অভিযুক্ত ‘বাবা’কে বরখাস্ত করে দিয়েছে ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান তথা আশ্রম। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রাত হলেই শুরু ‘জ্বালাতন।’ একের পর এক ছাত্রীর মোবাইলে ‘গুরুজি’ বা ‘বাবা’র মেসেজ ঢুকত। কাউকে তিনি লিখছেন, বড্ড একা লাগছে। মেসেজ পাওয়া মাত্রই যেন আশ্রমে তাঁর ঘরে চলে যান ছাত্রী। কাউকে নিয়ে আবার বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ। মেসেজে কাজ না হলে সঙ্গিনী তথা কর্মচারীদের দিয়ে জোর খাটানো। তাতেও কাজ না-হলে ‘বড় ক্ষতি’ করে দেওয়ার হুমকি। শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত দিল্লির ওই ‘বাবা’র হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তা উদ্ধার করেছে পুলিশ। চলছে তাঁর খোঁজ।
ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের কাউকে নিয়ে বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন ‘গুরুজি।’ কারও সঙ্গে ‘দুষ্টু কথা’ বলার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। অভিযুক্ত ‘বাবা’ দিল্লির একটি পরিচিত আশ্রম তথা বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের ডিরেক্টর। নাম স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থসারথি। অভিযোগ, অন্তত ১৭ জন ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন তিনি।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, ‘গুরুজি’ রাতবিরেতে ছাত্রীদের ফোন এবং মেসেজ করে উত্ত্যক্ত করতেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য জোর করতেন ‘বাবা।’ এমনকি, প্রতিষ্ঠানের মহিলাকর্মীদের দিয়ে তাঁদের কাছে কুপ্রস্তাব পাঠাতেন। শ্লীলতাহানি-সহ একাধিক ধারায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। তা ছাড়া ভুয়ো নম্বরপ্লেট দেওয়া ‘গুরুজি’র একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
ইতিমধ্যে ৫০ জন ছাত্রীকে পাঠানো গুরুজির হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রায় সব মেসেজেরই ভাষা অশ্লীল এবং ইঙ্গিতপূর্ণ। এক ছাত্রীর অভিযোগ, ‘বাবা’ সম্পত্তিরও লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁকে। তাতে ওই তরুণী সাড়া না দেওয়ায় ‘কুৎসিত হুমকি’ দেন বলে অভিযোগ। আবার তাঁর কথামতো না চললে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলেও লিখেছিলেন।
তবে প্রথমেই হুমকির দিকে যেতেন না বসন্তকুঞ্জের আশ্রমের ‘বাবা।’ প্রথম প্রথম তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ‘রিপ্লাই’ না পেলেই শুরু হয় ‘অত্যাচার।’ বিশেষ করে যে ছাত্রীরা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বাড়ি থেকে গিয়ে পড়াশোনা করতেন, ‘গুরুজি’র টার্গেট ছিলেন তাঁরাই। তদন্তে নেমে ‘বাবা’র দেখভাল করেন এমন তিন মহিলাকে ডেকে পাঠিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। ছাত্রীদের অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডেনদের দিয়েও ‘বাবা’ কুপ্রস্তাব পাঠাতেন তাঁদের। পুলিশ তাঁদের বয়ান রেকর্ড করেছে।
দিল্লির এই ‘বাবা’ আদতে ওড়িশার বাসিন্দা। অভিযোগ উঠেছে গত ১৬ বছর ধরে একের পর এক মহিলার শ্লীলতাহানি করেছেন তিনি। অভিযোগকারিণীর দাবি, অতীতে কেউ কেউ ‘বাবা’র বিরুদ্ধে মুখও খুলেছেন। আশ্রম তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জানিয়েছেন। পুলিশেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
গত অগস্ট মাসে ‘বাবা’ যখন লন্ডনে, তখন তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লির ডিফেন্স কলোনি থানায় ১৭ জন তরুণী এবং যুবতী শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। তার পর বাবাকে শেষ বার আগরায় প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এখন আর খোঁজ মেলেনি। এর মধ্যে ওই ‘গুরুজি’র বিরুদ্ধে নতুন দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। একটি গাড়িতে ভুয়ো নম্বরপ্লেট ব্যবহারের অভিযোগ। বস্তুত, দিল্লিতে তাঁর আশ্রম এবং অফিসে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ভুয়ো নম্বরপ্লেট এবং নানা নথি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দ্বিতীয় অভিযোগটি করা হয়েছে আশ্রমের তরফেই। সেটা প্রতারণার। আশ্রম কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর ‘গুরুজি’কে তাঁরা বহিষ্কার করেছেন।
দক্ষিণ ভারতের একটি পরিচিত ধর্মীয় সংগঠনের দিল্লির শাখার নেতৃত্বে ছিলেন অভিযুক্ত ‘বাবা।’ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ওই সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। জানানো হয়েছে, এমন অভিযোগ ‘ভয়ঙ্কর।’ এগুলো কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করুক পুলিশ।