সালটা ২০১২। বালসাহেব ঠাকরের শেষযাত্রার সময়ে মুম্বই কার্যত অচল হয়ে গিয়েছিল। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন মহারাষ্ট্রের পালঘরের বাসিন্দা তরুণী শাহিন ধাড়া। তাঁর সেই পোস্ট লাইক করেন বন্ধু রেণু শ্রীনিবাসন। শিবসেনার চাপে ওই দুই তরুণীকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা ব্যবহার করা হয়েছিল। যে ধারা আজ খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
দিল্লিতে বসে খবরটি পড়েছিলেন ২১ বছরের আর এক তরুণী। তখন সবে আইন পড়ার কথা ভাবতে শুরু করেছেন শ্রেয়া সিঙ্ঘল। ঘটনাটির কথা পড়ে শ্রেয়ার মনে হয়েছিল, এ বার কেউই আর নিরাপদ নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মত জানালে যে কেউ পুলিশি ঝামেলায় পড়তে পারে। আর সেটা আটকাতেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনা আসে শ্রেয়ার মাথায়। শ্রেয়ার মামলার ফলেই আজ খারিজ হয়েছে বহু বিতর্কিত ৬৬এ ধারা।
শ্রেয়ার বাড়িতে আইনচর্চা নতুন নয়। তাঁর মা মোনালি সিঙ্ঘল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আজ রায়ের পরে শ্রেয়া বলেছেন, “সেই রাতে খাবার টেবিলে বসে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আইনজীবীদের ব্যাপার তো, তাই মায়ের সঙ্গে আমার তর্কও হয়। শেষে মা-ই বলল, বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু করা উচিত।”
তার পরেই মায়ের বন্ধু আইনজীবীদের সাহায্যে সুপ্রিম কোর্টে মামলা শ্রেয়ার। মাকেই কৌঁসুলি করেননি কেন? শ্রেয়ার সাফ জবাব, “ব্যাপারটাকে পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইনি আমি।” কোর্টে শ্রেয়ার হয়ে সওয়াল করেন প্রাক্তন ও বর্তমান দুই অ্যাটর্নি জেনারেল, সোলি সোরাবজি ও মুকুল রোহতগি।
আজ মামলার রায় তাঁর পক্ষে যাওয়ায় শ্রেয়া উচ্ছ্বসিত তো বটেই। ভরে গিয়েছে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিও। এখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ল’ নিয়ে পড়াছেন। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার সময়ে তিনি দেখেছেন, কী ভাবে আবেদন লিখতে দিনের পর দিন সময় লাগে। কত গবেষণার পরে আর্জি তৈরি করেন কৌঁসুলিরা। সওয়ালের প্রস্তুতিই বা কী ভাবে নেওয়া হয়। রায়ের জন্য অপেক্ষাই বা কেমন। তাঁর মতে, “ভারতের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাম অনেক।” আইনের পাঠ শেষ করার আগেই জিতলেন এক গুরুত্বপূর্ণ আইনি। মনে করছেন, এই জয় তাঁকে অনেকটা এগিয়ে দেবে।