বেঙ্গালুরুর আদলে জঞ্জাল থেকে বিদ্যুৎ চায় শিলচর

জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের জন্য আগেও কয়েক বার উদ্যোগ নিয়েছিল শিলচর পুরসভা। বিস্তৃত প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) সংগ্রহ করেছিলেন বীথিকা দেব ও সুস্মিতা দেব। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। এ বারও ফের জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের পথে এগোতে চাইছে পুরসভা। গত কাল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ বিষয়ে নাগরিক সভার আয়োজন হয়।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের জন্য আগেও কয়েক বার উদ্যোগ নিয়েছিল শিলচর পুরসভা। বিস্তৃত প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) সংগ্রহ করেছিলেন বীথিকা দেব ও সুস্মিতা দেব। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।

Advertisement

এ বারও ফের জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের পথে এগোতে চাইছে পুরসভা। গত কাল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ বিষয়ে নাগরিক সভার আয়োজন হয়। সহযোগী হিসেবে ছিল নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর জানান, জঞ্জাল নিয়েই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ঝঞ্ঝাটে পড়তে হয়। টাকা প্রতিবন্ধক না হলে তিনি প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প শুরু করতে আগ্রহী। বিধায়ক দিলীপকুমার পালের আশ্বাস, এই ধরনের কাজে টাকার অভাব হতে পারে না। ডিপিআর তৈরির পর তিনিও সাহায্যে প্রস্তুত রয়েছেন।

জঞ্জাল নিয়েই পুরসভার যত যন্ত্রণা। সকাল-সকাল জঞ্জাল সাফাই হয় না, এটা সব সময়ের অভিযোগ। জঞ্জাল গাড়িতে তুলে নিয়ে ফেলাও কম ঝামেলার নয়। পুরসভার হিসেবে, শিলচর শহরে প্রতি দিন ৯০ টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। তার মধ্যে ৫০ টন জৈব-বর্জ্য। সেগুলি মেহেরপুরে ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুর্গন্ধে সেখানে টেকা দায়। কিন্তু জঞ্জাল ফেলার মত এত বড় নির্জন জায়গা পুরসভার হাতে আর কোথাও নেই। তাই প্রক্রিয়াকরণই যে একমাত্র উপায়, তা বারবার উল্লেখ করেছেন শিলচরের বর্তমান ও প্রাক্তন পুরপ্রধানরা। ভাবনায় ব্যতিক্রম বললে, বীথিকা দেব ও সুস্মিতা দেব বর্জ্য পদার্থ থেকে সার তৈরির কথা ভাবছিলেন। নীহারবাবুর লক্ষ্য, জৈব বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সঙ্গে উপজাত দ্রব্য হিসেবে সার তৈরি।

Advertisement

সার বা সার-বিদ্যুৎ— শিলচরে জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের কথাবার্তা শুরু হয় বীথিকা দেবের আমলেই। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তখনকার সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার কমলকল্যাণ দত্ত প্রথমে এ ব্যাপারে পুরসভার কাছে প্রস্তাব পেশ করেন। জরুরি ভিত্তিতে বিনা মাসুলে ডিপিআর তৈরি করে ‘ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ (ইন্ডিয়া)-এর শিলচর শাখা। সেই ডিপিআর-এর কী হল, তা তাঁরা জানতে পারেননি। সুস্মিতাদেবী মায়ের চেয়ারে বসলে জঞ্জাল নিয়ে সরব হয় নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। সুস্মিতা তাঁদের কাছ থেকে নতুন ডিপিআর চেয়ে নেন। তিনি তখন ঘোষণা করেছিলেন— ‘‘এটি আমার স্বপ্নের প্রকল্প।’’ বীথিকা দেবের আমলে তৈরি প্রকল্পটির কী হল? জবাবে সুস্মিতা বলেন, ‘‘সেটি ছোট প্রকল্প। বড় প্রকল্প নিয়ে ভাবছি।’’

কিন্তু ছোট কী বড়, কোনও প্রকল্প নিয়েই পুরসভার হেলদোল পরে আর টের পাওয়া যায়নি।

এ বারের পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর পুরপ্রধান হন নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। নাগরিক স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদ তাঁর সঙ্গেও জঞ্জাল নিয়ে কথা বলেন। তিনি প্রক্রিয়াকরণের প্রস্তাব শুনে আগ্রহ দেখান। পরিষদ কর্তাদেরই দায়িত্ব দেন, কী ধরনের প্রকল্প বেশি কাজের, তা খুঁজে দেখতে। নাগরিক স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত জানান, এর পরই তাঁরা দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু গিয়ে ওই ধরনের প্রকল্পগুলি ঘুরে দেখেন। এমনকী, পাশের রাজ্য ত্রিপুরায় গিয়ে আগরতলা পুরসভার জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সব দেখে বেঙ্গালুরুর পদ্ধতিকেই তাঁদের সেরা মনে হয়। পুরপ্রধানের অনুমোদন নিয়ে তাঁরা বেঙ্গালুরুতে যে সংস্থা জঞ্জাল নিষ্কাশন প্রকল্প দেখভাল করে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

কাল ওই সংস্থার দুই বিশেষজ্ঞ মাধুর্য দাস ও উৎপল ফুকন শিলচরে আসেন। তাঁদের বক্তব্য শুনতে পুরসভা ও সংগ্রাম পরিষদ যৌথ ভাবে নাগরিক সভার আয়োজন করেছিল। পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর, বিধায়ক দিলীপকুমার পাল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থও নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেন। দুই বিশেষজ্ঞ শোনান, তাঁদের প্রক্রিয়ার নাম ‘বায়ো-মিথেনাইজেশন’। জৈব বর্জ্য থেকে প্রথমে মিথেন গ্যাস তৈরি করা হয়। সেই গ্যাস থেকে বায়ো-ডিজেল এবং সবশেষে বায়ো-ডিজেলের মাধ্যমে জেনারেটর সেট ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উতপাদন হবে। ১ টন জৈব বর্জ্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তাঁদের এই হিসেবে শিলচরের জৈব বর্জ্যে ১০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ তৈরি করা যেতে পারে। তার ২০ শতাংশ দিয়ে গোটা শহরের রাস্তার আলো জ্বালানো সম্ভব। এখানেই শেষ নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর উপজাত দ্রব্য হিসেবে ৪ হাজার কিলোগ্রাম জৈব সারও তৈরি করা যাবে। তাঁদের আর্জি, এখন যে ভাবে সমস্ত বর্জ্য এক জায়গায় ফেলা হয়, তখন যেন তা না করা হয়। পচনশীল ও অপচনশীল ভিন্ন জায়গায় রাখতে হবে। ওই সভায় কেঁচো সার নিয়ে আলোচনা করেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা রঞ্জিৎ সরকার।

নীহারবাবু এই প্রকল্পের বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা শোনান। তিনি বেঙ্গালুরুর সংস্থাটির সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন। তবে পুরপ্রধানের আশঙ্কা, এমন প্রকল্পের জন্য অর্থ না প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। বিজেপি বিধায়ক দিলীপবাবু আগের পুরপ্রধানদের খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘আরও আগে এই প্রকল্প চালু করা হলে এখনও শহরবাসীকে ভুগতে হতো না।’’ টাকা জোগাড়ের বিষয়ে তিনি নীহারবাবুকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

নাগরিক স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম পরিষদের শশাঙ্কশেখর পাল বলেন, ‘‘এক বার প্রকল্পটি চালু হয়ে গেলে টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তখন প্রকল্পটি থেকেই পুরসভার নিয়মিত আয় হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন