রাস্তায় দাঁড়িয়ে খুচরো বিলি ব্যবসায়ীদের

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা রয়েছে, টাকা আছে নিজের পকেটেও। তবু কেনাকাটার সুযোগ নেই। খুচরো সঙ্কটে মানুষ নাজেহাল। ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা বদল কি এটিএম থেকে টাকা তোলা, সব ক্ষেত্রেই শুধু ২ হাজার টাকার নোট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৩
Share:

খুচরো টাকা বিতরণ। মঙ্গলবার শিলচরের রাজপথে। — নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা রয়েছে, টাকা আছে নিজের পকেটেও। তবু কেনাকাটার সুযোগ নেই। খুচরো সঙ্কটে মানুষ নাজেহাল। ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা বদল কি এটিএম থেকে টাকা তোলা, সব ক্ষেত্রেই শুধু ২ হাজার টাকার নোট। এই অবস্থা থেকে মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে এগিয়ে এলেন শিলচর গোপালগঞ্জের একদল ব্যবসায়ী। নিজেদের উদ্যোগে খুলে বসলেন এক্সচেঞ্জ কাউন্টার।

Advertisement

১০০, ৫০ টাকার নোট একসঙ্গে করে মানুষের পাশে দাঁড়ান তাঁরা। দু’দিনে ১ হাজারের বেশি মানুষ ২ হাজার টাকার নোট খুচরো করে নিয়েছেন। তাঁরা জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ১৩ লক্ষ টাকার বিনিময় হয়। আজ ৯ লক্ষ টাকা। আরও দু’দিন একই জায়গায় কাউন্টার চালাবেন তাঁরা। তৃতীয় দিন যাবেন মাসিমপুরে। সেনা-বিএসএফ জওয়ানদের মধ্যে নোট বিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন প্রমোদ শর্মা, শান্তি শেখোয়ানি, রাজকুমার বৈদ। প্রমোদবাবু জানান, ২ হাজার টাকার নোট হাতে অনেককে বাজারে হন্যে হয়ে ঘুরতে দেখে শুক্রবার তাঁরা ১৪-১৫ জন ব্যবসায়ী মিলে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের হাতে থাকা সমস্ত ১০০ টাকার নোট খুচরো হিসেবে বিনিময় করবেন। সঙ্গে সঙ্গে ৬-৭ লক্ষ টাকার খুচরো নিয়ে কাউন্টার খুলে দেন। দিলীপ কুমার, ললিত বোথরা বেরিয়ে পড়েন প্রশাসনিক অনুমতির জন্য। জেলা উন্নয়ন কমিশনার, পুলিশ সুপার-সহ সবাই এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ২ হাজার টাকার খুচরো নেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। আবীর পাল, সুরেশ সান্ড, ধীরাজ চোপড়া যাঁরাই কাউন্টারে ছিলেন প্রবীণরা তাঁদের মাথা ছুঁয়ে আশীর্বাদ করে যান। বাজার করতে আসা লোকজনের মুখে একটা কথাই শোনা যায়— ‘বাঁচা গেল।’

Advertisement

প্রকৃতই বিরাট মুশকিল থেকে বেঁচে যান এক যাত্রী। তিনি শিলং যাওয়ার টিকিট কাটেন ৫৫০ টাকায়। পকেটে শুধু কয়েকটি ২ হাজার টাকার নোট। ট্রাভেল এজেন্সিতে খুচরো নেই। আবার এখন টিকিট না কাটলে আজ আর যাওয়াও হবে না। তিনি ২ হাজার টাকার নোট জমা দিয়ে টিকিট বুক করে বেরিয়ে পড়েন খুচরোর সন্ধানে। কিন্তু কে দেবেন খুচরো তাঁকে! অপ্রয়োজনেই ৫০০ টাকার জিনিস কিনতে চান, তবু কেউ রাজি হলেন না। খুঁজতে খুঁজতে সার্কিট হাউস রোড থেকে নাজিরপট্টি হয়ে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলে যান। সেখানে মানুষের লাইন দেখে উঁকিঝুঁকি করে দেখেন, খুচরো দেওয়া হচ্ছে। দাঁড়িয়ে পড়েন লাইনে। ২০টি ১০০ টাকার নোট যখন হাতে পেলেন, তাঁর চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু করে। সবাই বিস্মিত, কী হল! তিনি বললেন, ‘‘এ আমার আনন্দাশ্রু। কত সময় ধরে যে খুচরো খুঁজছিলাম!’’

খুচরোর দাতা-গ্রহীতাদের এমন নানা প্রতিক্রিয়া দেখে অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও ১০০-৫০ টাকার বান্ডিল জমা করেন কাউন্টারে। প্রমোদবাবু জানান, অন্তত ৫০ জন ব্যবসায়ী এসে খুচরো টাকা দিয়ে গেলেন। খুচরো দিয়ে সাহায্য করেছে এক শপিং মলও। তবে তাঁদের কাছ থেকে হিসেব করে ২ হাজার টাকার নোট দিয়ে ১০০-৫০ টাকা আনতে হয়েছে। ব্যবসায়ীরা অবশ্য পরে কাউন্টার থেকে বড় নোট সংগ্রহ করেছেন।

কাউন্টারে বসে দু’দিনে বেশ মজার অভিজ্ঞতাও অর্জন হয় তাঁদের। গোপালগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বললেন, অনেকেই ৫০০ বা ১ হাজার টাকা বদলাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। আবার কেউ কেউ কমিশনের ভয়ে নোট বিনিময়ে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই আগে কমিশনের হার জানতে চান। আজ সকালে এক যুবক তির-জুয়ার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ভেবে নিজের ভাগ্যটা যাচাই করতে চাইছিলেন। ধমক খেয়ে ফিরতে হয় তাকে। এক জন আবার খুচরো বিনিময়ের লাইসেন্স দেখতে চাইলেন।

দিলীপ কুমার জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্তাদের কাছ থেকে অনুমতি সংগ্রহের পর আজ তাঁরা আয়কর দফতরকেও লিখিত ভাবে জানিয়ে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের কথায়, ৫০০ বা ১ হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ায় দোকানদারদের কাছে ১০০-৫০ টাকার নোটই বেশি আসছে। খুচরো ব্যবসায়ীদের পক্ষে যে কোনও সময় ছোট নোট দিয়ে দেওয়া মুশকিল। কিন্তু পাইকারি দোকানদারকে পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার আগে তাঁরা সমস্ত সে টাকা বিনিময় করতে পারেন। আবার পাইকারি দোকানদারদেরও ব্যাঙ্ক চালান তৈরির আগে হাতে থাকা সমস্ত খুচরো বিনিময়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও কাকে ডেকে কে খুচরো দেবেন, সে এক সমস্যা। তাঁরা জোট বেঁধে কাউন্টার খোলায় এগিয়ে আসছেন অন্যরাও।

প্রমোদ শর্মা আজ আগাম জানিয়ে দেন, আগামী ২ দিন গোপালগঞ্জে সকাল ১১টা থেকে দু’ঘণ্টা তাঁদের কাউন্টার খোলা থাকবে। ওই সময়ে যারাই লাইনে দাঁড়াবেন, কাউকে যেন ফিরতে না হয়, সে ব্যবস্থা তাঁরা করছেন। তাঁর অনুমান, সঙ্কট অনেকটাই কেটে গিয়েছে। দু’দিনের খুচরো সংগ্রহের তুলনা থেকে তা ধরা পড়ে। তাঁরা আশা করছেন, আরও দুইদিন তাঁদের কাউন্টার খোলা থাকলে অবস্থার অনেকটা উন্নতি হবে। এর মধ্যে ৫০০ টাকার নোট ব্যাঙ্কে চলে এলে পুরোমাত্রায় স্বস্তি পাবেন মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন