National news

শিলং হাঙ্গামায় ব্যাপক ধাক্কা পর্যটনে, ষড়যন্ত্রের দাবি কনরাডের

আজ শিলংয়ের অধিকাংশ জায়গায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু সামান্য ঘটনা থেকে কেন এতবড় সংঘর্ষ? মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা সন্দেহ করছেন, এ সবের পিছনে ‘বহিঃশক্তির হাত’ রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ২০:১০
Share:

চলছে কারফিউ। মোতায়েন প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী। ছবি: পিটিআই।

পর্যটন মরশুমে এখন শিলংগামী গাড়ির লাইন পড়ার কথা। ব্যস্ততায় ভরা থাকার কথা পুলিশ বাজার। কিন্তু গত তিনদিনের উত্তপ্ত শিলং থেকে এখন বেরতে পারলে বাঁচেন পর্যটকরা। দোকানপাট বন্ধ। গাড়ি অমিল। ঘোরার উপায় নেই। কলকাতার অনেক পর্যটকই দু’দিন হোটেলবন্দি থেকে হয় গুয়াহাটি ফিরে যাচ্ছেন বা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারলে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। সব মিলিয়ে মার খাচ্ছে পর্যটন ব্যবসা। অবশ্য আজ শিলংয়ের অধিকাংশ জায়গায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু সামান্য ঘটনা থেকে কেন এতবড় সংঘর্ষ? মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা সন্দেহ করছেন, এ সবের পিছনে ‘বহিঃশক্তির হাত’ রয়েছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত কি থেকে হয়েছে- তা নিয়ে পুলিশ চার দিন পরেও নিশ্চিত নয়। একটি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে মটফ্রান এলাকায় পাঞ্জাবি লেনে কল থেকে জল নেওয়া নিয়ে স্থানীয় হিন্দিভাষী মহিলাদের সঙ্গে এক বাসচালকের ছেলেদের ঝগড়া-মারধর থেকেই এই ঘটনা। অন্য সূত্রের খবর, পাঞ্জাবি লেনে এক খাসি বাসচালক হিন্দিভাষী মহিলাকে ধাক্কা মারায় ঝামেলার সূত্রপাত। আবার ঘটনার পিছনে ইভ টিজিংয়ের সূত্রও জোড়া হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর ফ্ল্যাগ মার্চের পরেও পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হয়নি। হরিজন কলোনি থেকে পালানো অন্তত ৩০০ মহিলা ও শিশুকে সেনাবাহিনীর শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত কার্ফু শিথিল করা হলেও সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে সান্ধ্য আইন বজায় থাকছে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত কার্ফু থাকবে গোটা শহরে। গত রাতেও বড় বাজার এলাকায় পুলিশ ও আধা সেনার সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের হাতাহাতি হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে। সেনাবাহিনীর ১০১ এরিয়ার জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস আহুজা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন। ঘুরে দেখেন আশ্রয় শিবির।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘ওরা জিতে ফিরলে হাত কেটে নেবে বলেছিল’

এই তিনদিনে শিলংয়ের হোটেলগুলির ব্যবসা খুবই মার খেয়েছে। দলে দলে পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন। অবশ্য আজ দুপুর থেকে ফের পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে শিলংয়ে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস সাংমা জানান, আরও দু’দিন ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পেট্রল বোমা আটকাতে বন্ধ রয়েছে খোলা বাজারে বা বোতলে তেল বিক্রি।

মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা আজ বলেন, যে ভাবে পাঞ্জাবি লেনের ঘটনাকে পরে বিরাট সংঘর্ষের চেহারা দেওয়া হল, সাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা হল ও গুজব ছড়ানো হত- তা থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে এর পিছনে তৃতীয় পক্ষ জড়িত। স্থানীয় সংগঠনগুলি, বিভিন্ন এলাকার মাথাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে সকলেই জানিয়েছে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ শুরুর ঘটনায় তাদের হাত নেই। বাইরের প্ররোচণাতেই ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, সংঘর্ষস্থলে তল্লাশি চালিয়ে দামি মদ, নগদ টাকা মিলেছে। বোঝা যাচ্ছে যারা পাথর ছুঁড়ছিল তাদের পিছন থেকে মদত দেওয়া হয়েছে।

হরিজন কলোনি ও পাঞ্জাবি লেনের পুরুষরা এখনও বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। পুলিশ গলিগুলির মুখ পাহারা দিচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে হরিজন কলোনি ও পাঞ্জাবি লেনের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরাতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের বৈঠকে ডাকেন। বিকল্প স্থানের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। স্থানীয় বিধায়ক অ্যাডেলবার্ট নোংগ্রুম জানান, ঘিঞ্জি বাজার এলাকায় অতবড় বসতি না রেখে তা সরিয়ে নেওয়াই ভাল। কিন্তু সরকার কোনও সাম্প্রদায়িক টানপড়েন চাইছে না। তাই সব পক্ষের মত নিয়েই সিদ্ধান্ত হবে। পিডিএফ চেয়ারম্যান পি এন সিয়েম বলেন, শুধুমাত্র পুরসভার সাফাই কর্মীদেরই সুইপার্স কলোনিতে থাকার কথা। ডিজিপি এস বি সিংহ জানান, কেন্দ্র আরও চার কোম্পানি সিআরপি ও ২ কোম্পানি ইন্দো তিব্বত সীমান্ত পুলিশ পাঠাচ্ছে। আবাসিক ও বাণিজ্য এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষায় ও ভয় কাটাতে পর্যপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

এ দিকে শিলংয়ের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে দিল্লির রাজৌরি গার্ডেনের শিখ বিধায়ক মনজিন্দর সিংহ সিরসা আজ শিলং ঘুরে দেখেন। তিনি রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শিখদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। মোবাইলে ছড়িয়ে পড়া উড়ো খবরে গুরুত্ব দিতে মানা করে সোশ্যাল মিডিয়াতেও আবেদন রাখেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন