উপজাতি রক্তে কাস্তে কোষের মোকাবিলায় উদ্যোগী কেন্দ্র-রাজ্য

এ হল রক্তের লোহিত কণিকার বিশেষ একটা রোগ, যার জেরে রোগী প্রধানত রক্তাল্পতার শিকার হন। গোলাকার লোহিত রক্ত কণিকা ধান কাটার কাস্তের মতো বিকৃত হয়ে যায়। তার পরে রক্ত চলাচলেও তৈরি হয় বাধা। চিকিৎসা পরিভাষায় এর নাম ‘সিকল সেল ডিজিজ’। উত্তর-পূর্বাঞ্চল-সহ সারা দেশের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই রোগ ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের|

Advertisement

বাপি রায়চৌধুরী

আগরতলা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:২৪
Share:

এ হল রক্তের লোহিত কণিকার বিশেষ একটা রোগ, যার জেরে রোগী প্রধানত রক্তাল্পতার শিকার হন। গোলাকার লোহিত রক্ত কণিকা ধান কাটার কাস্তের মতো বিকৃত হয়ে যায়। তার পরে রক্ত চলাচলেও তৈরি হয় বাধা। চিকিৎসা পরিভাষায় এর নাম ‘সিকল সেল ডিজিজ’। উত্তর-পূর্বাঞ্চল-সহ সারা দেশের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই রোগ ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের| এ জন্য দেশের উপজাতি প্রধান এলাকার স্বাস্থ্য কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, সব উপজাতি পরিবারের শিশুদের বিশেষ রক্ত পরীক্ষা, জেলায় জেলায় কর্মশালার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রকের সচিব হৃষিকেশ পাণ্ডা সম্প্রতি চিঠি লিখে দেশের সব রাজ্যের উপজাতি কল্যাণ দফতরের সচিবদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এখনও পর্যন্ত এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার কোন রিপোর্ট নেই। কিন্তু উপজাতি অংশের মানুষরাই যেহেতু এর আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, সেই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার এই সব অঞ্চলেও জরুরি পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি| তাঁর বক্তব্য, সিকল সেল রোগের সঙ্গে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের যোগ রয়েছে| সিকল সেল-এ আক্রান্ত রোগী সহজেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন| সারা দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের ৫০ শতাংশই উপজাতি অংশের মানুষ| আর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রতি বছর ম্যালেরিয়া যে বহু মানুষের প্রাণ নেয় তা স্বীকৃত সত্য। তাই সিকল সেলকে ঠেকানোর পাশাপাশি ম্যালেরিয়া ঠেকানোর ব্যাপারেও জোর দিচ্ছে কেন্দ্র।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর তথ্যে জানা গিয়েছে, সিকল সেল রোগটি বংশগত ভাবে ছড়ায়| এ থেকে মস্তিষ্কের রোগ, বুকে ব্যাথা, রেচন ক্রিয়ায় বাধা, অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আইসিএমআর-এর এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, সিকল সেল রোগীদের অধিকাংশই খুবই দরিদ্র। তাঁরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতেন | এও দেখা গেছে, মা-বাবার মধ্যে কোনও একজন এতে আক্রান্ত হলে তা তাঁদের সন্তানদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিপুরা স্বাস্থ্য দফতরের সহ-অধিকর্তা দিলীপ কুমার রায়ের মতে, উপজাতি এলাকাগুলিতে রোগটি বেশি ছড়াকত পারে, কারণ বহু উপজাতি গোষ্ঠীর একই পরিবারের মধ্যে বিয়ে করার প্রবণতা রয়েছে।

Advertisement

সিকল সেল ও ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ঠেকাতে মহাকাশ গবেষণা দফতরের অধীন ত্রিপুরা স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার উপগ্রহ ভিত্তিক ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থার (জিআইএস) মাধ্যমে পাহাড়ি ও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার কোথায় কোথায় জলাশয় গড়ে তোলা যায় তা চিহ্নিত করতে শুরু করেছে। জলাশয় কেন? প্রতিষ্ঠানের মুখ্য সায়েন্টিফিক অফিসার নটরাজ দত্ত বলেন, ‘‘পাহাড় ও লুঙ্গা (দুই পাহাড়ের অন্তর্বর্তী ঢাল) এলাকায় জলাশয় করেলে উপজাতি গোষ্ঠীর লোকজন মাছ চাষ করে পরিবারের পুষ্টির জোগান ও মাছ বিক্রি করে আর্থিক অবস্থা ভালো রাখতে পারবেন| মাছ যেহেতু মশার লার্ভা খায়, সেই কারণে ওই সব এলাকায় মশার উপদ্রব এবং তা থেকে ম্যলেরিয়ার আশঙ্কা কমে যাবে|

রাজ্য উপজাতি কল্যাণ দফতরের সচিব এল এইচ ডার্লং জানান, ‘‘স্বাস্থ্য, উপজাতি কল্যাণ ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ স্বাস্থ্য-কর্মীর দল গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে| এঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে রক্ত পরীক্ষা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন