জামিন পাওয়ার পর করিমগঞ্জে সিদ্দেক আহমেদ। বৃহস্পতিবার।— নিজস্ব চিত্র।
জামিন পেয়েই ‘অসুস্থ’ সিদ্দেক আহমেদ সুস্থ হয়ে গেলেন!
আজ শিলচর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ছাড়া পেয়ে দুপুরে সোজা চলে আসেন করিমগঞ্জের অতিরিক্ত আবর্ত ভবনে। সঙ্গে ছিল বিশাল গাড়ির কনভয়। কোনও রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এসেছেন এটা বুঝে ওঠার সাধ্যি কারও ছিল না। আবর্ত ভবনে এসেই উকিলদের সঙ্গে নিয়ে মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দক্ষিণ করিমগঞ্জের তিনবারের বিধায়ক নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তা উচ্চ আদালতে প্রমাণ করে তবেই তিনি স্বস্তি পাবেন। এক মাস দশ দিনের মধ্যে সাত বার আদালত বিভিন্ন ভাবে তাঁকে সমন পাঠিয়েছে। করিমগঞ্জের এসিজেএমের আদালতের বিরুদ্ধে চার বার গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাঁকে। ফলে করিমগঞ্জের নিম্ন আদালত যখন তাঁকে জেল হাজতে পাঠায়, সে সময় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি। কিন্তু তাঁর দুই ভাইকেও জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়ায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে তিনি ছিলেন। তিনি বলেন, করিমগঞ্জ জেল হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
সিদ্দেকের অভিযোগ, ‘‘বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত হয়েছে। তিনবার আমাকে খুন করার জন্য গুলি চালানো হয়েছে। হত্যা মামলায় আমাকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী ধর্ষণের মামলায়ও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে।’’ দীর্ঘ দিনের রাজনীতিক এই সব দেখে শেষ পর্যন্ত বুঝেছেন, ‘‘পলিটিক্স ইজ এ ডার্টি গেম।’’ রেজাউল করিমকে মারধরের অভিযোগও যে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট, সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত। বিধায়ক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রেজাউল ডিমাপুর থেকে এসে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁর সমর্থক হিসেবে থাকতে চেয়েছিল সে। কিন্তু একদিন একটি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলি এনে আত্মরক্ষার জন্য তাঁকে (বিধায়ক) উপহার দিতে চায়। তিনি তা গ্রহণ না করে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তী সময়ে রেজাউল যাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে না পারে তার ব্যবস্থা করেন। এরপরই রেজাউল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়।
তাঁর বক্তব্য, দক্ষিণ করিমগঞ্জ ব্লকে সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন তহবিলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি দিল্লিতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তকারী দল দক্ষিণ করিমগঞ্জে এলে রেজাউল-সহ অন্যরা তদন্তে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। দক্ষিণ করিমগঞ্জের জনগণ রেজাউল বাহিনীকে প্রতিহত করেন সে সময়ই। পরবর্তী সময়ে রেজাউল সিদ্দেক-সহ তাঁর চার ভাই এবং অপর দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মারধরের ঘটনায় বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্য পায়নি পুলিশ। ফলে তাঁকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়। ২০১১ সালের এই মারধরের মামলায় ২০১৫ সালে করিমগঞ্জের এসিজেএমের আদালত বিধায়ক এবং তাঁর দুই ভাইকে নোটিশ দেয়। বিধায়ক জানান, দক্ষিণ করিমগঞ্জের বালিডিগর গ্রামের জনৈক আছার আলি এসিজেএমের আদালতের নোটিশ গ্রহণ করেছেন বলে আদালতে দেখানো হয়েছে। কিন্তু আছার আলি নামের কোনও লোক তাঁর আত্মীয় নন। এমনকী পরিচিতও নন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে বলে বিধায়ক সিদ্দেক আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ফলে আদালত বার বার সমন পাঠানো সত্ত্বেও তিনি আদালতে হাজির হননি বলে যে খবর চাউর করা হয়েছে সেটিও সত্য নয়। করিমগঞ্জ আদালতের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আলাদা মামলা দায়ের করবেন বলেও সিদ্দেক জানান।