Narendra Modi

মোদীর রাজ্যে ফের আক্রান্ত হিন্দিভাষীরা, লুঙ্গি পরার ‘অপরাধে’ই কি মার?

রুজির টানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে আসা হিন্দিভাষীদের উপর হামলার ঘটনা যেন রোখা যাচ্ছে না! পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও সোমবার ফের একই ঘটনা ঘটল গুজরাতের বড়োদরায়।

Advertisement

সংবাদসংস্থা

বডোদরা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১১
Share:

—প্রতীকী ছবি

তাঁদের ‘অপরাধ’, তাঁরা লুঙ্গি পরেন। এবং সেই ‘অপরাধে’র জন্যই গুজরাতের স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে আক্রান্ত হলেন বিহারের এক জন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং ছয় মিস্ত্রি।

Advertisement

রুজির টানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে আসা হিন্দিভাষীদের উপর হামলার ঘটনা যেন রোখা যাচ্ছে না! পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও সোমবার ফের একই ঘটনা ঘটল গুজরাতের বড়োদরায়।

পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত সাত জনই বিহারের মধুবনী জেলার বাসিন্দা। বডোদরা পুরসভা এলাকায় সমা শহরে একটি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা।

Advertisement

ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন অভিযুক্তের মধ্যে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম কেয়ুর পারমার। বাকিদের খোঁজ চলছে। যদিও এই হামলার সঙ্গে লুঙ্গি পরার বা হিন্দিভাষীদের প্রতি ঘৃণার কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি পুলিশের।

আরও পড়ুন: অষ্টমীতে এই ভুল করলেন নরেন্দ্র মোদী!

সোমবার সন্ধ্যায় ওই নির্মীয়মান বিল্ডিংয়ের বাইরে লুঙ্গি পরে বসেছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার শত্রুঘ্ন যাদব এবং ছ’জন মিস্ত্রি। হঠাৎ সেখানে দুই সঙ্গীকে নিয়ে উপস্থিত হন এলাকার বাসিন্দা কেয়ুর। শত্রুঘ্ন এবং ওই ছ’জনের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এর পর দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে তা হাতাহাতিতে পরিণত হয়। ধস্তাধস্তিতে সামান্য আঘাত লাগে ওই সাত জনের। এরই মধ্যে পুলিশকে ফোন করেন শত্রুঘ্ন। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হয় পুলিশের টহলদারি ভ্যান। তা দেখে সেখান থেকে চম্পট দেন কেয়ুররা। তবে পালানোর আগে শত্রুঘ্নদের গুজরাত ছেড়ে চলে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়ে যান তিনি। এর পর গোটা ঘটনার অভিযোগ জানাতে সমা থানায় যান শত্রুঘ্নরা। রাতে ফিরে এসে দেখেন, তাঁদের একটি মোটরবাইক-সহ দু’টি প্লাস্টিকের চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: উৎসবের মরশুমে একক জঙ্গির হামলায় চিন্তা বাড়ছে কেন্দ্রের

গোটা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সুরাত থেকে ছুটে আসেন ওই বিল্ডিংয়ের কন্ট্রাক্টর ময়ূর পটেল। তিনি বলেন, “ঠিক কী কারণে হামলা হয়েছে তা বোঝা মুশকিল। ইঞ্জিনিয়ারদের কেয়ুররা জানিয়েছেন, লুঙ্গি পরে থাকলে তাঁদের সমস্যা হবে। এটা ভারী অদ্ভুত!” ময়ূরের দাবি, শুধুমাত্র ওই সাত জনই নন, কেয়ুরদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁর ৩০-৪০ জন নির্মাণকর্মীকেও। ঘটনার সময় ওই নির্মাণকর্মীরা বিল্ডিংয়ের দোতলায় ঘুমোচ্ছিলেন। ময়ূরের কথায়, “মুখ বন্ধ না রাখলে তাঁদের বাইকও জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায় অভিযুক্তরা।”

লুঙ্গি পরার জন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে মানতে নারাজ প্রশাসনের কর্তারা। হামলার কথা স্বাকীর করে নিয়ে সমা থানার ইনস্পেক্টর পি ডি পারমারের দাবি, “অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের উপর ঘৃণাবশত এই হামলা চালানো হয়নি। এর পিছনে আসল কারণ খুঁজে বার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” যদিও পুলিশ কমিশনার অনুপম সিংহ গহলৌত বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওই সাত জনকে লুঙ্গি পরে অশালীন ভাবে বসে থাকার বিষয়ে সতর্ক করছিলেন। তবে তাঁরা কোনও কথায় কান দেননি। সোমবার দু’পক্ষের মধ্যে তা নিয়েই ঝামেলা বাধে। এর পিছনে হিংসার রাজনীতি নেই।”

গুজরাতে হিন্দিভাষীদের উপর হামলার ঘটনা নতুন নয়। হামলার জেরে চলতি মাস থেকেই রাজ্য ছাড়তে শুরু করেছেন জীবিকার টানে গুজরাতে আসা ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দারা। এর আগে ১৪ মাসের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বিহারের এক বাসিন্দাকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারের পরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল গুজরাতে। সবরকণ্ঠা জেলার হিম্মতনগরের কাছে ওই অভিযুক্তের গ্রেফতারির পরেই গুজরাতের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্‌ রাজ্যের হিন্দিভাষীদের উপরে হামলা শুরু হয়। সোমবারের ঘটনার পিছনে ওই কারণ জড়িত রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন