ভাগবত কি ভগবান, প্রশ্ন রাহুলের

‘‘মিস্টার ভাগবত, আপনি গোটা দেশকে সংগঠিত করার কে? আপনি কি ভগবান?’’ দিল্লির সিরি ফোর্ট প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত গোটা দেশের শিক্ষক-অধ্যাপকদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে প্রশ্ন ছুড়লেন রাহুল গাঁধী। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

‘‘মিস্টার ভাগবত, আপনি গোটা দেশকে সংগঠিত করার কে? আপনি কি ভগবান?’’ দিল্লির সিরি ফোর্ট প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত গোটা দেশের শিক্ষক-অধ্যাপকদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে প্রশ্ন ছুড়লেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

সেইসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী জমানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ ও শিক্ষার গৈরিকীকরণের অভিযোগ নিয়ে শিক্ষক-অধ্যাপকদের ক্ষোভকে উস্কে দিয়ে কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্য, ‘‘আরএসএস গোটা দেশের উপর একটাই মতাদর্শ চাপিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু ভারতের মতো দেশ একটি মতাদর্শে চলতে পারে না।’’

চলতি সপ্তাহে দিল্লিতেই তিন দিন ধরে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট জনেদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মোহন ভাগবত। ‘ভবিষ্যতের ভারত: আরএসএস-এর দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক সেই সম্মেলনে ভাগবত বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, আরএসএস সবাইকে নিয়েই চলার পক্ষে। আজ ঠিক সেখানেই প্রশ্ন তুলে রাহুল বলেন, ‘‘মোহন ভাগবত বলেছেন, আমরা গোটা দেশকে সংগঠিত করতে চলেছি। মিস্টার ভাগবত, আপনি সংগঠিত করার কে? কোনও ভগবান? দেশের মানুষ নিজেরাই নিজেদের সংগঠিত করবেন। এই কথাগুলো বলার সময়ে কতখানি উদ্ধত শোনায়, তা কি বুঝতে পারেন না? এই সব সুখস্বপ্ন আর কয়েক মাসের মধ্যে ভেঙে যাবে।’’ অমিত শাহকে নিশানা করে রাহুল বলেন, ‘‘উনি ভারতকে সোনে কি চিড়িয়া বলেন। দেশটা ওঁর কাছে বাণিজ্যিক পণ্য।’’ আরএসএস কী ভাবে সব প্রতিষ্ঠানে নাক গলাচ্ছে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘গুজরাতের এক অফিসারকে এসপিজি-র প্রধান পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে তিনি আমাকে এসে জানান, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, আরএসএস তাদের কয়েক জন নেতাকে এসপিজি নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানায়। ওই কর্তা রাজি না হওয়ায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’’

Advertisement

আজ শিক্ষক-অধ্যাপকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় শুরুতেই রাহুল জানিয়ে দেন, তিনি ছাত্র হিসেবে শুনতে এসেছেন। পশ্চিমবঙ্গের পরভিন বানু বলেন, ‘‘শুধু উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে নয়। প্রাথমিক স্তরেও আরএসএস বিদ্যা ভারতী-র স্কুলের মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদ শেখাচ্ছে।’’ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌশল পানওয়ারও অভিযোগ তোলেন, পাঠ্যক্রমে ‘আদর্শ পুত্রবধূ’ হওয়ার পাঠ ঢোকানো হচ্ছে। পরভিন যুক্তি দেন, শেখানো হচ্ছে গর্ভাবস্থায় মহিলাদের আমিষ খাওয়া উচিত নয়।

রাহুল শিক্ষকদের আর্থিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার প্রয়োজনের কথা বলেন। দিল্লির কলেজের দুই অ্যাড-হক শিক্ষক পারুল কুমার ও সুনয়না দেবী অভিযোগ তোলেন, তাঁদের চার মাসের চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করানো হচ্ছে। বিনা নোটিসে চাকরি যায়। বেতন বাড়ে না। ছুটি মেলে না। সুনয়না চোখের জল সামলে বলেন, ‘‘গর্ভাবস্থায় ছুটি চাওয়ায় চাকরি চলে গিয়েছিল। সেই দুশ্চিন্তায় আমার গর্ভপাত হয়ে যায়।’’ রাহুল প্রতিশ্রুতি দেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ‘অ্যাড-হক’ ব্যবস্থা উঠবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফি লাগামছাড়া। তাই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই জোর দিতে হবে বলেও রাহুল প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। অধ্যাপক অশোক আচার্য প্রশ্ন তোলেন, কেন জিডিপি-র ৬ শতাংশ অর্থ শিক্ষাখাতে খরচ হবে না? রাহুল কথা দেন, কংগ্রেসের ইস্তাহারে এর রূপরেখা থাকবে।

গুজরাতের রাজেন যাদব জানান, রাজ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত পদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষাকর্মী নিয়ে কাজ চলে। গত আট মাস গোটা দেশে নিয়োগ বন্ধ। রাজস্থান, হরিয়ানা, মণিপুর থেকে আসা শিক্ষকেরা অভিযোগ তুলেছেন, উপাচার্য থেকে শিক্ষাকর্মী, সর্বত্র আরএসএসের লোক নিয়োগ হচ্ছে। রাহুল প্রতিশ্রুতি দেন, ‘‘একটা কথা দিচ্ছি। কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই এই স্বশাসন, চিন্তার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন