মহা বিকাশ আঘাড়ির নেতা তথা এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া বেদান্ত-ফক্সকন গোষ্ঠীর দেড় লক্ষ কোটি টাকার সেমি কন্ডাক্টর প্রকল্প নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্যে চলে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থামার লক্ষণই নেই। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন শাসক জোট মহা বিকাশ আঘাড়ি যখন এই প্রকল্প রাজ্যের হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমান বিজেপি ও বিক্ষুব্ধ শিবসেনা জোটকে নিশানা করছে, তখন নয়া জোটের তরফে শিল্পমন্ত্রীর দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদী আশ্বাস দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের জন্য ‘আরও বড় এবং ভাল প্রকল্প’ তিনি এনে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আর মোদীর এই ‘আশ্বাস’ নিয়েই এ বারে তীব্র আক্রমণ শানালেন মহা বিকাশ আঘাড়ির নেতা তথা এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। তীব্র ব্যঙ্গের সুরে তিনি বলেন, ‘‘এ যেন একটা শিশুর হাতে বেলুন দেখে কাঁদা আর একটা শিশুকে আরও বড় বেলুন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা!’’ এ নিয়ে আর কোনও কথা বলাই বৃথা বলেও মনে করেন পওয়ার।
বেদান্ত-ফক্সকন গোষ্ঠীর এই সেমি কন্ডাক্টর প্রকল্পটি মহারাষ্ট্রের তালেগাঁওয়ে হওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি পূর্বতন এমভিএ সরকারের প্রধান উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর। সেই প্রকল্প পাশের রাজ্য গুজরাতে যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর দল ভেঙে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া একনাথ শিন্ডে এবং বিজেপির উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকেও কড়া ভাষায় নিশানা করছেন এমভিএ নেতৃত্ব। প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া দেড় লক্ষ কোটির এই বড় মাপের প্রকল্পটি শিন্ডে-দেবেন্দ্ররা নিজেদের গদি বাঁচাতে নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতকে ‘উপহার’ দিয়েছেন বলেও আক্রমণ শানাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, এ বছরই গুজরাতে বিধানসভা ভোট। সে কারণে মোদী-অমিত শাহরা শিন্ডেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের ন্যায্য পাওনা ছিনতাই করেছেন। চাপের মুখে কোণঠাসা শিন্ডে-ফডণবীস শিবির। এরই মধ্যে মহারাষ্ট্রের শিল্পমন্ত্রী সামন্ত দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে মোদীর কাছে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন শিন্ডে। মোদী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, আরও বড় এবং আরও ভাল প্রকল্প মহারাষ্ট্রকে দেওয়া হবে।
পওয়ার এ নিয়ে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, মোদী-অমিত শাহরা গোটা দেশের দখল চান। অথচ নিজেদের রাজ্যের জন্য অন্য রাজ্যের প্রকল্প কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দেখান! প্রকল্পটি গুজরাতে চলে যাওয়ার পরে এ নিয়ে আর কোনও কথাই অর্থহীন বলেও দাবি করেন তিনি। প্রবীণ এনসিপি নেতার বক্তব্য, যে শিল্পমন্ত্রী সামন্ত এখন বলে বেড়াচ্ছেন যে মোদী আশ্বাস দিয়েছেন আরও বড় প্রকল্প পাবে মহারাষ্ট্র, সেই সামন্ত এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে যখন এমভিএ সরকারে ছিলেন, তখনই এই প্রকল্পের মহারাষ্ট্রে আসা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। এর সঙ্গেই বেদান্ত গোষ্ঠীকেও ঘুরিয়ে আক্রমণ করে পওয়ার বলেন, ওরা মহারাষ্ট্রে শিল্প করবে বলে এখন কথা দিলেও তা যে হবেই, তেমন নিশ্চয়তা নেই।
সেমি কন্ডাক্টর প্রকল্প মহারাষ্ট্র ছেড়ে গুজরাতে পাড়ি দেওয়ায় রীতিমতো চাপে মহারাষ্ট্রের বিজেপি ও বিক্ষুব্ধ শিবসেনা জোটের সরকার। বিষয়টিকে ‘মরাঠা-অস্মিতা’য় আঘাত বলে তুলে ধরে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছেন উদ্ধব ও তাঁর পুত্র আদিত্য, কংগ্রেস এবং এনসিপি নেতৃত্ব। তার ফলে চাপ বেড়েছে শিন্ডে সরকারের অন্দরেও। শিবসেনা ত্যাগী বিক্ষুব্ধদের মধ্যেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বলে দাবি বিরোধী শিবিরের। মহারাষ্ট্রকে ‘শিক্ষা দিতে’ এবং বঞ্চিত করতেই মোদী-অমিত শাহ গুজরাত ভোটের আগে ‘চক্রান্ত’ করে এ কাজ করেছেন বলেও দাবি রাজ্যের বিরোধীদের।