গাঁধী হত্যায় সঙ্ঘকে দায়ী করিনি: রাহুল

শাস্তির খাড়া থেকে বাঁচতে ঢোঁক গিললেন রাহুল গাঁধী। সুপ্রিম কোর্টকে বললেন, মহাত্মা গাঁধীর হত্যার জন্য আরএসএসকে দায়ী করেননি তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৬
Share:

শাস্তির খাড়া থেকে বাঁচতে ঢোঁক গিললেন রাহুল গাঁধী। সুপ্রিম কোর্টকে বললেন, মহাত্মা গাঁধীর হত্যার জন্য আরএসএসকে দায়ী করেননি তিনি।

Advertisement

লোকসভা ভোটের প্রচারে মহারাষ্ট্রের একটি সভায় রাহুল বলেন, ‘‘আরএসএসের লোকেরা গাঁধীজিকে হত্যা করেছেন। আর আজ বিজেপিই এখন তাঁদের কথা বলে।’’ মহাত্মা গাঁধীর হত্যায় আরএসএসকে দায়ী করায় সঙ্ঘ রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে। এত দিন গোঁ ধরে বসে থাকলেও আজ রাহুলের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, গাঁধী-হত্যায় রাহুল আরএসএসকে তিষ্ঠান হিসেবে দায়ী করেননি। তবে আরএসএসের কিছু লোকের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেন। এর পরেই মামলা থেকে রাহুলকে নিষ্কৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দেন বিচারপতি। ১ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে শীর্ষ আদালত।

বিচারপতি দীপক মিশ্র ও আর এফ নরিম্যানের বেঞ্চ জুলাইয়ে শুনানিতে রাহুলকে বলে, আপনি কোনও সংগঠনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করতে পারেন না। রাহুলের কৌঁসুলি আদালতকে জানান, এটি ঐতিহাসিক তথ্য। সরকারি রেকর্ডেও এর উল্লেখ রয়েছে। শীর্ষ আদালত বলে, তা হলে রাহুল গাঁধীকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে, আরএসএসের সঙ্গে জড়িত ছিল। সে ক্ষেত্রে মামলার শুনানি হবে। নয়তো রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে। বেগতিক বুঝে আজ রাহুলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংগঠন হিসেবে আরএসএসের বিরুদ্ধে মন্তব্য তিনি করেননি। এর পরেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মানহানির মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এটি পর্যাপ্ত। আরএসএসের আইনজীবী ইউ আর ললিত বলেন, তাঁর মক্কেলের সঙ্গে পরামর্শের জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।

Advertisement

আদালতে পিছু হটলেও রাহুলের আইনজীবী ও প্রাক্তন মন্ত্রী কপিল সিব্বল রাজনৈতিক আক্রমণ করতে ছাড়েননি। বিকেলে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তির কথা উল্লেখ করেন। বিজ্ঞপ্তিটিতে সঙ্ঘকে ‘বিপজ্জনক’ কাজে জড়িত বলা হয়েছে। দেশের অনেক প্রান্তে সঙ্ঘের সদস্যরা হিংসা, ডাকাতি ও হত্যার কাজে লিপ্ত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। সিব্বলের মতে, ‘‘এই কথা রাহুল গাঁধী বলছেন না। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে রয়েছে।’’ সিব্বল শ্যামচাঁদের লেখা ‘স্যাফরন ফ্যাসিজম’ বইয়ের উল্লেখ করে বলেন, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সর্দার পটেলকে লেখা একটি চিঠিতে গাঁধীর হত্যার জন্য সঙ্ঘের বড় ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন। জবাবে পটেল সঙ্ঘকে হিন্দু মহাসভার এক কট্টর দক্ষিণপন্থী সংগঠন বলেছিলেন। যেটি সাভারকরের নেতৃত্বে কাজ করত। সিব্বলের অভিযোগ, ‘‘আরএসএস এ সবের বিরুদ্ধে মামলা করে না কেন?’’

সিব্বলের যুক্তি, লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন গাঁধী-হত্যাকারী নাথুরাম গডসের সঙ্গে সঙ্ঘের যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছিলেন, তখন গডসের ভাই গোপাল উল্টে বলেছিলেন, তাঁরা সব ভাই সঙ্ঘের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সিব্বল বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক কারণে রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’’ আরএসএস সূত্র বলছে, রাহুল নিজের বক্তব্য থেকে না সরলে কোনও ভাবেই তাঁকে ছাড়া হতো না। তবে এখন শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই ১ সেপ্টেম্বর আদালতকে জানানো হবে। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী সরাসরি ক্ষমা চাননি বটে। কিন্তু নিজের মন্তব্য থেকে পিছিয়ে এসে অন্য ভাবে ভুল স্বীকার করলেন।’’

এর পরেও বিজেপি চাইছে, গাঁধী হত্যায় সঙ্ঘকে জড়িয়ে মন্তব্য করার জন্য ক্ষমা চান রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন