সরকার গড়ার এক মাসের মাথায় অসম মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে একগুচ্ছ নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। নদীদ্বীপ মাজুলিকে আলাদা জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হল। জানানো হল বিভিন্ন পর্যায়ে টেট উত্তীর্ণ আরও ১০ হাজার শিক্ষককে চাকরি দেওয়া হবে। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ৭০০ চিকিৎসক নিয়োগ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
যোরহাট জেলার অধীনে থাকা মাজুলিতে গত বছর পৃথক পুলিশ জেলা তৈরি হয়েছিল। এ বার সর্বানন্দ সোনোয়াল মাজুলি থেকে লড়তে নামার সময় থেকেই মাজুলিবাসী পৃথক জেলার আশায় বুক বেঁধেছিল। সর্বানন্দ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই ঘোষণা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। আজকের ঘোষণার পরে মাজুলি মহকুমা ভারতে প্রথম ও একমাত্র নদীদ্বীপ জেলা হল।
বিশাল ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে মাজুলিবাসীকে নিত্য সরকারি কাজের জন্য যোরহাট পাড়ি দিতে হত। ফি বর্ষায় জল বাড়লেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত মাজুলি। একটা ‘সই’ আনতেও গোটা দিনের অনিশ্চিত সফরে যেতে হত মাজুলিবাসীকে। আদালতে নির্দিষ্ট সময় হাজির হতে হলে আগের দিন রওনা দিয়ে, যোরহাটে রাত কাটাতে হত।
জেলা ঘোষণার পর আজ মাজুলিতে ছিল আনন্দের বন্যা। আউনিআটির সত্রাধিকার পীতাম্বর দেব গোস্বামী, সমাজকর্মী হেমচন্দ্র দোলে বা পরিবেশকর্মী যাদব পায়েংরা একমত, পৃথক জেলা গড়ে মাজুলিবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখলেন সর্বানন্দ। কিন্তু মাজুলির ভূমিক্ষয় রোধে এখনও অনেক পথ বাকি। পীতাম্বরদেব গোস্বামীর মতে, দুঃখের সঙ্গে ঘর করা মাজুলিবাসীর আশীর্বাদ সর্বানন্দর সঙ্গে চিরকাল থাকবে। সরকারি সূত্রে খবর, মাজুলিকে জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিক ভাবে পরিকাঠামো খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মাজুলিতে সব বিভাগের দফতর গড়ে তোলা, ভূমিক্ষয় রোধ করা, হাতির আক্রমণে ফসল নষ্ট হওয়া আটকানো, ঘাট থেকে মাজুলির ভিতরে স্থায়ী সড়ক নির্মাণ সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। মাজুলিবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, যোরহাট থেকে মাজুলির সেতু। সেদিকেও সরকার নজর দেবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
মাজুলির পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী বছর ৩১ মার্চের মধ্যে টেট উত্তীর্ণ আরও ১০ হাজার শিক্ষককে নিযুক্তি দেওয়া হবে। রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব দীর্ঘদিনের। তাই অবিলম্বে সরকারি হাসপাতালগুলিতে নিয়োগ করা হবে ৭০০ জন চিকিৎসক।
রাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্প ও শিল্পীদের অবস্থা উন্নয়নে গড়ে দেওয়া জহ্নু বরুয়া কমিটির রিপোর্ট মেনে মানুষকে বেশি করে হলমুখী করতে রাজ্য সরকার সিনেমার টিকিটে বিনোদন কর ও পরিষেবা করে ব্যাপক ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে প্রতি টিকিটে রাজ্য মোট ৪০ টাকা নিত। তা কমিয়ে সাধারণ হলে ৮ টাকা ও এসি হলে ১২ টাকা করা হচ্ছে। ছোট হল মালিকদের ক্ষেত্রে ভর্তুকিও দেবে সরকার। একই সঙ্গে টিকিট প্রতি এক টাকা করে অতিরিক্ত কর নিয়ে শিল্পী ও কলাকুশলী কল্যাণ তহবিল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বছরে জমা হবে এক কোটি টাকা। ভ্রাম্যমাণ থিয়েটারের জনক অচ্যূত লহকরের স্মৃতি ধরে রাখতে বরপেটায় তাঁর গ্রামে সংগ্রহশালা তৈরি ও অন্য পদক্ষেপ করা হবে। শহীদ কুশল কোঁয়রের স্মৃতিরক্ষায় গোলাঘাটে তাঁর বাড়ি হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে ঘোষণা করে তা মেরামত করা হবে। সংরক্ষিত হবে নগাঁও জেলার কুঠরিতে ভূপেন হাজরিকার আদি বাড়িও।
খনন সংক্রান্ত সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের জন্য প্রতি জেলায় ‘ডিস্ট্রিক্ট মিনারেল ফাউন্ডেশন’ তৈরি হবে। তার চেয়ারম্যান হবেন জেলাশাসক। বিভিন্ন খনি লিজ নেওয়া সংস্থার টাকা থেকে এই তহবিল চালানো হবে। ‘মানব উন্নয়ন রিপোর্ট-২০১৪’ অনুযায়ী রাজ্যের ৭৭ শতাংশ মানুষ সরকারের কাজে খুশি নন। সেই রিপোর্ট উদ্ধৃত করে সর্বানন্দ জানান, রাজ্যকে সুশাসন দিতে একশো দিনের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হচ্ছে। রাজ্যের বাজেট অধিবেশন হবে ১৮ জুলাই থেকে ১২ অগস্ট পর্যন্ত।
এ দিকে, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে পূর্ত ও আবগারি দফতরের মন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের ৩১ কিলোমিটার কাজ বাকি। বন মন্ত্রকের ছাড়পত্র না মেলাতেই বিলম্ব হচ্ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। বৈঠকে কাজিরাঙার গন্ডার হত্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কাজিরাঙায় শিকার রোধে ১১২ জনের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে। বরাক উপত্যাকার রাস্তাঘাটের শোচনীয় অবস্থার জন্য অসম-ত্রিপুরা পথে প্রায় সাড়ে চার হাজার ট্রাক আটকে রয়েছে বলে মেনে নেন মন্ত্রী। বৈদ্য জানান: বরাক-ত্রিপুরা সীমানার ১৩০ মিটার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। কাঠালতলি হয়ে বিকল্প রাস্তাও বর্ষায় বন্ধ। বৃষ্টির জন্য সড়ক মেরামত করা যাচ্ছে না। পূর্ত দফতর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আজও মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার ঘটনাস্থলে আছেন। ঠিকাদাররা কাজ করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে সকলে অসহায়। রাস্তা মেরামতির জন্য পর্যাপ্ত পাথরও আনা যাচ্ছে না।