অনশন ভেঙে বিয়ে করবেন চানু, লড়বেন ভোটেও

নিয়ম মাফিক হাজিরায় ‘নিয়ম’ ভেঙে বোমা ফাটালেন ইরম শর্মিলা চানু! বিচারককে স্পষ্ট জানালেন, আর অনশন নয়। এ বার লক্ষ্য বিয়ে এবং নির্বাচনে লড়া! ২০০০ সালে মণিপুরের মালোম গ্রামে জঙ্গি সন্দেহে দশ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যার প্রতিবাদে ও আফস্পা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন শুরু করেন চানু। প্রথমবার তিনি গ্রেফতার হন ২০০৬ সালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:১১
Share:

ইরম শর্মিলা চানু

নিয়ম মাফিক হাজিরায় ‘নিয়ম’ ভেঙে বোমা ফাটালেন ইরম শর্মিলা চানু! বিচারককে স্পষ্ট জানালেন, আর অনশন নয়। এ বার লক্ষ্য বিয়ে এবং নির্বাচনে লড়া!

Advertisement

২০০০ সালে মণিপুরের মালোম গ্রামে জঙ্গি সন্দেহে দশ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যার প্রতিবাদে ও আফস্পা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন শুরু করেন চানু। প্রথমবার তিনি গ্রেফতার হন ২০০৬ সালে। গত ন’বছর ধরেই প্রতি ১৫ দিন অন্তর জেল হেফাজতে হাসপাতালে থাকা চানুকে আদালতে আনা হয়। রুটিন জবাবের মধ্যে তাল কেটেছিল একবারই। প্রেম আর পরিবারের চাপ নিয়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করেছিলেন তিনি। দ্রুত অপ্রিয় প্রসঙ্গ চাপা দিয়েছিলেন চানুর অনুগামী ও পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সনাতনি চিত্রনাট্যে আজ এমন ‘ক্লাইম্যাক্স’ থাকবে—তা কেউই আগাম
আঁচ করেননি।

এ দিন সিজেএম আদালতে দাঁড়িয়ে ৪৪ বছরের চানু জানান, অনশন আর নয়। ৯ অগস্ট, পরবর্তী শুনানির শেষে হাসপাতালে ফিরে ফলের রস খেয়ে এতদিনের অনশন শেষ করবেন তিনি। প্রথম বক্তব্যের রেশ না কাটতেই ফের ধাক্কা। জানান, বিয়ে করতে চলেছেন তিনি। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এতদিন অহিংস আন্দোলনের রাস্তায় হেঁটেও তিনি রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে কোনও কিছুই আদায় করতে পারলেন না। এবার তাই অনশন ভেঙে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে লড়বেন। পূর্ব ইম্ফলের খুরাই থেকে প্রার্থী হবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। শর্মিলা বলেন, ‘‘ভোটেও আমার বিষয় একটাই, আফস্পা প্রত্যাহার।’’

Advertisement

শর্মিলাকে সামনে রেখে তাঁর পরিবার ও গড়ে ওঠা সংগঠন ‘শর্মিলা কানবা লুপ’ এই অনশনকে কেন্দ্র করেই টিঁকে রয়েছে। তিনি কোথাও পুরস্কার পেলেও সেই টাকা তিনি অন্য কোথাও দান করতে পারতেন না। সেই সিদ্ধান্তও নিত শর্মিলা কানবা লুপের নেতারা। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে শর্মিলা কতটা সফল হবেন? শর্মিলা এ দিন বলেন, ‘‘আমি যদি নির্বাচনে হারি, মানুষ যদি আমায় গ্রহণ না করেন, ক্ষতি নেই। তবুও আর অনশনের রাস্তায় যাব না। ডেসমন্ডকে বিয়ে করব।’’ আপাতত গোয়ার বাসিন্দা, ব্রিটিশ নাগরিক ডেসমন্ড কুটিনহোকে বিয়ে করতে চান তিনি। দু’বছর আগে ডেসমন্ড তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলে আদালত চত্বরে ও হাসপাতালের সামনে শর্মিলার সমর্থকরা তাঁকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। শর্মিলার পরিবারের বক্তব্য ছিল, আফস্পা-বিরোধী আন্দোলনকে দু্র্বল করতে ও শর্মিলার মনকে বিক্ষিপ্ত করতে এ সব সরকারি চক্রান্ত।

কিন্তু শর্মিলা মনে মনে তৈরি হচ্ছিলেন এক নতুন লড়াইয়ের জন্য। আফস্পার পাশাপাশি এই লড়াই ছিল তাঁর নিজের নামেই গড়ে ওঠা এক ‘বিরুদ্ধ-শক্তি’র বিরুদ্ধে, যার রাশ কখনওই তাঁর হাতে ছিল না। তিনি এদিন তাই এজলাসে দাঁড়িয়ে নিজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। যাতে কেউ বাধা দিতে না পারে। শর্মিলার দাদা সিংহজিৎ আজ বলেন, ‘‘চানু স্বাধীন মহিলা।’’ শর্মিলা কানবা লুপের নেতা বাবলু লোইতংবাম চানুর সিদ্ধান্তকে ‘শকিং’ বলে মন্তব্য করেন। বাবলু বলেন, ‘‘চানু ঠিক কি করতে চাইছেন তা কথা বলে বুঝতে হবে। হয়ত হতাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন