সম্মান: কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সাম্মানিক ডি লিট দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। শনিবার আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের বাতাবরণ হয়ে উঠেছিল মোদীময়। তার ২৪ ঘণ্টা পরে কবি নজরুলের নামাঙ্কিত শিক্ষাপ্রাঙ্গণে এসে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আবেগরুদ্ধ হয়ে এল শেখ হাসিনার কণ্ঠ। কূটনীতি এবং শিষ্টাচারের রেওয়াজ আগাগোড়়া বজায় রেখেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, প্রতিবেশী দেশের ‘বন্ধুতা’ কেমন হতে পারে। বুঝিয়ে দিলেন, রাজনৈতিক দর্শনের চেয়ে মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দুঃসময়ে যাঁরা পাশে দাঁড়়ান, তাঁদের মানুষ কৃতজ্ঞ চিত্তেই মনে রাখেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে খোলা মনেই তাঁরা সহযোগিতায় প্রস্তুত বলে শনিবার মন্তব্য করেছেন হাসিনা। সেই সঙ্গেই তুলেছেন রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘’১১ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আমরা স্থান করে দিয়েছি। আমরা চাই, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সমস্যার সমাধান হোক।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শান্তিনিকেতনের বৈঠকের পর দিন এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতায় কথা বলার আগে তাঁর এই মন্তব্য তাৎপর্যপুর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সমাজসেবা এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সাম্মানিক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। আসানসোলে শনিবার বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাসিনার হাতে ওই সম্মান তুলে দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল অসুস্থতার জন্য আসতে না পারায় বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যাঁর নামে ছ’বছর আগে রাজ্য সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে, সেই নজরুল বাংলাদেশের জাতীয় কবি। ফরিদপুরে কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুজিবের ভাবনায় নজরুল কী ভাবে প্রভাব ফেলেছিলেন, সেই কথা বলতে গিয়েই এ দিন ইন্দিরার বন্ধুত্বের স্মৃতি সামনে এনেছেন মুজিব-কন্যা।
হাসিনার কথায়, ‘‘সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট আমার বাবা, মা-সহ পরিবারকে হত্যা করা হয়। আমি আর আমার বোন রেহানা (আসানসোলে এ দিন উপস্থিত ছিলেন) তথন বিদেশে। আমাদের খোঁজ নিয়েছিলেন ইন্দিরা। আত্মীয়দের পাশে দাঁড়়িয়ে সাহায্য করেছিলেন। ওই সব দিনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’’ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, যুদ্ধে সহায়তা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়়তে ইন্দিরার অকাতর সহযোগিতার কথাও আবেগাপ্লুত স্বরেই স্মরণ করেছেন হাসিনা। ডিগ্রির শংসাপত্র হাতে পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘‘জীবনের সব ক্ষেত্রে মানবতাবোধকে গুরুত্ব দেবেন। নজরুলের চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা আমরা মনে রেখেছি, আপনারাও মনে রাখবেন।’’ অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুও।
কেন্দ্রে যখন বিজেপির সরকার এবং বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ ঘিরে প্রতিনিয়ত বিতর্ক তীব্রতর হচ্ছে, সেই সময়ে হাসিনার এই উচ্চারণ আলাদা মাত্রার দাবি রাখে বৈকি! প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, আমন্ত্রণ-বিতর্কের পরে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন না। ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক-সহ তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা।