বরাকে মুখ্যমন্ত্রী

নরমে গরমে আমলাদের বোঝালেন, সে সময় নেই

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৭
Share:

শিলচরে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের। — নিজস্ব চিত্র

দেখেশুনে মনে হচ্ছিল চাকরির ইন্টারভিউ, যদিও আসলে ছিল চাকরি বাঁচানোর ইন্টারভিউ!

Advertisement

সব বিভাগীয় কর্তাদের ডেকে মুখ্যমন্ত্রী কথা বললেন। অনেকের কাজের প্রসঙ্গে রাগও দেখালেন। নানা বিষয়ে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। হুমকি চলল সমান তালে।

সর্বানন্দ সোনোয়াল এর আগে বহুবার বরাকে এসেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে তাঁকে দেখেছেন এখানকার মানুষ। বিজেপি সভাপতি হিসেবেও বেশ কয়েকবার তিনি এই অঞ্চল সফর করেছেন। কাছাড়-করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি চষে বেড়িয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অবশ্য এই প্রথম। তাঁকে স্বাগত জানাতে আজ বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের সবাই বিমানবন্দরে ছুটে যান। ছিলেন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য-সহ দলীয় বিধায়করাও। হাজির হন জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ও পুলিস সুপার রজবীর সিংহ।

Advertisement

বিমানবন্দর থেকে কনভয় রওয়ানা হতেই পুরনো রীতিতে হুটার বাজায় পুলিশ। আপত্তি করেন সোনোয়াল। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কোথাও সাধারণের চলাচল আটকে দেওয়া চলবে না। এর অবশ্য খেসারতও দিতে হয় তাঁকে। সঙ্গে ভোগেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশরাও। বিশেষ করে, সার্কিট হাউস থেকে জেলাশাসকের অফিস যেতে ডাকবাংলোর মোড়ে আটকে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। তবে শহর শিলচর দেখল এক অন্য মুখ্যমন্ত্রীকে।

অন্য মুখ্যমন্ত্রী দেখলেন অফিসাররাও। বরাক উপত্যকা ও পার্বত্য বিভাগের ছয় জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী সোনোয়াল। ছিলেন ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল, পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিজিপি, এনআরসি কো-অর্ডিনেটর-সহ এক ঝাঁক শীর্ষ আমলাও। বাইরে তখন গিজগিজ করছেন জেলা পর্যায়ের অফিসাররা। সবার চিন্তা, কখন কার ডাক আসে। যাঁরা বাইরের ঘরে বসেছিলেন, এক মনে ফাইলে চোখ বোলাচ্ছিলেন। যেন চাকরিপ্রার্থী! আর যাঁরা দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন, কেউ ভেতর থেকে বেরোলেই তাঁর উপর তাঁরা প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন! কী জিজ্ঞেস করলেন, কেমন মনমেজাজ মুখ্যমন্ত্রীর ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। সুখকর জবাব কমই মিলল। বাতানুকূল ঘর থেকে বেরিয়েও অনেককে রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে দেখা গেল।

অফিসারদের কাউকেই যে ছেড়ে কথা বলেননি, পরে সাংবাদিকদের সে কথা নিজেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার জন্য সোজাসুজি আমলাকুলকেই দায়ী করেন তিনি। সোনোয়াল বলেন, এই সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি। কংগ্রেস আমলের আমলাদের জন্যই এই অবস্থা।

সর্বানন্দবাবু দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ সপ্তাহে অবশ্য আমলা স্তরে কোনও রদবদল হয়নি। তবে কি পুরনো আমলাদের আর ভরসা করছেন না তিনি? মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘তাঁদেরই বলেছি, সব ঠিকঠাক করুন। প্রতি মুহূর্তে মনে রাখতে হবে, আগের আমল নেই। আগে যে ভাবে দফতর চলেছে, এখন আর সে ভাবে চলবে না।’’ তিনি আজ সাংবাদিকদের জানান, লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কাজ করে চলেছে তাঁর সরকার।

তিন বছরের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত রাস্তা পাকা হবে। কোনও এলাকায় কাউকে গর্তের জন্য দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না।

এনআরসি নিয়েও প্রশাসনিক সভার ভিতরে-বাইরে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এ ক্ষেত্রেও বরাক-ব্রহ্মপুত্রের সমন্বয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সবার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন। চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়ার পর্যন্ত কাউকে হয়রানি না করতে ডিসি-এসপিদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

বরাক উপত্যকার প্রাকৃতিক ও বনজ সম্পদ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সর্বানন্দ সোনোয়ালও এ ব্যাপারে অবগত, স্পষ্ট হয় আজ। তিনি জানান, খাদানের বালি-পাথর যেভাবে-সেভাবে বিক্রি করা চলবে না। ওইসব সামগ্রী তোলা হবে শুধুমাত্র পূর্ত বিভাগের চাহিদা অনুসারে।

বঙ্গভবনে শহরের বরিষ্ঠ নাগরিকদের সঙ্গে মত বিনিময়েও তিনি এ সব কথার পুনরুল্লেখ করেন। রাস্তাঘাট, ব্রডগেজ, বিমান ভাড়া, মাতৃভাষার অধিকার, ডিটেনশন ক্যাম্প, দুর্নীতি—প্রায় সব বিষয়েই শহরবাসী তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একে একে নানা প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন নীলোৎপল চৌধুরী, বীথিকা আচার্য, নীতীশ ভট্টাচার্য, পরিতোষ দে, তৈমুর রাজা চৌধুরী, রাজীব কর, অরুণ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বরাকের রাস্তাঘাটের জন্য তিনমাসের সময় দেওয়া হয়েছে পূর্ত অফিসারদের। তিনমাস পর আমি নিজে কাজ দেখতে আসব। সে সময় বিমানে নয়, গুয়াহাটি থেকে সড়কপথে শিলচর পৌঁছব। ঘুরে দেখব অন্যান্য শহর-গ্রামও।’’ মেঘালয়কে এড়িয়ে গুয়াহাটি পৌঁছনোর জন্য বিকল্প সড়কের যে দাবি করে চলেছেন বরাকবাসী, তা শীঘ্রই পূরণেরও ইঙ্গিত দেন তিনি। তাঁর কথায়, কোনও অবস্থায় তাঁর সরকার দুর্নীতি বরদাস্ত করবে না। সব বিভাগের কাজকর্ম এখন থেকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের তদারকি করতে বলা হয়েছে।

সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ও বরাকের নবনির্বাচিত আট বিজেপি বিধায়ককে সংবর্ধনা জানায় বিজেপির কাছাড় জেলা কমিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন