ধোঁয়াশা মোড়া দিল্লিতে বন্ধ স্কুল

প্রতি বছর এই সময়ে দিল্লি-সংলগ্ন পঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের কৃষি জমিতে থাকা ফসলের গোড়া ও আগাছা পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে তীব্র বায়ু দূষণের শিকার হয় রাজধানী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৫
Share:

নাকেমুখে: মাত্রা ছাড়িয়েছে দূষণ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির একটি স্কুলে নাজেহাল খুদেরা। ছবি: পিটিআই।

গত ক’দিন ধরেই ধোঁয়াশার চাদরটা ঝুলে ছিল দিল্লির আকাশে। আজ ঝুপ করে নেমে আসে তা। ফলে শীত পড়তে না পড়তেই বছরের দূষিততম দিনের সাক্ষী থাকল রাজধানী। ধোঁয়াশার এই চাদর এতই মোটা ছিল যে, দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের। রাজধানীর বাতাসে দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে আগামিকাল দিল্লির সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি সরকার। এমনকী, দরকার না থাকলে পূর্ণবয়স্কদেরও ঘর থেকে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এই ঘন ধোঁয়াশার কারণে আজ ৩৩টি ট্রেন তিন ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। একই কারণে দিল্লি থেকে দেরিতে ছাড়ে ২০টি উড়ানও।

Advertisement

প্রতি বছর এই সময়ে দিল্লি-সংলগ্ন পঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের কৃষি জমিতে থাকা ফসলের গোড়া ও আগাছা পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে তীব্র বায়ু দূষণের শিকার হয় রাজধানী। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বায়ু গবেষণা ও বায়ুর মান বিভাগের প্রধান দীপঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘বায়ুপ্রবাহ না থাকায় সেই ভারী ধোঁয়াশার চাদর নেমে আসে গোটা দিল্লি ও ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অঞ্চলে।’’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের কথায়, কার্যত গ্যাস চেম্বারের চেহারা নেয় দিল্লি।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, বেলা তিনটে নাগাদ দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি সূচক ছিল ৪৪৬। যে সূচক চলতি বছরের দীপাবলির দিনের থেকেও খারাপ বলে জানিয়েছে পর্ষদ। পরিস্থিতির উন্নতি করতে গাড়ির পার্কিংয়ের ভাড়া চার গুণ ও আগামী দশ দিন ব্যস্ত সময়ে মেট্রোর ভাড়া কম রাখার নির্দেশ দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। উদ্দেশ্য, যাতে রাস্তায় গাড়ি কম চলে এবং বেশি মানুষ মেট্রো চড়েন।

Advertisement

পরিবেশবিদদের মতে, দিল্লি-সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণের কাজে কোনও নিয়ম না মানাও দূষণের একটি বড় কারণ। ‘দি এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটিউট (টেরি)’-র গবেষক অরিন্দম দত্তের কথায়, ‘‘গোটা ন্যাশনাল ক্যাপিটাল এলাকায় আবাসন নিমার্ণের কাজ চলছে। যা স্থানীয় ভাবে বায়ুদূষণের অন্যতম বড় কারণ। নিয়মমাফিক জল ছিটিয়ে, মূল নিমার্ণস্থলটি ঢেকে কাজ হওয়ার কথা। যাতে দূষণ কম হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না।’’ আজ দিল্লির আবহাওয়ার মানের অবনতি দেখে তড়িঘড়ি সমস্ত নির্মাণস্থলে জল ছিটিয়ে কাজ করার নির্দেশিকা জারি করেছেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা।

কী ভাবে দিল্লির পরিস্থিতির উন্নতি করা যায় তা নিয়ে বৈঠক করার জন্য আপৎকালীন ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের কাছে সময় চেয়েছেন দিল্লির মু্খ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। আপ সূত্রের খবর, দিল্লি সরকার ইতিমধ্যেই চপার দিয়ে জল ছিটিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রকে। তবে এতে কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান দীপঙ্করবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘চপার দিয়ে কোথায় জল দেবে, আর সেই জল কোথায় গিয়ে পড়বে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ভারতে এর আগে এ ধরনের প্রয়োগ হয়নি।’’

এ দিকে, বায়ু দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে মাস্ক কেনার। ৩০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকার বিভিন্ন দামের মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ওষুধের দোকানে। আজ দিল্লি মেট্রো ও বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের ১৩ হাজার নিরাপত্তা কর্মীর হাতে মাস্ক তুলে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন