শিশুদের আন্ত্রিক রুখতে সার্বিক টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় রোটা ভাইরাস ভ্যাক্সিন খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার ওড়িশায় এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা। ওড়িশা, অন্ধ্র, হরিয়ানা এবং হিমাচল— প্রথম দফায় এই চারটি রাজ্যে টিকাকরণ চালু হবে। তার পর বাকি রাজ্যগুলিতেও নিখরচায় এই টিকা দেবে কেন্দ্র। এর আগে বেসরকারি হাসপাতালে শিশুদের রোটা ভাইরাসের টিকা খাওয়ানো হলেও বিষয়টি নিয়ে সরকারি উদ্যোগ এই প্রথম।
আচমকা পেট খারাপ, সঙ্গে জ্বর, বমি, পেটে যন্ত্রণা। শিশুরা আকছারই এই ধরনের আন্ত্রিকের কবলে পড়ে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর ফলে শরীরে জলের অভাবে নেতিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়। কোনও শিশু আগে থেকেই অপুষ্টিতে ভুগলে বা সময় মতো হাসপাতালে না পৌঁছলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের আন্ত্রিকের পিছনে রয়েছে রোটা ভাইরাস। শিশুদের আন্ত্রিকের ক্ষেত্রে শতকরা ৪০ ভাগই হয় এই ভাইরাসের আক্রমণে। এ দেশে প্রতি চার মিনিটে একটি শিশুর মৃত্যু হয় রোটা ভাইরাস ঘটিত আন্ত্রিক থেকে। কিন্তু এর কোনও ওষুধ নেই। এক বার সংক্রমণ হলে ওআরএস-ই এক মাত্র ভরসা।
রাজ্যে নতুন টিকাকরণ কর্মসূচি চালুর আগে প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই মাঠে নামছে ওড়িশা স্বাস্থ্য দফতর। পশ্চিমবঙ্গে সপ্তাহ খানেক আগেই কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর পরে কিছু পড়ুয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি জেলায় প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। রোটা ভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রেও যাতে তেমন কিছু
না-হয়, তার জন্য ইউনিসেফ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আগাম প্রচার শুরু করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। ওড়িশার স্বাস্থ্য কল্যাণ দফতরের ডিরেক্টর নির্মলা দেই বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। কিন্তু তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ।’’
এ দেশে এখনও শিশুদের টিকা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সরকারি প্রচার, পাড়ায় পাড়ায় শিবির খুলেও দেশের মাত্র ৬২ শতাংশ শিশুর সমস্ত টিকাকরণ সম্ভব হয়েছে। এখনও ৮ শতাংশ শিশুকে কোনও টিকাই দেওয়া হয় না। ইউনিসেফ-এর ওড়িশা ফিল্ড অফিসের প্রধান য়ুমি বায় বলেন, “সব মাকে এই টিকার সম্পর্কে জানতে হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সি সব শিশুকে এই টিকা দেওয়াটা খুবই জরুরি।’’
সরকারি হিসেব বলছে, গোটা বিশ্বে আন্ত্রিকে যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার ২৫ শতাংশ মৃত্যু ভারতে ঘটে। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হল রোটা ভাইরাস জনিত আন্ত্রিক। এই ভাইরাস প্রচণ্ড সংক্রামক। হাতে বা মেঝেতে দীর্ঘ সময় এই ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে। ফলে এ দেশে শিশুরা সহজেই সংক্রামিত হয়। বিশেষত অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি সব থেকে বেশি। একবার শুরু হলে তিন থেকে সাত দিনের আগে এই অসুখ সারে না। শরীরে জলের অভাব দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া উপায়ও নেই। এ দেশে প্রতি বছর ৮ লক্ষ ৭০ হাজার শিশুকে রোটা ভাইরাস জনিত আন্ত্রিকের জেরে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
এই মুহূর্তে বিশ্বের ৮০টি দেশে সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় রোটা ভাইরাসের টিকা খাওয়ানো হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী, নবজাতকদের ক্ষেত্রে তিনটি ডোজে— ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ ও ১৪ সপ্তাহ বয়সে পোলিও ও অন্য টিকার সঙ্গেই এই ভ্যাক্সিন খাওয়ানো হবে। গোটা দেশে টিকা চালু হলে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে ৪১ হাজার থেকে ৪৮ হাজার মৃত্যু রোখা যাবে বলে দাবি মন্ত্রকের।