অসাম্প্রদায়িক, বোঝাতে বিদেশনীতিই অস্ত্র মোদীর

উত্তরপ্রদেশ–সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু-দরদী বার্তা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে মোদী সরকার। ঘরে-বাইরে সরকারের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করতে বিদেশনীতিকে কাজে লাগাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হতে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০২
Share:

উত্তরপ্রদেশ–সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু-দরদী বার্তা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে মোদী সরকার। ঘরে-বাইরে সরকারের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করতে বিদেশনীতিকে কাজে লাগাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হতে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কড়া চিঠি পাঠিয়েছেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী। ২০১৫ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্যালেস্তাইন সফরের সময় সে দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় (আল কুদুস, আল এস্তেকলাল এবং হেব্রন)-এর সঙ্গে জামিয়া মিলিয়ার সমঝোতা পত্র সই হয়েছিল। প্যালেস্তাইনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ছাত্র এবং শিক্ষক বিনিময়, গবেষণা ক্ষেত্রে যৌথ সহযোগিতা-সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদানের প্রতিশ্রুতি ছিল সেই চুক্তিপত্রে। বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেল, কিন্তু সেই সমঝোতা পত্রকে বাস্তবায়িত করার কোনও উদ্যোগ জামিয়া দেখাচ্ছে না। প্যালেস্তাইনের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে, কিন্তু এ ব্যাপারে এখানকার গড়িমসি ভাবটাই সমস্যাজনক। আমরা দ্রুত জানতে চাই, কেন এই কাজ এগোচ্ছে না।’’ জামিয়ার উপাচার্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কাজ কত দূর এগিয়েছে এবং কত দিনের মধ্যে তা শেষ করা যাবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অর্থের ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে নির্দেশ গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।

ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে প্যালেস্তাইনের শিক্ষামন্ত্রীর। সেই সফরও ঝুলে রয়েছে এই বিষয়টির উপর। সাউথ ব্লক চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব এই চুক্তিকে বাস্তবায়িত করা হোক। তারপর সে দেশের শিক্ষামন্ত্রীর সফরের সময়ে সেই সাফল্যকে বড় করে তুলে ধরা হবে। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মোদী-অমিত শাহ তথা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব এ কথা ভাল করেই জানেন যে, বিজেপি যতই চেষ্টা করুক দেশের মুসলিম মন জয় করতে পারবে না। মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে সরাসরি থাবা বসানোর জন্য এই সংখ্যালঘু তোষণের বার্তা যে তাঁরা দিতে উদ্যোগী, বিষয়টি এমনও নয়। কিন্তু দেশের যে বিশাল ধর্মনিরপেক্ষ, মধ্যমপন্থী, অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের কাছে বার্তা দেওয়াটা মোদী সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ছে। নোট বাতিলের ফলে এমনিতেই যথেষ্ট কোণঠাসা এবং সমালোচনার মুখে মোদী। সামনেই উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এখন যদি আবার নতুন করে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গ ওঠে, তবে সমস্যা বাড়বে, বই কমবে না। পাশাপাশি, আমেরিকা-সহ পশ্চিমের বড় দেশগুলির কাছেও এ ব্যাপারে নেতিবাচক বার্তা যাবে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে মোদীর সমালোচনা করে গিয়েছেন। নতুন প্রেসিডেন্টের মতিগতি এখনও পর্যন্ত সাউথ ব্লকের অজানা। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ সহিষ্ণুতার বিষয় নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথাব্যথা আছে এমনটা প্রাথমিক ভাবে মনে করে না মোদী প্রশাসন। কিন্তু তা নিয়ে নিঃসন্দেহও নয় কেন্দ্র। মোদীকে যে বহু বছর আমেরিকায় প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি, সেটা ভোলার নয়। তা ছাড়া, পাকিস্তানের কট্টর ও জেহাদি মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও নরমপন্থী মুসলিম বিশ্বকে পাশে পাওয়া দরকার, মনে করছেন মোদী।

Advertisement

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এই একই সূত্র ধরে আবু ধাবি-র যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জাভেদ আল নাহিয়ানকে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, বিন জাভেদকে আমন্ত্রণ জানানোর পিছনে অন্য একটি কৌশলগত কারণও রয়েছে। সৌদির মতোই এক সময় সংযুক্ত আরব আমির শাহিও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। কিন্তু ভারতের দীর্ঘ দৌত্যে ধীরে ধীরে আর্থিক এবং কৌশলগত, দু’দিক থেকেই নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কে ক্রমশ উন্নতি হয়েছে এই দুই দেশের। ওই অঞ্চলে ভারতের উপস্থিতিও আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। গত একবছরে ভারতের বিদেশনীতিতে যা সাফল্য এসেছে তা পশ্চিম এশিয়ার এই সব মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এসেছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এই সাফল্যকে বিভিন্ন মন্ত্রকের মাধ্যমে (যেমন শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, পরিবেশ, শক্তি) দেশের ভিতর তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই ভাবে আফগানিস্তানের পাশাপাশি, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার পুর্নগঠনে ভারত অংশ নিতে চায় এমন একটি প্রস্তাবও রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে দিয়েছে সাউথ ব্লক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন