাতে মিথ্যে অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে আসতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়

লালুপ্রসাদ

• ফৌজদারি মামলা ও রাজনৈতিক জোট— দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। তা ছাড়া, লালুপ্রসাদ তো নব্বইয়ের দশক থেকেই আইনি লড়াই লড়ছেন

মণীশ তিওয়ারি, কংগ্রেস মুখপাত্র

• দু’দল (কংগ্রেস এবং আরজেডি) যে আঁতাঁত করে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তা আদালতের রায় থেকেই স্পষ্ট

জগৎপ্রসাদ নাড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

আজ সারা দিনই এই রায়কে ঘিরে বিহার তথা দেশ জুড়ে জল্পনা চলেছে। প্রশ্ন উঠেছে লালুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা লালুপ্রসাদ ও আরজেডির পাশেই থাকছে। বিজেপি এই ‘জোট’-কে ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের জোটবদ্ধতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে বিহারের রাজনীতিকদের একাংশের মতে, লালু যত বার জেলে গিয়েছেন, তত বারই রাজনৈতিক ভাবে লাভ হয়েছে তাঁর। অনেক বেশি শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন আরজেডি প্রধান।

আরও পড়ুন: বেকসুর লালু নন, ভুল ভাঙল দ্রুতই

গত দু’দশকের ভোটের অঙ্ক হাতে নিয়ে এক আরজেডি নেতা বলেন, ২০১৩ সালে জেলবন্দি হন লালু। তার ফল মেলে ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় আরজেডি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটকে অবশ্য ব্যতিক্রমী হিসেবেই দেখছেন তাঁরা, ‘‘ওটা তো মোদী-ঝড়। সে ঝড় যে থমকে গিয়েছে, সেটা ২০১৫-তেই প্রমাণিত।’’ আরজেডি নেতৃত্বের দাবি, এ বারের জেলযাত্রার সুফল মিলবে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে।

দেখুন ভিডিও:

আজ তাঁর ঘোষিত উত্তরসূরি ছেলে তেজস্বীকে নিয়ে আদালতে ঢোকার আগে পর্যন্ত লালু টুইটারে একের পর এক কটাক্ষ হেনেছেন বিজেপির উদ্দেশে। সকাল সাড়ে দশটায় প্রথম লেখেন, ‘কমল কা ফুল অলওয়েজ বনাওয়িং এপ্রিল ফুল। রহনা কুল, না করনা ভুল, চাটানা ধুল।’ এর পর দেন মার্টিন লুথার কিং ও নেলসন ম্যান্ডেলার জেলবন্দি হওয়ার উদাহরণ। আদালতে রওনা হওয়ার আগে লেখেন, ‘না জোর চলেগা লাঠি কা/লালু লাল হ্যায় মাটি কা।’ এ বারে তাঁর জেলে যাওয়ার পিছনে বিজেপির ‘হাত’ রয়েছে বলেই প্রচারে নামছে তাঁর দল। আজ বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে আরজেডি নেতা জগদানন্দ সিংহ জানিয়েই দিয়েছেন, ‘‘এ বিজেপির ছক। তবে বিহারের মানুষ তা ভেস্তে দেবে।’’

কী রায় দিল আদালত, দেখুন আপডেট

• দোষী সাব্যস্ত লালুপ্রসাদ যাদব • রাঁচীর জেলে নিয়ে যাওয়া হল লালুকে • ১৯৯০ থেকে এখন পর্যন্ত লালুর যা যা সম্পত্তি, সে সবই বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে • রায় ঘোষণার পর টুইট করেন লালু, বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সত্যই জিতবে’। • লালু-সহ দোষী সাব্যস্ত মোট ১৭ জন • ৩ জানুয়ারি সাজা ঘোষণা • জগন্নাথ মিশ্র-সহ ৬ জনকে রেহাই দিল আদালত • বিকেল ৩.৩৫মিনিট: রায় দান প্রক্রিয়া শুরু করেন বিচারক শিবপাল সিংহ • পৌনে তিনটে নাগাদ সিবিআই আদালতে পৌঁছন লালু প্রসাদ যাদব। সঙ্গে ছিলেন কনিষ্ঠ পুত্র তেজস্বী যাদব।

লালুর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘জেলের সাজা তো নতুন তো কিছু নয়। তিনি ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না, সেটাও নতুন নয়। লালুপ্রসাদের আসলে আজকের রায়ে নতুন করে হারানোর কিছু নেই। উল্টে তাঁর ভোটব্যাঙ্ক এই রায়ে আরও চাঙ্গা হবে। ২০১৯-এই মিলবে তার প্রমাণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন