জেল হতে হতে বেঁচেছি, খোলাখুলি রাস্কিন বন্ড

মঙ্গলবার দিল্লির এক হোটেলে প্রকাশ হলো রাস্কিনের আত্মজীবনী ‘লোন ফক্স ডান্সিং’। সেখানেই তিনি শোনালেন নিজের জীবনের এমনই অন্য রকম কিছু গল্প। তখন দেশ জুড়ে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। ‘দ্য সেনশ্যুয়ালিস্ট’ নামে তাঁর একটি গল্প প্রকাশ পেয়েছিল ‘ডেবোনেয়ার’ পত্রিকায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৪:০৭
Share:

রাস্কিন বন্ড

জীবনের গোটাটা জুড়েই ছিল পার্বত্য শহর। আর সেই পার্বত্যময় জীবনকেই গল্পের চরিত্র করে তুলেছেন বারবার। শিশু সাহিত্য লিখেছেন, কিন্তু আট থেকে আশি পাঠক মাত্রেই যারা একবার তাঁর লেখার স্বাদ পেয়েছে ডুবে গিয়েছেন সেই ভরপুর বুনো ফুলের মাদকতায়।

Advertisement

রাস্কিন বন্ড। ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম নাম। জন্ম ব্রিটেনে কিন্তু অনেক ভারতীেয়র থেকেই এ দেশটাকে অন্য রকম করে জেনেছেন বন্ড, দেখেওছেন। আর সে সমস্ত কিছুই নিজের লেখায় ধরেছেন অন্য এক মায়াবি আলোয়। কিন্তু সব লেখাই যে তাঁকে আলোকিত করেছে তা নয়, বিপদেও ফেলেছে বেশ কয়েক বার। নিজের একটি গল্পের জন্য এক বার জেলে যেতে যেতে বেঁচেছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার দিল্লির এক হোটেলে প্রকাশ হলো রাস্কিনের আত্মজীবনী ‘লোন ফক্স ডান্সিং’। সেখানেই তিনি শোনালেন নিজের জীবনের এমনই অন্য রকম কিছু গল্প। তখন দেশ জুড়ে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। ‘দ্য সেনশ্যুয়ালিস্ট’ নামে তাঁর একটি গল্প প্রকাশ পেয়েছিল ‘ডেবোনেয়ার’ পত্রিকায়। এটি আদতে এক যুবকের গল্প, যে যৌন তাড়নার বশবর্তী হয়ে নিজের জীবনটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: শবাসন সামাল দিয়ে বৃষ্টিযোগ মোদীর

মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে সেই গল্প বলতে গিয়ে রাস্কিন বন্ড জানালেন, মুম্বই থেকে এক পুলিশ কনস্টেবল জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে মুসৌরি আসেন। ‘‘খুব ভাল মানুষ ছিলেন ওই কনস্টেবল,’’ বলেন রাস্কিন। তারপর মুম্বইয়ের এক আদালতে হাজিরা দিতে যেত হয় রাস্কিনকে। প্রায় দু’বছর চলেছিল মামলাটি। তবে রাস্কিন মনে করেন শুধু মাত্র গল্পটির যৌনগন্ধের জন্যই নয়, সে সময় একটি পত্রিকাও প্রকাশ করতেন তিনি। জরুরি অবস্থার সময় পত্রপত্রিকার উপরে কড়া নিষেধা়জ্ঞা জারি করা হয়েছিল। হয়তো সেগুলোও তাঁর গ্রেফতার হওয়ার একটি কারণ ছিল। যদিও তিনি সতর্কতার সঙ্গে সে সময় সব রকমের বিতর্কিত লেখাপত্র এড়িয়ে যেতেন। ছাপা হতো গাছপালা, ফুল কিংবা পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন গদ্য।

তবে কথায় বলে না, শেষ ভাল যার, সব ভাল। গোটা প্রক্রিয়ায় অনেকটা হয়রানির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তবে তার মধ্যেও যখন বিচারক রাস্কিনকে ডেকে বলেছিলেন, গল্পটা তাঁরও ভাল লেগেছিল। রাস্কিন বন্ডের কথায় ‘‘সেটিই ছিল আমার সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি।’’

মঙ্গলবার অনুষ্ঠানের দর্শকাসন থেকে ছুটে এল প্রশ্ন, ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে যখন দেখা হয়েছিল, এ বিষয়ে কথা হয়েছিল? লেখক জানালেন, তিনি বোধহয় সবটাই জানতেন। এমন কী যখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়, তখনও মামলা মেটেনি। জানালেন, তাঁর মতোই গাছপালা, প্রকৃতি পছন্দ করতেন ইন্দিরা গাঁধীও।

ব্রিটেনে জন্মালেও গোটা জীবন ভারতেই কাটিয়েছেন বন্ড। ছোটবেলা কেটেছে শিমলা, দেহরাদূনে, পরে শেষ বয়সে এসে মুসৌরিতে থাকা শুরু করেন। ১৯৫০-এ ইংল্যান্ডে গিয়েও এ দেশের মায়া ভুলতে পারেননি। ফিরে এসেছেন। বললেন, ‘‘ভারতই আমার ঘরবাড়ি। এই দেশের জমি, মাটি এগুলোই আসলে আমার ঘর। এখানে কোনও ধরনের সম্পত্তি কিনিনি কখনও। বিশ্বাস করি এখানকার সব কিছুই আমার, গোটা দেশটাই।’’

‘লোন ফক্স ডান্সিং’ জুড়েই ছড়ানো ছিটানো জীবনের নানা টুকরো। কোনও রকম আক্ষেপ ছাড়া চুটিয়ে বাঁচা যায় যে জীবন, সেই জীবনের গল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন