চাপের মুখে মোদীর সায়
EVM

ভোটের প্রমাণ থাকবে স্লিপেও

তিন দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলের বৈঠকে অভিযোগ করেছিলেন, বিরোধীদের হাতে কোনও অস্ত্র নেই বলে ইভিএমের মতো খেলো বিষয় নিয়ে হল্লা করছে। আজ চাপের মুখে তাঁকেই ইভিএম নিয়ে বিরোধীদের দাবি মেনে নিতে হলো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

তিন দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলের বৈঠকে অভিযোগ করেছিলেন, বিরোধীদের হাতে কোনও অস্ত্র নেই বলে ইভিএমের মতো খেলো বিষয় নিয়ে হল্লা করছে। আজ চাপের মুখে তাঁকেই ইভিএম নিয়ে বিরোধীদের দাবি মেনে নিতে হলো। ভোটযন্ত্রের কারচুপিতে উদোর ভোট বুধোর ঘরে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে ভোটারদের নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের প্রতিটি বুথে ইভিএমে ‘ভিভিপিএটি’ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী দু’বছরে ১৬ লক্ষ ১৫ হাজার ইভিএমে ওই যন্ত্র বসানোর জন্য ৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমে ওই নতুন ব্যবস্থা কমিশনের হাতে আসবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তার পরের সব ভোটেই ইভিএমের সঙ্গে ওই যন্ত্র লাগানো থাকবে।

Advertisement

কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘সব রাজনৈতিক দল চাপ না দিলে এবং কমিশনে এত বার চিঠি না পাঠালে প্রধানমন্ত্রী আজও ওই সিদ্ধান্ত নিতেন না।’’

গোড়া থেকে দাবি উড়িয়ে কেন এই উলটপুরাণ? আসলে, উত্তরপ্রদেশে বিপুল জয় পেলেও শান্তি ছিল না বিজেপিতে। ফল বেরনোর পর মায়াবতী প্রথম ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ করেন। এর পরে আপ, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল— ধীরে ধীরে এককাট্টা হয় সব বিরোধীরা। ১৬টি বিরোধী দল কাগজের ব্যালটে ফেরানোর দাবি জানায় কমিশনে। সুপ্রিম কোর্টও কমিশনকে জানাতে বলে, কত দিনে তারা সব ইভিএমে ‘ভিভিপিএটি’ যন্ত্র জুড়তে পারবে। বসে ছিল না কমিশনও। ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত তারা কেন্দ্রকে ১১ বার চিঠি দিয়েছে ‘ভিভিপিএটি’র জন্য বরাদ্দ চেয়ে।

Advertisement

যদিও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কমিশনকেও বারবার দাবি করতে হয়েছে, বর্তমান ইভিএমেও কারচুপি করা সম্ভব নয়। শেষমেশ তারা এই চ্যালেঞ্জও ছোড়ে যে, পারলে ইভিএম হ্যাক করে দেখাক হ্যাকাররা। বিতর্ক থামেনি তাতেও। উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফল নিয়ে অভিযোগের পর, মধ্যপ্রদেশে ভোটগ্রহণের মহড়ায় সব ভোট বিজেপির ঘরে চলে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে কমিশন। মহারাষ্ট্রেও পুরভোটে এক নির্দল প্রার্থী শূন্য ভোট পেয়ে চমকে যান। যার অর্থ, তিনি নিজের ভোটটিও পাননি! সব মিলিয়ে ইভিএম নিয়ে সন্দেহ দূর করায় তাগিদ ছিল কমিশনেরও। এর মধ্যে বিরোধীরা হাতিয়ার করেন সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে। ২০১৩ সালেই শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হল ‘পেপার ট্রেল’। অর্থাৎ ভোট দিলে তা ঠিক জায়গায় পড়েছে কি না, তা কাগজে মিলিয়ে নেওয়া। গত সপ্তাহে কংগ্রেস দাবি করে, কমিশনের হাতে থাকা ১৬ লক্ষ ইভিএমের মধ্যে মাত্র ৬০ হাজারটিতে ওই ব্যবস্থা রয়েছে। এর পরে কমিশন আর নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলতে দিতে চায়নি। কেন্দ্রকে চিঠি লিখে জানায়, অবিলম্বে সব ইভিএমে ওই যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করুক সরকার। মোদী সরকারও চায়নি, এভিএম নিয়ে বিরোধীরা আরও এককাট্টা হওয়ার সুযোগ পাক।

স্বাভাবিক ভাবেই নির্বাচন কমিশন আজ সরকারের সিদ্ধাম্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, এতে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। ভোটদাতার ভোট কার ঘরে পড়ল, তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ আর থাকবে না পেপার ট্রেলের ব্যবস্থায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন