বাংলাকে পথ দেখিয়ে কংগ্রেস করুণার সঙ্গী

রাজ্য কমিটি-পলিটব্যুরো-হাইকম্যান্ড জটে আটকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য এখনও অপেক্ষা করে রয়েছে বাংলার জোট। নিচুতলার বাম-কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে জোটের আবহ তৈরি হয়ে গেলেও উপর তলায় যুক্তির জামা পরানোর কাজটা শেষ হয়নি!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৫৭
Share:

কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে ডিএমকে প্রধান করুণানিধি। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

রাজ্য কমিটি-পলিটব্যুরো-হাইকম্যান্ড জটে আটকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য এখনও অপেক্ষা করে রয়েছে বাংলার জোট। নিচুতলার বাম-কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে জোটের আবহ তৈরি হয়ে গেলেও উপর তলায় যুক্তির জামা পরানোর কাজটা শেষ হয়নি! কিন্তু দক্ষিণে সেই ঝঞ্ঝাট নেই। সেখানে বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি ঠেকাতে কংগ্রেস-ডিএমকে আজ শুধু জোটের ঘোষণা করে দিল তা-ই নয়, জয়ললিতাকে হারাতে মহাজোট গড়ারও ডাক দিল দু’দল। এমনকী রাজ্যের বাম দলগুলিকেও সেই জোটে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিল কংগ্রেস।

Advertisement

বিহারের মতো এ ক্ষেত্রেও রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদকে দূত হিসেবে চেন্নাই পাঠিয়েছিলেন সনিয়া-রাহুল গাঁধী। আজ সকালে চেন্নাইয়ের গোপালপুরমে ডিএমকে প্রধান করুণানিধির বাড়িতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন গুলাম নবি। তার পর করুণা-পুত্র এম কে স্ট্যালিন এবং আজাদ জানিয়ে দেন, বিধানসভা ভোটে পারস্পরিক আসন সমঝোতা করেই লড়বে দু’দল। আজাদের কথায়, ‘‘করুণানিধি তথা ডিএমকে কংগ্রেসের বহু দিনের নির্ভরযোগ্য বন্ধু। জোটের নেতৃত্ব দেবেন তিনিই।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দু’দলের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে

এখনও চূড়ান্ত আলোচনা না হলেও সেটা কোনও সমস্যা নয়। কারণ, মূল লক্ষ্য তামিলনাড়ুতে জয়ললিতার দলকে হারানো। তাই বন্ধুত্বপূর্ণ আবহে আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে আলোচনার পাশাপাশি এও চেষ্টা হবে যাতে জোটে আরও আঞ্চলিক দলকে সামিল করে তা মহাজোটে পরিণত করা যায়।’’

Advertisement

তামিলনাড়ুতে এই জোট অবশ্য ভবিতব্যই ছিল। ২০০৪ থেকে গত লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত সবক’টি নির্বাচন জোটবদ্ধ ভাবেই লড়েছে কংগ্রেস-ডিএমকে। কিন্তু স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে করুণানিধি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর তাতে তাঁর দলের চূড়ান্ত ক্ষতি হয়। তামিলনাড়ুর ৩৯টি লোকসভা আসনের সব কটাতেই হারে ডিএমকে! তাদের ভোটের হার কমে দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে! বিপরীতে জয়ললিতা পান প্রায় চল্লিশ শতাংশ ভোট ও ৩৭টি আসন। ঠিক যে ভাবে বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সুযোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে ৩৪টি আসন জিতেছিল তৃণমূল। করুণানিধির কাছে এখন স্পষ্ট, বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি না ঠেকাতে পারলে আরও বিপাকে পড়বে তাঁর দল। চতুর্মুখী লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে ফের হইহই করে জিতে যাবেন জয়ললিতা। আবার জোটের পথে না হাঁটলে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কংগ্রেসেরও। সে দিক থেকে বাংলা ও তামিলনাড়ুর রাজনীতির বিশেষ ফারাক নেই। তাই দেরি করেননি করুণানিধি ও রাহুল।

প্রশ্ন হল, তামিলনাড়ুতে যা সম্ভব হল, তা বাংলায় এখনও হল না কেন?

সর্বভারতীয় কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদক আজ বলেন, ‘‘বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট যথাযথ আকার পেতে সময় লাগছে ঠিকই। কিন্তু ঘটনা হল, বাংলায় এই জোটটাও ভবিতব্য।’’ ওই নেতার ব্যাখ্যা, প্রথমত, কংগ্রেস কোনও ভাবেই শাসক তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে চাইছে না। দুই, বিরোধী দলগুলির মধ্যে বিজেপির সঙ্গে কেউ হাত মেলাবে না। তা হলে বাকি রইল কে? কংগ্রেস ও বামেরা। এবং দুই দলের কাছেই পরিষ্কার যে বিরোধী ভোটের বিভাজন না রুখলে দু’পক্ষেরই সর্বনাশ অনিবার্য। তিনি আরও বলেন, ‘‘তা ছাড়া জোট না হলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে পশ্চিমবঙ্গেরও। কেন না রাজ্যে মজবুত বিরোধী না থাকলে তৃণমূলের দাপট ও অত্যাচার আরও বাড়বে। আর তার দায় প্রকারান্তরে পড়বে কংগ্রেস, বামেদের উপরে।

এআইসিসি-র ওই শীর্ষ নেতার বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট হলেও শিলিগুড়ি মডেল কিন্তু চলবে না। রীতি মতো আসন ধরে ধরে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। কারণ, কোনও আসনেই বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই করার মতো বিলাসিতা দেখাতে পারবে না কেউই। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোর বৈঠকের পরেই বাংলার বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’ সম্ভবত মার্চের প্রথম সপ্তাহে ভোটের দিনক্ষণ আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তার আগেই জোট-ভাগ্য চূড়ান্ত হবে বলে আশা ওই নেতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন