সনিয়ার প্রত্যাবর্তনে খুশি আর নিশ্চিন্ত প্রবীণেরা, ‘খুশি’ বিজেপিও

খুশি বিজেপি নেতৃত্বও। ‘গাঁধী-পরিবারের বাইরে কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব নেই’ বলে এত দিন বিজেপি নেতাদের অভিযোগকেই আরও পোক্ত করেছে রাহুলের পরে সনিয়ার প্রত্যাবর্তন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪১
Share:

সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।

রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, তিনি দলের নেতৃত্বে নতুন মুখ তুলে আনবেন। অস্তিত্ব-সঙ্কটে ভুগছিলেন প্রবীণরা। কিন্তু রাহুলের হাত থেকে ফের সনিয়া গাঁধীর হাতেই কংগ্রেসের ব্যাটন চলে যাওয়ায় এ বার তাঁরা নিশ্চিন্ত। তাঁদের মতে, ৭২ বছরের সনিয়া খাতায়-কলমে অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হলেও খুব তাড়াতাড়ি নেতৃত্বে বদল হচ্ছে না। তিনি যত দিন রয়েছেন, তত দিন ভাবনা নেই।

Advertisement

খুশি বিজেপি নেতৃত্বও। ‘গাঁধী-পরিবারের বাইরে কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব নেই’ বলে এত দিন বিজেপি নেতাদের অভিযোগকেই আরও পোক্ত করেছে রাহুলের পরে সনিয়ার প্রত্যাবর্তন। আজ তাই বিজেপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মা-ছেলের গোলামি করা থেকে কি কংগ্রেসের নেতাদের আজাদি মিলবে না?’’

শনিবার রাতে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পি চিদম্বরমই প্রথম বলেন, ‘ম্যাডামকেই’ দায়িত্ব নিতে হবে। আর কোনও উপায় নেই। কারণ ওয়ার্কিং কমিটির বাইরে থাকা নেতাদের নিয়ে তৈরি একের পর এক কমিটি বলতে থাকে, রাহুলকেই সভাপতি থাকতে হবে। কিন্তু রাহুল সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। বাকিদের নামে ঐকমত্য না-হওয়ায় চিদম্বরম সনিয়ার নাম প্রস্তাব করেন। সনিয়া তখন দৃপ্ত কণ্ঠে ‘না’ বলে দেন। বলেন, এর কোনও সম্ভাবনা নেই। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেন, এটা ঠিক নয়। কারণ রাহুলই বলেছেন, গাঁধী পরিবারের কাউকে যেন সভাপতি না-করা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা তাঁর মাকে দেখিয়ে যোগ করেন, ‘‘উনি যদি রাজি হন, তা হলে কার কী করার রয়েছে!’’

Advertisement

এতে আপত্তি তুলে বৈঠকের মধ্যেই দাঁড়িয়ে পড়েন এ কে অ্যান্টনি। বলেন, ‘‘এটা কোনও ভাবেই হতে পারে না।’’ তাঁকে নিরস্ত করতে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, সবাই রাহুলকে চান, কিন্তু তিনি সম্মত হচ্ছেন না— তখন বিকল্প কী? সিন্ধিয়া নিজে সভাপতি পদের অন্যতম প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তিনিই অ্যান্টনিকে বসতে বলে প্রশ্ন করেন, কেন ‘ম্যাডাম’ দায়িত্ব নিতে পারবেন না?

এর পরে আসরে নামেন তিন নেত্রী। অম্বিকা সোনি, কুমারী শৈলজা এবং আশা কুমারী। তাঁরা সনিয়াকে বলেন, ‘‘ম্যাডাম, আপনি ছাড়া গতি নেই। এই কঠিনতম সময়ে গাঁধী পরিবার ছাড়া আর কেউ কংগ্রেসকে বাঁচাতে পারবে না। আপনি দায়িত্ব না-নিলে দল ভেঙে যাবে।’’ বৈঠকে মনমোহন সিংহ প্রায় নীরবই ছিলেন। কিন্তু তিন নেত্রীর সওয়ালের পরে অ্যান্টনি বাদে বাকিরাও সনিয়াকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। তাঁরাও যুক্তি দেন, অন্য কেউ সভাপতি হলে দল টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

২০১৭-র ডিসেম্বরে ছেলের হাতে দলের দায়িত্ব দিয়ে সনিয়া বলেছিলেন, তিনি এখন সিনেমা দেখতে চান, বই পড়তে চান। ইন্দিরা-রাজীবের চিঠিপত্র সংরক্ষণ করতে চান। কিন্তু দলের নেতা-নেত্রীদের কাতর আবেদনে অরাজি হওয়া তাঁর পক্ষেও কঠিন ছিল। আজ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহও বলেছেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই সেরা সিদ্ধান্ত। ওঁর অভিজ্ঞতা ও বোধ আমাদের পথনির্দেশে সাহায্য করবে।’’

কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মুকুল ওয়াসনিক সভাপতি হলে পিছন থেকে আহমেদ পটেলই দল চালাতেন। এখন সনিয়া অন্তর্বর্তী সভাপতি হওয়ায় রাহুলের পক্ষেও তাঁর ভাবনা কার্যকর করা সহজ হবে। তবে প্রবীণদের সরিয়ে রাহুলের ইচ্ছে অনুযায়ী নবীন প্রজন্মকে তুলে আনার কাজ কতখানি, হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এখানেই আক্রমণের সুযোগ পেয়েছে বিজেপি। তাদের মুখপাত্র সম্বিত পাত্রর কটাক্ষ, ‘‘কংগ্রেসে মিউজিকাল চেয়ার চলছে।’’ শিবরাজ সিংহ চৌহানের মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস শিক্ষা নিতে রাজি নয়। দেখে অবাক লাগে, এখনও ওয়ার্কিং কমিটি সনিয়া-রাহুলকেই নেতৃত্বে চাইছে।’’ তাঁর দাবি, কংগ্রেসের সাহস নেই। তারা একটা পরিবারের উপরেই ভর করে রয়েছে। কিন্তু ওই পরিবার ইতিমধ্যেই মহিমা হারিয়েছে। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির যুক্তি, ‘‘কংগ্রেস পুনর্গঠন করতে সনিয়া গাঁধীর কাছে ফিরে যাওয়ার বিকল্প সব সময়েই ছিল। যখন পরিস্থিতি কঠিন হয়, তখন মজবুত নেতৃত্ব প্রয়োজন, যা দলকে একজোট রাখবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন