প্রসাদ-স্মরণে পথে শিলচরের মানুষ

প্রসাদের জন্য আজও কাঁদল শিলচরের মানুষ। কেউ তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলাতে পারছিলেন না।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭ ০৪:১৫
Share:

শোকমিছিল: কালিকাপ্রসাদ স্মরণে বুধবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়

প্রসাদের জন্য আজও কাঁদল শিলচরের মানুষ। কেউ তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলাতে পারছিলেন না। অনেকে তাঁকে ভাল করে জানতেন, কিন্তু কথা হয়নি কখনও। তাঁদেরও বারবার চোখ মুছতে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ আবার একবারও দেখেননি তাঁকে, গান শুনেই ভক্ত হয়ে গিয়েছেন। কেঁদেছেন তাঁরাও। ২৪ ঘণ্টা পরও যেন ঘটনাটা বিশ্বাস হচ্ছিল না তাঁদের।

Advertisement

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের আহ্বানে আজ শোক মিছিল বের হয় শিলচর শহরে। নরসিংটোলা থেকে জেল রোড, অম্বিকাপট্টি, প্রেমতলা, সেন্ট্রাল রোড হয়ে সঙ্গীত বিদ্যালয়। সাংস্কৃতিক কর্মী, সাহিত্যিক, বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা তাতে সামিল ছিলেন। ছিল শিশুতীর্থ, নরসিং স্কুল-সহ বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। আর ছিলেন শিলচরের সাধারণ মানুষ। সারা পথে কারও মুখে কোনও শব্দ ছিল না। শুধু কালিকাপ্রসাদের প্রিয় গানগুলি গাইছিলেন কয়েকজন শিল্পী। ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা মধ্যে জলধি নদী/নির্বাসিতা নদীর বুকে বাংলায় গান বাঁধি’। এটি কালিকাপ্রসাদের নিজের লেখা গান। বহুবার বহু জায়গায় গেয়েছেন তিনি। আজ বেশির ভাগ সময় এই গানেই স্রষ্টাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। মাঝেমধ্যে শোনা গিয়েছে ‘বন্ধু তোর লাইগরা রে’, ‘আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছ তুমি হৃদয় জুড়ে’।

মিছিল শেষে শুরু হয় শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর্ব। প্রসাদের প্রতিকৃতি শোভিত বিশেষ যান সঙ্গীত বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়াতেই দলে দলে অনুরাগীরা এগিয়ে যান। নির্ধারিত সময়সূচি পেরিয়ে যায়। তারপরেও দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব। মালায়-ফুলে আর আক্ষরিক অর্থেই চোখের জলে সবাই শ্রদ্ধা জানান তাঁকে। প্রসাদের প্রিয় বন্ধু হৃষিকেশ চক্রবর্তী দাঁড়িয়েছিলেন একটা গান গাইবেন বলে। কিন্তু কান্না থামাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মাইক্রোফোন অন্যের হাতে তুলে দিয়ে সরে যান এক পাশে।

Advertisement

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনও সঙ্গীত বিদ্যালয়ে গিয়ে কালিকাপ্রসাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি তাঁদের বাড়ি গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো শোকবার্তা প্রসাদের পিসি আনন্দময়ী ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের কর্তা রাজীব কর জানিয়েছেন, আগামী সাতদিন তাঁরা শোক পালন করবেন। এই সময়ে কোনও আনন্দ-অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না তাঁরা। তাই ১২ মার্চ, দোলের দিন শিশু উদ্যানে ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’ নামে যে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল, তাও স্থগিত রাখা হয়েছে। আজ শিলচরের ব্যবসায়ীরাও কালিকাপ্রসাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজেদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেলা ১২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখেন। বিকেলে বিজেপি অফিসেও একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন