মোদীকে ঘিরেই লাঠালাঠি নয়া ভারতের তর্কে

প্রাক্তন কূটনীতিক-মন্ত্রী, বর্তমানে সাংসদ শশী তারুর এ ভাবেই দুরমুশ করলেন প্রতিপক্ষকে। ‘মিত্রোঁ’ বলে বক্তব্য শুরু করে আজকের ভারতে গোমাংস ভক্ষণের জন্য খুন, সিনেমা হলে হামলা থেকে সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণের ফিরিস্তি প্রত্যাশিত ভাবেই তুলে আনলেন তিনি।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৩
Share:

হাতের পেন্সিল থাকার মতো একটা অধিকারই যা টিকে আছে নতুন ভারতে। তা হল, ভাবাবেগ আহত হওয়া বা ‘অফেন্ডেড’ হওয়ার অধিকার।

Advertisement

প্রাক্তন কূটনীতিক-মন্ত্রী, বর্তমানে সাংসদ শশী তারুর এ ভাবেই দুরমুশ করলেন প্রতিপক্ষকে। ‘মিত্রোঁ’ বলে বক্তব্য শুরু করে আজকের ভারতে গোমাংস ভক্ষণের জন্য খুন, সিনেমা হলে হামলা থেকে সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণের ফিরিস্তি প্রত্যাশিত ভাবেই তুলে আনলেন তিনি।

শনিবার সন্ধ্যায় ক্যালকাটা ক্লাব-দ্য টেলিগ্রাফ ডিবেট-এর আসরে শশীদের প্রতিপক্ষকে কার্যত দেশের শাসক দলের ব্যাটিং লাইনআপ বললে ভুল হয় না। প্রাক্তন সাংসদ সঙ্ঘ পরিবারের তরুণ বিজয়, দিল্লির সাংসদ মীনাক্ষি লেখি বা রাজ্যসভার সদস্য তথা কলমচি স্বপন দাশগুপ্ত রাজনীতিগত ভাবে এক শিবিরেরই লোক। ‘নতুন ভারতে গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলি সঙ্কটে’— বিতর্কসভার প্রতিপাদ্য এই মতের বিরুদ্ধে বলতে উঠে তাঁরা নতুন ভারত বলতে নরেন্দ্র মোদীর জমানাকেই ধরে নিয়েছিলেন। তাই বারবার কংগ্রেসের জমানায় কী হয়েছিল বা বাংলার মতো অবিজেপি রাজ্যে কী ঘটছে, তার নমুনা তুলে আনছিলেন। বিতর্কসভাটি অতএব রাজনৈতিক বাগ্‌যুদ্ধেরই চেহারা নিল।

Advertisement

সবার আগে বলতে উঠেছিলেন, গুজরাতে পাতিদার সংরক্ষণ আন্দোলনের মুখ হার্দিক পটেল। বয়সের নিরিখে নতুন ভারতের সব থেকে কাছের ২৪ বছরের হার্দিককেই সব থেকে বেশি আক্রমণের জন্য বেছে নিলেন মোদীপন্থী বক্তারা। কলকাতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর মুগ্ধ সম্ভ্রমের কথা বলেই তরুণ গুজরাতি সব থেকে খোঁচা খেলেন। মমতার মধ্যে ‘লেডি গাঁধী’কে দেখেছেন হার্দিক। তাতে স্বপন দাশগুপ্তের সরস টিপ্পনী, ‘‘বাংলার কাছে গুজরাতের ঋণ বেড়ে গেল। ন্যানো কারখানা বা সুরাতের সোনার কারখানার অজস্র শ্রমিকের মতো নতুন এক গাঁধীও বাংলাই গুজরাতকে উপহার দিচ্ছে।’’ হার্দিক অবশ্য আগেই গুজরাতের উন্নয়নের ‘মিথ’ ভেঙে, সে-রাজ্যে বেকারত্ব, চাষিদের দুর্দশার কথা বলেছিলেন।

যুক্তি-তক্কো: ক্যালকাটা ক্লাব-দ্য টেলিগ্রাফ আয়োজিত বিতর্কসভার মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে) লোকসভার সদস্য শশী তারুর, রাজ্যসভা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, বিজেপি নেতা তরুণ বিজয়, লোকসভার সদস্য মীনাক্ষী লেখি, চিকিৎসক সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, গুজরাতের পাতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক পটেল, এবিপি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডিডি পুরকায়স্থ এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ঝাঁঝালো ভঙ্গিতে তরুণ বিজয়ের ব্যাখ্যা, ‘‘এ হল স্বভাবগত ঘৃণা। ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’ তো হবেই।’’ অসহিষ্ণুতার অভিযোগের সূত্রে মীনাক্ষি লেখি কখনও জরুরি অবস্থা, কখনও বা তসলিমা নাসরিন প্রসঙ্গ তুললেন। মোদীর নোট-বন্দি নীতি নিয়ে কটাক্ষের জবাবে স্বপন দাশগুপ্ত বর্তমান জমানায় কত বাড়তি লোক করব্যবস্থা বা ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় এসেছেন, বললেন।

বাম আমলে বাংলার মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন অবশ্য স্বৈরাচারের রোগে দিল্লি বা বাংলায় বিশেষ ফারাক দেখেননি। দিল্লির শাসক-শিবিরকে ঠুকে তিনি বললেন, ‘‘ওঁরা সারা ক্ষণ পৌরাণিক ভারতের গৌরবগাথায় মুখর, কী করে আর গণতন্ত্রের মর্ম বুঝবেন! ওঁরাও রাজারাজড়াদের মতোই হবেন।’’ কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের কথায় শশী পাল্টা বিঁধে বললেন, মোদীজির আমলের একনায়কতন্ত্র তখনও ছিল না।

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা সঞ্চালক সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় মনে করিয়েছেন, স্তম্ভ মানে, কিন্তু যেমন-তেমন ধরতাই নয় মজবুত ধারক। গণতন্ত্রের সেই মজবুত ধারকের হাল প্রসঙ্গে দেখা গেল, ক্যালকাটা ক্লাবের জনতা দ্বিধাবিভক্ত। তারুরের বাগ্মিতা হাততালি কু়ড়োলেও হাত তুলে সমর্থনের নিক্তিতে বিতর্ক অমীমাংসিতই থেকে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন