মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে উদ্ধবের দাবিতে প্যাঁচে বিজেপি

নরেন্দ্র মোদীর দলের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে এগিয়ে থাকতে মোক্ষম চাল দিলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে নিজেকেই বিজেপি-শিবসেনা জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরলেন বালাসাহেব পুত্র। দু’দলের চূড়ান্ত আসন সমঝোতার আগে বিজেপির উদ্দেশে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, মহারাষ্ট্রে তিনিই ‘বস’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

নরেন্দ্র মোদীর দলের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে এগিয়ে থাকতে মোক্ষম চাল দিলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে নিজেকেই বিজেপি-শিবসেনা জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরলেন বালাসাহেব পুত্র। দু’দলের চূড়ান্ত আসন সমঝোতার আগে বিজেপির উদ্দেশে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, মহারাষ্ট্রে তিনিই ‘বস’। একই সঙ্গে উদ্ধবের হুঁশিয়ারি, আসন বণ্টন নিয়ে বেশি লোভ করলে বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার বিচ্ছেদও হতে পারে।

Advertisement

উদ্ধবের এই কৌশলে বেশ বিপাকে বিজেপি। যা সামাল দিতে আসরে নেমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও মহারাষ্ট্রের নেতা প্রকাশ জাভড়েকরকেও আজ বলতে হয়েছে, “শিবসেনা আমাদের পুরনো শরিক। আমরা নতুন করে সমঝোতায় বসব তাদের সঙ্গে।”

মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের আগে আসন বণ্টন প্রশ্নে শাসক কংগ্রেস ও এনসিপি জোটের মতোই অস্বস্তিতে প্রধান বিরোধী জোটও। বিজেপি-শিবসেনা জোটে অস্বস্তির পিছনে মূল কারণ দু’টি। এক, গোপীনাথ মুন্ডের মৃত্যুর পর বিজেপি-শিবসেনা জোটে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সেটি ভোটের পর ঠিক করতে চান নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু উদ্ধব চান, ভোটের আগে তাঁর নামই জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা হোক। দুই, গত বিধানসভা ও লোকসভার ফলাফলের ভিত্তিতে বিজেপি আরও বেশি আসনে লড়তে চায়। উদ্ধব চান, গত বিধানসভার মতোই সিংহভাগ আসনে লড়বে শিবসেনা।

Advertisement

এই দর কষাকষির মধ্যেই উদ্ধব আজ দাবি করেন, তিনি কোনও পদের পিছনে দৌড়চ্ছেন না। কিন্তু মানুষ ভরসা রাখলে তিনি নিরাশ করবেন না। বকলমে নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই তুলে ধরে উদ্ধবের যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনে যেমন নরেন্দ্র মোদীর মতো একটি মুখ ছিল, এ বারে মহারাষ্ট্র বিধানসভাতেও তেমন একটা মুখ দরকার।

লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে ভাল ফল করার পর থেকেই বিজেপি নেতৃত্বের পরিকল্পনা ছিল, গোপীনাথ মুন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরে ভোটে যাবে দল। মুন্ডের নাম নিয়ে আপত্তি উঠলে নিতিন গডকড়ীর নামও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মুন্ডের অকালমৃত্যু অনেক হিসেব বদলে দিয়েছে। গডকড়ী এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ফলে এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্রে বিজেপির তেমন কোনও মুখ নেই। আবার তারা উদ্ধবকেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরতে চায় না। এই অবস্থায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের বিষয়টি ভোটের ফল ঘোষণা পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে। কিন্তু বিজেপির সেই অঙ্কে জল ঢেলে দিয়েছেন উদ্ধব।

মহারাষ্ট্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনা ১৬০টি আসনে লড়াই করে জিতেছিল ৪৪টি। আর বিজেপি ১১৯টি আসনে লড়ে জিতেছিল ৪৬টিতে। বিরোধী দলনেতাও হন বিজেপিরই। পাশাপাশি গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৩টিতে জিতলেও শিবসেনা জিতেছে ১৮টিতে। এই ফলকে সামনে রেখেই বিজেপি এক দিকে যেমন ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদারের বিষয়টি পিছিয়ে দিতে চেয়েছে, তেমনই আরও বেশি আসনে লড়া নিয়েও দর কষাকষি শুরু করে দিয়েছে।

কিন্তু মহারাষ্ট্রে বিজেপির এই ‘দাদাগিরি’ মানতে নারাজ উদ্ধব। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে অনেক সময়ই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পারছেন, এক দিকে তাঁর ভাই রাজ ঠাকরে তলে তলে মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তাঁকে চাপে ফেলছেন। পাশাপাশি লোকসভায় ভাল ফল করে বিজেপিও এখন শরিক দলগুলিকে কোণঠাসা করতে সক্রিয়। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন উদ্ধবের অস্তিত্ব প্রমাণের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে আজ তিনি বলেন, “আমি বালাসাহেবের ছেলে। কোনও দায়িত্ব নিতে পিছপা হই না। আর বিজেপির ভুলে গেলে চলবে না, লোকসভায় তাদের ভাল ফলের পিছনে শিবসেনারও অনেক অবদান আছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর হুঁশিয়ারি, “বিজেপি অতি লোভ করলে বিচ্ছেদও হতে পারে।”

বিজেপি নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন, শিবসেনাকে ছাড়া মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা দখল কঠিন। তা ছাড়া, সাম্প্রতিক ক’টি উপনির্বাচনে খারাপ ফলের পর মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা দখল এখন মোদী ও অমিত শাহের কাছে সম্মানের প্রশ্ন। ভোটের মুখে বিজেপির এই দুর্বল জায়গায় ঘা দিয়েই স্নায়ুযুদ্ধে নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইলেন উদ্ধব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন