শেষের কবিতার শহরে সিঁদুরে মেঘ

শিলংয়ে আটকে পড়েছেন যাঁরা,  যে কোনও ভাবে গুয়াহাটি ফেরার গাড়ি পেতে হন্যে হতে হচ্ছে তাঁদের। অনেকে শিলংয়ের বুকিং বাতিল করে চলে যাচ্ছেন চেরাপুঞ্জি বা অন্যত্র। পুলিশের আশ্বাসেও আস্থা রাখতে পারছেন না গাড়িচালকরা। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এখানকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা বাঙালিরাও। 

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০৪:১৬
Share:

ছবি: পিটিআই

মাথায় উঠেছে রবি-রোমান্টিসিজম, ‘শেষের কবিতা’। শিলংয়ে বাঙালি পর্যটকরা পড়েছেন আতান্তরে। নাগাড়ে রাত-কার্ফু, সেনা টহল। গাড়ি অমিল। যোগাযোগ করা যাচ্ছে না এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপে। শিলংয়ে আটকে পড়েছেন যাঁরা, যে কোনও ভাবে গুয়াহাটি ফেরার গাড়ি পেতে হন্যে হতে হচ্ছে তাঁদের। অনেকে শিলংয়ের বুকিং বাতিল করে চলে যাচ্ছেন চেরাপুঞ্জি বা অন্যত্র। পুলিশের আশ্বাসেও আস্থা রাখতে পারছেন না গাড়িচালকরা। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এখানকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা বাঙালিরাও।

Advertisement

মেঘালয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী মানস চৌধুরীর মতে, নতুন সরকারের অনভিজ্ঞতার ফলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। খাসি বনাম অ-খাসিয়াদের টানাপড়েন চলছে অনেক দিন থেকেই। এ বারের ঘটনায় জনজাতি নেতাদের আধিপত্য কায়েমের স্বার্থও লুকিয়ে। ‘‘খুব সহজে অশান্তি মিটবে বলে মনে হয় না। আগামী দিনে এই ক্ষোভের আঁচ বাঙালিদের গায়েও লাগতে পারে, বললেন মানসবাবু।

‘‘রবীন্দ্রভবনের সামনে বোমা, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দ শুনতে হচ্ছে, মানুষ বেরোতে ভয় পাচ্ছেন— এ কোন শিলং!’’ খেদের সঙ্গে বললেন রিলবংয়ের বাসিন্দা, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ মালবিকা বিশারদ। তাঁর মনে পড়ছে, ১৯৭৯ সালের খাসি সংগঠনগুলির বহিরাগত খেদাও আন্দোলনের কথা। ১৯৯২-এর পুজোয় পেট্রল বোমা মারা হয় বাঙালি পরিবারের উপরে। শুরু হয় অশান্তি, কার্ফু। বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় ১৯৯৬-এও। হাজার হাজার বাঙালি ও নেপালি মেঘালয় ছেড়ে চলে যান। মালবিকা বললেন, ‘‘দু’দশক পরে ফের সিঁদুরে মেঘ দেখা যাচ্ছে। সামান্য ঘটনাকে গণআন্দোলনের চেহারা দেওয়া হচ্ছে। বহিরাগতদের বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতির রং না দেখে কড়া হাতে এ সব দমন করা দরকার।’’

Advertisement

শিলংয়ের গাড়িচালক স্বপন দেব দীর্ঘদিন ধরে বাংলার পর্যটকদের মেঘালয় ঘোরাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৯২, ১৯৯৬ সালের মতো সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আকার দেওয়ার চেষ্টা চলছে এ বারেও। পর্যটন ধাক্কা খেয়েছে। গুয়াহাটির চার জন গাড়িচালককে মারধর করা হয়েছে। আমরা ঝুঁকি নিচ্ছি না।
অনেকে আগাম বুকিং করেছেন। তাঁদের যতটা সম্ভব বাইরে বাইরে ঘুরিয়ে দিচ্ছি।’’

গুয়াহাটির গাড়িচালক সঞ্জীব বরা বললেন, ‘‘বাইরের লোককে ভরসা দিয়ে নিয়ে যাব, মাঝ পথে গাড়ি আটকে দিলে বা পাথর ছুড়লে বিপদ বাড়বে। তাই ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছি।’’ খড়্গপুরের সুরঞ্জনা সরকাররা পরিবারের আট জনে মিলে আটকে পড়েছিলেন শিলংয়ে। ফেরার টিকিট কাটা। গুয়াহাটিতে আসার জন্য হন্যে হয়েও খুঁজেও গাড়ি পাচ্ছিলেন না। শেষে পরিচিত একজন কোনও মতে গাড়ির ব্যবস্থা করেন। শিলংয়ের স্মৃতি মোটেই সুখের হল না তাঁদের।

এর মধ্যেও ‘যা থাকে কপালে’ বলে শিলং যেতে চাওয়া পর্যটকও যে নেই, তা নয়। গুয়াহাটিতে পৌঁছে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য যেমন গত কাল ভেবেছিলেন অশান্ত শিলং এড়িয়ে সোজা চেরাপুঞ্জি চলে যাবেন। পরিস্থিতি একটু ভাল শুনে, গিয়েছেন ‘শেষের কবিতা’-র শহরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন