Dindoshi Society

দুই যুবতীর জীবে প্রেমের মাশুল মার-শ্লীলতাহানি

কলে মিলে কিরণকে ঘিরে ফেলেন। শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ এবং বেধড়ক মার। সেই সময় কিরণ ফোন করে তাঁর বোন শিল্পাকে নীচে ডেকে আনেন। শিল্পা এলে তাঁর সঙ্গেও একই ব্যবহার করা হয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ১৮:০০
Share:

গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

আবাসনের ভিতরে নিয়ে এসে রাস্তার কুকুর দেখভাল করায় দুই যুবতীকে চূড়ান্ত হেনস্থা করা হল। মারধরের পাশাপাশি ওই দু’জনের শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করা হয়। মুম্বইয়ের দিনদোশির একটি আবাসনে মঙ্গলবার সকালে ওই ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে জনা কুড়ি আবাসিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিন জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

Advertisement

আরও খবর
ভারতকে ফুটবলের দেশ বললেন ফিফা প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো

ওই দুই যুবতীর নাম কিরণ এবং শিল্পা অহুজা। দু’জনেই পশুপ্রেমী। পুলিশ জানিয়েছে, অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অব ইন্ডিয়ার সদস্য ওই দুই বোন গত মার্চ থেকে সঞ্জয় গাঁধী নগরের এই আবাসনে থাকতে শুরু করেন। ওই এলাকার বেশির ভাগ রাস্তার কুকুরেরই দেখভাল করতেন তাঁরা। খাওয়ানোর পাশাপাশি তাদের নির্বীজকরণের ব্যবস্থাও করতেন। মাঝে মাঝে কোনও কোনও কুকুরকে দেখভালের জন্য আবাসন চত্বরে নিয়েও আসতেন। আর এ সব নিয়েই আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কিরণ, শিল্পার ঝামেলা লেগেই থাকত। সে কারণে দুই বোনকে হেনস্থাও করা হত বলে অভিযোগ। কিন্তু, গত মঙ্গলবার সব কিছু ছাপিয়ে যায়।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত কয়েক সপ্তাহ আগে। রাস্তা থেকে একটি গর্ভবতী কুকরকে তাদের আবাসনে নিয়ে এসে দেখভাল শুরু করেন কিরণ। কয়েক দিনের মধ্যে কুকরটি পাঁচটি ছানার জন্ম দেয়। এ নিয়ে প্রায় প্রতি দিনই দুই বোনকে কথা শুনতে হত। আবাসন থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। কিন্তু, তাতে কর্ণপাত করেননি কিরণ-শিল্পা। পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট কিরণ বলেন, ‘‘আমরা এলাকার বেশির ভাগ কুকুরেরই নির্বীজকরণ করেছি। এই কুকুরটি কোনও ভাবেই বাদ পড়ে গিয়েছিল। গর্ভবতী অবস্থায় ওকে আমরা আবাসন চত্বরে নিয়ে আসি। তা নিয়ে অনেকেই বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু, আমরা সে সবে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু সেই ঘটনা যে এত দূর গড়াবে তা-ও ভাবিনি।’’

আরও খবর
অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হেনস্থা, ফেসবুকে কী লিখলেন লোপা?

কী হয়েছিল ওই দিন?

দেওয়ালি উপলক্ষে গত ১৩ অক্টোবর মুম্বই থেকে রায়পুরে নিজেদের বাড়িতে গিয়েছিলেন কিরণ-শিল্পা। আবাসনে পাঁচ ছানা-সহ ওই কুকুরটির দায়িত্ব এক বন্ধুকে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রায়পুর পৌঁছতেই খবর পান, ওই বন্ধুকে হুমকি দিয়ে বাচ্চা সমেত মা কুকুরটিকে বাইরে নোংরা ফেলার জায়গায় ফেলে দেয় আবাসনের কয়েক জন। এর পর কিরণ-শিল্পা একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারাই কুকুরগুলিকে উদ্ধার করে রাস্তা থেকে। কিন্তু, তত ক্ষণে একটি বাচ্চা মারাও যায়।

এর পর গত ২৪ তারিখ সকালে মুম্বই ফেরেন দুই বোন। বাচ্চা সমেত মা কুকুরটিকে ফের তাঁরা আবাসনে নিয়ে আসেন। কিন্তু, সেটাকে ভাল চোখে দেখেননি আবাসনের অন্যরা। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ রুস্তম পটেল নামে এক আবাসিক তাঁদের সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দেন, আবাসন চত্বরে এ ভাবে বাইরের কুকুর রাখা চলবে না। কথা শোনা না হলে রাতারাতি কিরণদের আবাসন ছাড়া করার হুমকিও দেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন রুস্তমের ছেলেও।

আরও খবর
চোখে জল, নতুন জামায় আস্তানা বদল ছোট্ট বাবুর

ওই দিন সন্ধ্যায় কিরণ দেখেন, রুস্তম মা কুকুরটিকে একটি বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। বাধা দিতে গেলে তাঁর উপর চড়াও হন রুস্তম। ডেকে আনেন তাঁর স্ত্রী, পুত্র-সহ আবাসনের অন্য কয়েক জন আবাসিককে। তাঁরা সকলে মিলে কিরণকে ঘিরে ফেলেন। শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ এবং বেধড়ক মার। সেই সময় কিরণ ফোন করে তাঁর বোন শিল্পাকে নীচে ডেকে আনেন। শিল্পা এলে তাঁর সঙ্গেও একই ব্যবহার করা হয়। দু’জনকে মারধর করার পাশপাশি শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ। এর পর কোনও রকমে দুই বোন দৌড়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচায়।

এ নিয়ে ওই দিন রাতেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেম কিরণ-শিল্পা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে রুস্তম পটেল, তাঁর স্ত্রী রাবিয়া এবং ছেলে রিয়াজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ওই আবাসনের সেক্রেটারি বলরাজ যাদব যদিও গোটা ঘটনার দায় কিরণ-শিল্পাদের ঘাড়েই ঠেলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বহু বার বারণ করা সত্ত্বেও আমাদের কথায় কোনও গুরুত্ব ওঁরা। বাইরের কুকুর ধরে এনে আবাসন চত্বরেই তাদের খাওয়াতো। আবাসনের অন্য আবাসিকদের সমস্যা তৈরি করার কোনও অধিকার তো ওদের নেই। তবে, তাঁদের হুমকি দেওয়া হত বলে আমার কিছু জানা নেই। এ নিয়ে আমি ফের আবাসিকদের বৈঠক ডাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন